লাভ না লোকসান, ধন্দে এমএম তরাই, সামসিং
শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ মতো গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জিটিএ) অন্তর্ভুক্ত হয়ে লাভ হল না লোকসান, তার অঙ্ক কষছেন তরাই ও ডুয়ার্সের ৫টি মৌজার বাসিন্দারা। এক দিকে, তাঁদের কেউ কেউ মনে করছেন, বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁদের এলাকা জিটিএ-তে গেলে প্রশাসনিক কাজকর্মে অসুবিধাই হবে। আবার অন্য পক্ষের মত, জিটিএ-তে গেলে তাঁদের এলাকার উন্নয়ন হবে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রকাশ্যে। অনেকে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও সংশয়ে রয়েছেন।
রবিবার নকশালবাড়ির এমএম তরাই থেকে জলপাইগুড়ির সামসিং, চিলৌনি সর্বত্র একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। এমএম তরাইয়ে দু’টি গোষ্ঠী প্রকাশ্যেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন। রবিবার সেখানে দুই গোষ্ঠীর বাদানুবাদ থেকে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, অবস্থা সামাল দিতে নকশালবাড়ি থানার পুলিশকর্মীদের ছুটে যেতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা গায়ত্রী গুরুঙ্গ, সঙ্গীতা রাইদের অভিযোগ, ওই এলাকা জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্ত হলে প্রশাসনিক সমস্যায় পড়তে হবে তাঁদের। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের বা ব্লক অফিসের কাজে এতদিন তাঁদের বাগডোগরা, নকশালবাড়িতে যেতে হত। ১৬ টাকা খরচ করেই তাঁদের বাগডোগরা যাতায়াত হয়ে যায়। নকশালবাড়ি যেতেও ২৫ টাকার উপরে খরচ হত না। জিটিএ-তে গেলে তাঁদের সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্মে মিরিকে যেতে হবে। সেখানে যাতায়াতে কমপক্ষে ১২০ টাকার খরচ পড়বে। এ ছাড়া এলাকায় কোনও গণ্ডগোল হলে নকশালবাড়ি থানার পুলিশ পনেরো থেকে কুড়ি মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যায়। আর মিরিক থানার পুলিশের এমএম তরাইয়ে পৌঁছতে দেড় ঘন্টারও বেশি সময় লাগবে বলে দাবি তাঁদের।
গায়ত্রীদেবী বলেন, “আমরা নদীতে পাথর ভেঙে সংসার চালাই। কষ্ট করে চলি। জিটিএ-তে গিয়ে বেশি খরচের মধ্যে পড়ে গেলে বিপদে পড়ব। আমাদের এলাকা এতটা প্রত্যন্ত যে, মোর্চার নেতারা দার্জিলিং থেকে কখনও দেখতে আসেননি আমরা কী ভাবে আছি। তাই জিটিএ-তে যেতে চাই না।” সঙ্গীতাদেবী বলেন, “আমরা গোর্খাল্যান্ড চেয়ে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে জিটিএ’তে গেলে ক্ষতির মুখে পড়ব। তাই বাগডোগরা গ্রাম পঞ্চায়েতে থেকেই উন্নতি চাই।”
উল্টো দিকে, স্থানীয় বাসিন্দা কিশোর দরজি, রাজু গুরুঙ্গরা পাল্টা দাবি করেন, আপার বাগডোগরা গ্রাম পঞ্চায়েতে থেকে এতদিন কোনও উন্নতি হয়নি এলাকার। রাস্তা খারাপ, অধিকাংশ দিন বিদ্যুৎ থাকে না, পানীয় জলের সঠিক বন্দোবস্ত নেই। তাঁরা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম আরও এলাকা দেওয়া হবে জিটিএ-তে। তা হয়নি। তবুও আমরা জিটিএ-তেই থাকব।”
পূর্ব কড়াইবাড়ি ছাট, গুলমাখাড়ির অনেক বাসিন্দারাও মনে করছেন তাঁদের এলাকা জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্ত হলে উন্নয়ন ত্বরান্বিতই হবে।
জিটিএ আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন, এমন অনেকেই এই দিন সামসিং ও চিলৌনিতে কমিটির রিপোর্ট নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। সামসিং চা বাগান পুরোটাই জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না কেবল সামসিং মৌজা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, সামসিং চা বাগানের ইয়ংটং ডিভিশন একটি আলাদা মৌজা। সেখানে চা বাগানের অনেক শ্রমিক থাকেন। সে ক্ষেত্রে ওই এলাকা জিটিএ-তে না থাকলে অসুবিধে হতে পারে।
সামসিং চা বাগানের ম্যানেজার অনিলকুমার শর্মা বলেন, “চা বাগানের কতটুকু জিটিএ-তে যাওয়ার সুপারিশ হয়েছে তা জানি না।” তবে এলাকার বাসিন্দা সুজন থাপা-সহ অনেকেই বলেন, “কালিম্পংয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে এ বার আমাদের অনেক সহজ হবে। প্রশাসনিক কাজে সুবিধে হবে।” চিলৌনির বাসিন্দারা বলছেন, তাঁদের নির্ভর করতে হয় জলপাইগুড়ির মালবাজার মহকুমার মেটেলি বাজারের উপরে। সে ক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ মত, চিলৌনি জিটিএ-তে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতে মেটেলি বাজারে যেতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা দেখতে হবে প্রশাসনকে। স্থানীয় বাসিন্দা জেমস খেড়িয়া বলেন, “আমরা মেটেলি বাজারে হাঁস, মুরগি বিক্রি করতে যাই। আমাদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সেদিকে সবাইকে দেখতে হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা ভিকি লামা, শ্রবন কুমাররা বলেন, “আমরা এলাকায় উন্নয়ন চাই। শান্তি বজায় রেখে সেটা করা গেলেই আমরা খুশি। জিটিএ-তে গিয়ে কতটা উন্নয়ন হবে তা অবশ্য বুঝতে পারছি না।” মেটেলি হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের চিলৌনি এলাকার তিন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের। মেটেলি ব্লক কংগ্রেসের উপদেষ্টা হরেন্দ্রনাথ দে বলেন, “চিলৌনি বরাবরই কংগ্রেসকে সমর্থন করে। যে কোনও নির্বাচনেই ওই এলাকা কংগ্রেস প্রার্থীদের বড় ব্যবধানে লিড দেয়। তাই ওই চা বাগান চলে গেলে স্থানীয় স্তরে আমাদের বড় ক্ষতি হতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.