বিষয়: বিজ্ঞাপনের দুনিয়ার তারকারা
কুইজ-মাস্টারি বা রাজনীতির পেশায় আসার অনেক আগে, আমি একটা বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করতাম। সেখানে আট বছর কাটিয়েছি আমি। ওজিলভি’তে মাত্র তেইশ বছর বয়সে কাজ করতে ঢুকেছিলাম। ত্রিশ বছর বয়স হতে না হতেই এতটাই জ্ঞানবৃদ্ধ হলাম যে, চাকরি ছেড়ে, পাকাপাকি ভাবে কুইজ করাই শুরু করে দিলাম। নিজের কুইজ কোম্পানি’ও খুলে ফেললাম। বিজ্ঞাপন দুনিয়া যে কত কী শিখিয়েছে আমাকে! যেমন, কী ভাবে দিনে
ডেভিড ওজিলভি
ষোলো ঘণ্টা টানা কাজ করে যেতে হয়, সপ্তাহের সাত দিনই এতটুকু না হাঁফিয়ে, অভিযোগ না করে, কেবল নিজের সেরাটা বের করে আনতে হয়। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কারিকুরিগুলোও ওখানেই শিখেছি। জেনেছি কী ভাবে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও সংস্থাগুলোর জন্য যোগাযোগের কৌশল তৈরি করতে হয়। কোন মানুষটা কোন বিষয়ে কী রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেই নাড়িজ্ঞানটাও ওখানেই আয়ত্তে এসেছে। এই প্রাপ্তির তালিকা শেষ হবে না...
ওজিলভি’র দিনগুলোয় আরও দুটো কৌশল রপ্ত করেছি আমি। দুটো অস্ত্রই খুব কাজে দেয়। একটা হল, কাজ করিয়ে নেওয়ার কায়দা। আমি এমন মানুষদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিই, যাঁরা আমার থেকেও বেশি দক্ষ, প্রতিভাধর। হয়তো, তাঁরাই এই পেশার সেরা মস্তিষ্ক। অন্যটা হল, একটা ‘বিগ আইডিয়া’ পাওয়ার জন্য সারা ক্ষণ অক্লান্ত ভাবে লড়ে যাওয়া। তবে সব থেকে বেশি নাড়া দিয়েছিল কী বলো তো? খুব সম্মানিত বোধ করেছিলাম। আমার জীবনের অন্যতম সেরা ঘটনা সেটা। ঘটনাটা হল, ওই সময়ে আমার ডেভিড ওজিলভির সঙ্গে আলাপ করার সৌভাগ্য হয়। তিনি হলেন বিজ্ঞাপন দুনিয়ার সর্বকালের সেরা মানুষ। মানে ফুটবলে পেলে যা, ক্রিকেটে ব্র্যাডম্যান যেখানে, বিজ্ঞাপনের পৃথিবীতে, ‘অ্যাড গুরু’ ওজিলভি ঠিক সেই মর্যাদাই পান। আশির দশকের শেষ দিকে, তিনি কলকাতায় এসে আমাদের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন। বেকবাগানের কাছে আমাদের অফিসে এক সঙ্গে কাজ করেছি আমরা, এক পরিচিতের বাগানবাড়িতে পিকনিকে কত হুল্লোড় করেছি ওঁর সঙ্গে, হোটেলের কফি শপে এক টেবিলে বসেও থেকেছি! কিংবদন্তির পরশ লাগা সেই প্রতিটা মিনিট আজও আমার মননে-স্মৃতিতে ছবি হয়ে রয়েছে।
এ সব প্রায় কুড়ি বছর আগের কথা। ডেভিড (স্যর বা মিস্টার ওজিলভি সম্বোধন করলে তিনি ভারী আপত্তি জানাতেন) ১৯৯৯ সালে ফ্রান্সের টুফো’য় তাঁর প্রাসাদোপম বাড়িতেই পরলোকগমন করেছেন। আরও কত গুরুই রয়েছেন বিজ্ঞাপনের এই বিশাল জগতে। কিন্তু আমার কাছে গুরু এক জনই। আর, হ্যাঁ, আমার নামের প্রথম দুই অক্ষর যে ওঁর নামেরই মতো। তিনি ছিলেন আদি ও অকৃত্রিম ‘ডি.ও’, গুরু।
লিয়ো বার্নেট বিজ্ঞাপনের পরিবেশেই বড় হয়েছিলেন। তাঁর বাবা তাঁদের দোকানে বসেই বিপণনের নানা রকম নকশা বানাতেন। বিজ্ঞাপন জগতে এসে, ব্র্যান্ডদের ভাবমূর্তির ওপরই প্রায় এক ডজন চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।
যেমন টনি দ্য টাইগার, চার্লি দ্য টুনা, মরিস দ্য ক্যাট, দ্য মার্লবোরো ম্যান প্রভৃতি। বিজ্ঞাপন সম্পর্কে তাঁর এক বিখ্যাত উক্তি আছে। বলেছিলেন, ‘জিনিসটার দিকে এতটুকু নজর না কেড়েও সেটাকে বেচতে পারলেই, সেটা ভাল বিজ্ঞাপন।’
জানো কি
প্রথম জীবনে ডেভিড ওজিলভি প্যারিসে শেফ হতে চেয়েছিলেন। তার পর ১৯৩২ সালে, কুকিং স্টোভ কোম্পানির সেলসম্যানের চাকরি নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। তরুণ সেলসম্যানটি দুর্দান্ত সফল হন, এতটাই যে তাঁকে দিয়েই ব্র্যান্ডটি নিজেদের জিনিসটি ভাল ভাবে বিক্রি করার ‘ম্যানুয়াল’ লিখিয়ে নেয়। বিষয়টি বিজ্ঞাপন দুনিয়ার কর্তাব্যক্তিদের নজরে আসে। ওজিলভি’কে তাঁরা আরও উঁচু পদে চাকরির প্রস্তাব দেন। এর পর তো তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখানে নিজের কোম্পানি খোলেন এবং একের পর এক ঐতিহাসিক অ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেন বা প্রচার উদ্যোগ তৈরি করেন। এক বিলাসবহুল গাড়ির ব্র্যান্ডকে একটি বিখ্যাত ‘ট্যাগলাইন’ দিয়েছিলেন তিনি। সেটি হল, এ গাড়ি ঘণ্টায় ষাট কিলোমিটার বেগে ছুটবে, কিন্তু এই নতুন রোলস-রয়েসের সব থেকে জোর আওয়াজটা আসলে গাড়িটির বিদ্যুৎচালিত ঘড়ির।
উইলিয়াম (বিল) বার্নব্যাখ আবার স্নাতক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিজ্ঞাপনের কাজে যোগ দেন। প্রতিভায় ভর করে তিনি সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠেছিলেন। তার পর ১৯৪৯ সালে নিজের সংস্থাও শুরু করেন। ভোকসওয়াগনের বিজ্ঞাপনটির স্রষ্টা হিসাবে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। তখনকার গাড়ি শিল্পের অন্য বিজ্ঞাপনগুলির থেকে এই ‘থিঙ্ক স্মল’ প্রচার উদ্যোগটি ছিল অনেক আলাদা। ডেভিড ওজিলভিও সেই বিজ্ঞাপনটির খুব প্রশংসা করতেন।

