বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি দেখতে চেয়ে তাঁকে ‘সমর্থন’ করার জন্য জোট শরিক তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করলেন কংগ্রেসের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
রবিবার বিকেলের কর্মসূচি বাতিল করে প্রণববাবু দিল্লি রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন মানসবাবু। তার পরেই প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে মানসবাবু বলেন, “রাষ্ট্রপতি পদে বিভিন্ন নাম নিয়ে যে চর্চা হচ্ছে, তাতে সব চেয়ে এগিয়ে আমাদের অভিভাবক প্রণববাবুর নাম। কংগ্রেস বিধায়ক, সাংসদ ও কর্মীদের মধ্যে প্রণবাবুর নাম নিয়ে যে আবেগ তৈরি হয়েছে, তাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য তৃণমূল নেত্রীর কাছে আবেদন করছি। প্রণববাবুর যোগ্যতা সব দিক থেকেই অনেক বেশি।” কংগ্রেস কর্মী হিসেবে মানসবাবুর আর্জি, “স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বাঙালির এমন আবেগ তৈরি হয়নি। এই অবস্থাতেও রাজ্যের প্রধান শাসক দলের নীরবতা আমাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করেছে! কেন্দ্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক তৃণমূলও প্রকাশ্যে প্রণববাবুকে সমর্থন করুক, সেটাই চাই। শরিকদের সহমতের ভিত্তিতেই জোট সরকার চলে।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, মানসবাবুর এমন আবেদন স্বয়ং প্রণববাবুর ‘অজ্ঞাতসারে’ হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ইতিমধ্যে একই আবেদন জানালেও রাজ্যে জোট-রাজনীতির সমীকরণে মন্ত্রী মানসবাবুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সম্পর্ক তুলনায় ‘ভাল’। তাই এ বার তিনিই আসরে নামলেন। তবে সরাসরি চিঠি লিখে নয়, সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে এই বার্তা পৌঁছতে চাইছেন মানসবাবু।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি-পদে তাঁর পছন্দের যে প্রার্থীদের নাম বলেছেন, তার মধ্যে প্রণববাবু ছিলেন না। তার পরেই প্রণববাবুর হয়ে ‘বাতাবরণ’ তৈরি করতে আসরে নামে প্রদেশ কংগ্রেস। খোদ প্রণববাবু শনিবারই কলকাতায় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “কেউ রাষ্ট্রপতি হতে চাইলেই তো আর হতে পারেন না!” রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় প্রণববাবুর রাষ্ট্রপতি হওয়া আটকে যাক, তা চান না এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা। যে কারণে কয়েক দিন আগেই রাষ্ট্রপতি-পদে প্রণববাবুর জন্য রাজ্যের কংগ্রেস সাংসদদের তরফে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপবাবু এবং পরিষদীয় দলের তরফে মহম্মদ সোহরাব দলের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে অনুরোধ জানান। মমতার কাছে এ দিন তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য মানসবাবুর দরবার যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে। মানসবাবুর আশা, “যদিও রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হাইকম্যান্ড। তবে কংগ্রেসের আবেগকে মর্যাদা দিতে তৃণমূল এগিয়ে আসবে, এ ব্যাপারে আমি আশাবাদী।”
রাষ্ট্রপতি-পদের জন্য তৃণমূলের কাছে আবেদন জানালেও আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য ‘একলা চলা’র ইঙ্গিতই বজায় রেখেছেন প্রদীপবাবুরা। আরামবাগে এ দিন হুগলি জেলা পঞ্চায়েত রাজ সম্মেলনে প্রদীপবাবু বলেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে ‘জোটধর্ম’ তাঁরা পালন করছেন বলেই দাসপুর ও বাঁকুড়ায় উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু তৃণমূল ‘জোটধর্ম’ পালন করছে না। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কংগ্রেসের পার্টি অফিসে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল। এগুলো জোটের ‘অনুকূল’ নয় বলেই মত তাঁর। সম্মেলনের আহ্বায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানেরও বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটে একা লড়ব। কারণ, জোটের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থী দিতে দেওয়া হবে না আমাদের। নির্বাচনী ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি পালনের জন্যও একা লড়া দরকার।” মান্নানের অনুযোগ, “আমাদের কর্মীরা এখানে উপযুক্ত সম্মান পান না।”
আরামবাগের ওই সম্মেলনেই পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ বলেছেন, “হাইকম্যান্ডের নির্দেশ মতো, জোট নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসই সিদ্ধান্ত নেবে।” একই সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের তিনি ‘মনে’ করিয়ে দেন, “দিল্লিতে আমরা যেমন বড় দল, এ রাজ্যে তৃণমূলও তা-ই। এক সঙ্গে না এগোলে ফের সিপিএম মাথা চাড়া দেবে।” পুরভোটে সাম্প্রতিক সাফল্যের পরে তৃণমূলের তরফে ভবিষ্যতে ‘একাই চলা’র কথা বলেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তিনি এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার গৌরীপুরে একটি সভায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গে যাননি। বলেন, সামনে কোনও নির্বাচন না-থাকলেও যে ভাবে মানুষ সভায় আছেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে ‘পরিবর্তনে’র পরেও মানুষ তাঁদেরই সঙ্গে রয়েছেন।
|
বাজ পড়ে মৃত্যু দুই জেলায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দেগঙ্গা ও রানাঘাট |
বজ্রাঘাতে দুই জেলায় মৃত্যু হল দু’জনের। আহত ২ জন। শনিবার বিকেলে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার চাঁদপুরের বুড়িরহাট গ্রামে করাতকলে কাজ করার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান মহম্মদ সালাউদ্দিন (৪১)। তাঁর বাড়ি বাদুড়িয়ার গোখনা গ্রামে। জখম অবস্থায় তাঁকে আনা হয় বাদুড়িয়ার রুদ্রপুর হাসপাতালে। সেখানে মৃত্যু হয় সালাউদ্দিনের। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে। করাতকলে বাজ পড়ে তাঁর আরও দুই সঙ্গী জখম হয়েছেন। তাঁদের দেগঙ্গা ও বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য দিকে, বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে জ্যোৎস্না বিশ্বাস (৬০) নামে এক বৃদ্ধার। শনিবার সন্ধ্যায় নদিয়ার ধানতলার বেলেহাটি গ্রামের ঘটনা। দেহটি রানাঘাট হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। মাঠ থেকে কাজ করে ফেরার সময়ে বজ্রাঘাতে তিনি মারা যান। |