রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ-র প্রার্থী চূড়ান্ত করার ঠিক আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বরফ গলানোর চেষ্টা শুরু করলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। আগামিকাল নর্থ ব্লকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে আলোচনায় বসছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
ঋণভারে জর্জরিত পশ্চিমবঙ্গকে ‘স্পেশ্যাল কেস’ হিসেবে চিহ্নিত করে তার জন্য একটি বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে মনমোহন সিংহের সরকার। তার মধ্যেই এগিয়ে আসছে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করার দিনও। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নামে ইউপিএ-র মধ্যে সর্বসম্মতি তৈরি করতে গেলে মমতার সমর্থন যে অত্যন্ত জরুরি, তা ভাল করেই জানে কংগ্রেস। তাই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে প্রবল চেষ্টা চলছে এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব রাজ্যের পাশে দাঁড়ানোর। আজ কলকাতা থেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই দিল্লি ফিরে এসেছেন প্রণববাবু। ফিরেই বৈঠক করেছেন অর্থ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সীমাবদ্ধতার মধ্যেই প্রয়োজনীয় ‘ফাঁক’ খুঁজে পশ্চিমবঙ্গকে কী ভাবে ‘প্যাকেজ’ দেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখছেন তিনি।
মমতা শিবির অবশ্য এখনই খুব বেশি আশাবাদী হতে নারাজ। ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা জানিয়েছেন, গত এক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের এই নিয়ে আলোচনা চলছে। মমতা বারবার দরবার করেছেন কেন্দ্রের কাছে। মমতার নির্দেশে অমিতবাবুও একাধিক বৈঠক করেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। ফলে এত দিনে যা হয়নি, আগামিকালের বৈঠকেই তা হয়ে যাবে, এমনটা মনে করছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে আগামিকাল প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের বেহাল আর্থিক দশা ফের তুলে ধরবেন অমিত মিত্র। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মুখে ওই বৈঠকে যদি শুধু মাত্র ‘জোরালো আশ্বাস’ সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়, তাতে ‘কাজ হবে না।’ রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, সুদ তিন বছরের জন্য মকুব করার মতো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না-করা পর্যন্ত সন্তুষ্ট হওয়ার কোনও কারণই নেই। রাষ্ট্রপতির জন্য নাম চূড়ান্ত করার আগে যদি আগামিকালের বৈঠককে নেহাতই ‘শো কেস’ বৈঠক হিসেবে দেখানো হয়, তাতে চিঁড়ে ভিজবে না।
এমনিতেই শুক্রবার কোর কমিটির বৈঠকের পরে যে ভাবে কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির নাম নিয়ে পদক্ষেপ করেছে, তাতে ক্ষুব্ধ মমতা। তবে তাঁর ক্ষোভ কমাতে সক্রিয় হয়েছেন কংগ্রেসের ম্যানেজাররা। ক’দিন আগেই প্রণববাবুর পুত্র তথা কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি পদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে সমর্থন করার জন্য যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তাতে তৃণমূলের একাংশ যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূলের ক্ষোভ প্রশমনে অভিজিৎবাবু জানান, তাঁর বক্তব্য যে ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, তিনি সে ভাবে বলতে চাননি। তাঁর কথায়, “আমার বাবা-ই বলেছেন, যে কেউ নিজের ইচ্ছায় রাষ্ট্রপতি হতে পারেন না। আমার বক্তব্য, সব শরিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে তবেই এ ব্যাপারে কোনও ঘোষণা করা যেতে পারে।”
এই পরিস্থিতির মধ্যেই বৈঠকে বসছেন প্রণব-অমিত। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় ব্যয়সচিব রাজ্যের ঋণকে দু’টি ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথমত, কেন্দ্র, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং স্বল্পসঞ্চয় খাতের ঋণ। দ্বিতীয়ত, বাজার থেকে রাজ্য যে ঋণ নিয়েছে। সমস্যা হল, খোলা বাজার থেকে নেওয়া ঋণ কেন্দ্র কী ভাবে কমাবে? সে ক্ষেত্রে যে পরিমাণ সুদ মকুব করার দাবি জানিয়েছেন মমতা, তার পুরোটা মানা সম্ভব নয়। কেন্দ্রের বক্তব্য, কোনও একটি রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কাজটি কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। যে কারণে কেরল এবং পঞ্জাবকেও আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত রাজ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কিছু করতে হলে ওই দু’টি রাজ্যের জন্যও করতে হবে। তাই ভারসাম্য রেখেই এগোতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে। তবে পশ্চিমবঙ্গকে ‘স্পেশ্যাল কেস’ হিসেবে গণ্য করে অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন খাতে অর্থসাহায্য এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। |