এখনই বনধ হবে না তো?
রবিবার সকাল থেকে প্রবল উৎকণ্ঠা ছিল গোটা পাহাড়ে। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা তো বটেই, পাহাড়ের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও সারা দিন চলেছে জল্পনা। দিনান্তে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ঘোষণার পরে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন সকলেই। অন্তত চটজলদি পাহাড় বিপর্যস্ত
হওয়ার আশঙ্কা নেই দেখে ম্যাল চৌরাস্তা ফিরে গিয়েছে এ ক’দিনের চেনা ভিড়ে। হাসি ফিরে এসেছে
পর্যটকদের মুখে।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনও। তিনি বলেছেন, “শান্তি থাকলে পাহাড়ের উন্নয়ন আরও দ্রুত গতিতে হবে। পাহাড়ের মানুষও শান্তি বজায় রেখে এই এলাকাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন। এটা ভাল ব্যাপার।” উল্লেখ্য, মোর্চার তরফে আলোচনার পথ খোলা রেখেও জনসভা, বনধের মতো আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে সেই আন্দোলন হবে মূলত জুলাইয়ে। তখন বর্ষা পুরোদস্তুর শুরু হয়ে যায়।
তা ছাড়া, জুনের শেষ সপ্তাহ অবধিই পাহাড়ের পর্যটন মরসুম ধরা হয়।
তবে সকালে কিন্তু উদ্বেগের অন্ত ছিল না। শুক্রবার শ্যামল সেন কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে শুনেই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন পর্যটকেরা। বাঁকুড়ার তন্ময় পাত্র মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে দার্জিলিঙে পৌঁছেছেন ৭ জুন। থাকার ইচ্ছে ১২ জুন পর্যন্ত। স্বাস্থ্য দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তন্ময়বাবু কর্মজীবনে দার্জিলিং বেড়াতে পারেননি। অবসরের পরে সেই সুযোগ হয়েছে। শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ জানার পরে পাহাড়ে বনধ হতে পারে, এই আশঙ্কায় শনিবার রাতে ভাল করে ঘুমোতে পারেননি তিনি। |
সাংবাদিক বৈঠকে মোর্চা নেতারা। রবিবার দার্জিলিঙে। ছবি: রবিন রাই |
রবিবারও ‘প্রতিবাদ মিছিল’-এ শৈলশহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে ভেবে ম্যাল চৌরাস্তায় ছাড়া অন্য কোথাও যাননি। সারা দিনে ঘুরে ফিরে ম্যাল থেকে হেঁটে কেভেন্টার্সে গিয়ে কফিতে চুমুক দেওয়ার ফাঁকে টেলিভেশনে চোখ রেখেছেন। সন্ধ্যায় তন্ময়বাবু বলেন, “কমিটির সুপারিশের পর থেকেই বাঁকুড়া থেকে ঘনঘন ফোন পাচ্ছি। বনধ, মিটিং-মিছিলে পাহাড় তেতে উঠবে ভেবে আত্মীয়-স্বজনরা চলে যেতে বলছেন। তবুও আমি আশায় ছিলাম। শেষ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই রয়েছে মনে হচ্ছে।”
দার্জিলিং চকবাজারের পরিবহণ ব্যবসায়ী সুদাম লামা থেকে কালিম্পঙের লাভার হোটেল মালিক ফিনু শেরপারাও উৎকণ্ঠায় ছিলেন। সুদামবাবু জানান, জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাহাড়ে পর্যটকদের জন্য শতাধিক ছোট-মাঝারি গাড়িকে আগাম টাকা দেওয়া রয়েছে। তিনি বলেন, “কোনও কারণে বুকিং বাতিল হলে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হত। মোর্চা নেতাদের ধন্যবাদ।” ফিনু শেরপার ছোট্ট হোটেলে ঘরের সংখ্যা ১২টি। প্রায় চার বছর পরে গোটা জুন তো বটেই, জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাঁর হোটেলের সব ঘর ‘বুকড্’। ফিনুবাবু বললেন, “আগে যা ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে সবে লাভের মুখ দেখছি। আশা করছি, জুনেই সমস্যা মিটে যাবে। তা হলে জুলাইয়ের ‘বুকিং’ বাতিল হবে না।” ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সান্যালও রবিবার দিনভর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের উদ্বেগ, কৌতুহল মেটাতে জেরবার ছিলেন। মোর্চা নেতাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে তাঁদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন সম্রাটবাবুরা। রাতে তিনি বলেন, “অনেক পর্যটকই উৎকণ্ঠায় ছিলেন। কারও কারও উৎকণ্ঠা এখনও রয়েছে। তবে আপাতত জুন মাসে কিছুটা হলেও স্বস্তি থাকল। আমাদের আশা জুলাই-র আগেই সমস্যা মিটবে।”
তবে পর্যটকদের আশ্বস্ত করেছেন মোর্চার অনেক নেতাই। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেছেন, “আমরা রিপোর্টের বিরোধিতায় আন্দোলন করব। কিন্তু পর্যটকদের কথাও মাথায় রয়েছে। জুলাইয়ের আন্দোলনের আগাম দিনক্ষণও তাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” |