• ভারতীয় বিজ্ঞাপন জগতে প্রচুর সংস্থার ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ মজবুত করেছেন অ্যালেক পদমসি। লিরিল গার্ল, চেরি ব্লসম শু পলিশের চার্লি চ্যাপলিন অ্যাড, সার্ফের সেই ললিতাজি ক্যাম্পেন, হামারা বাজাজ প্রভৃতি অনেক কিছুই তাঁরই সৃষ্টি।
অ্যালেক পদমসি
প্রসূন জোশী
এই কিংবদন্তিটি কোনও মানুষ নয়, একটা সৃষ্টি। সেই ১৯৬৬ সালে সিলভেস্টার ডা কুনহা আমুল বাটার-এর হয়ে মোক্ষম তাসটি খেলেছিলেন। তাঁর আমুল গার্ল সিরিজটি পলসন বাটার গার্লের প্রতিপক্ষ হিসাবে বাজারে এসেছিল। তিনি শিল্প নির্দেশক ইউস্ট্যাস ফার্নান্ডেজের সঙ্গে হাত মেলালেন। আর, ১৯৬৬ সালের অক্টোবরে, বম্বে শহরের বাসস্ট্যান্ড আর ল্যাম্প কিয়স্কগুলো একটা ঘোড়ায় চড়া পুতুল মেয়ের ছবিতে ছেয়ে গেল। নীচে শুধু লেখা ছিল ‘আটারলি বাটারলি ডিলিশাস আমুল’। সেই ছিল শুরু। তার পর থেকে আমুলের যত বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে সবই সমসাময়িক বিষয়ভিত্তিক। আর প্রত্যেকটাই ‘ফ্রাইডে টু ফ্রাইডে স্টার’-এর অভিধা পেয়েছিল।

• প্রথম জীবনে পীযূষ পান্ডে ছিলেন প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার (রঞ্জি ট্রফি পর্যন্ত খেলেছিলেন)। টি-টেস্টিংও করতেন। অ্যাডভার্টাইজিংয়ে প্রথম চাকরিতে ঢোকার সময় তাঁর বয়স ছিল সাতাশ। বছর দশেকের মধ্যেই, এই জগতে তিনি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছিলেন। নিজের এজেন্সি-র ন্যাশনাল ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরও হয়েছিলেন। সেই দশ বছরেই বানিয়েছিলেন, ‘চল মেরি লুনা’ আর ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’।

• পীযূষ পান্ডের তত্ত্বাবধানেই প্রসূন জোশির উত্থান। তিনি শুধু অ্যাড গুরুই নন, জনপ্রিয় গীতিকার ও সংলাপ রচয়িতাও। তিনি একটা দুর্দান্ত বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিলেন। ব্যস্ত ফুটপাতে একটা লোক শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। গনগনে সূর্যটাকে আড়াল করে রেখেছে কোক বোতলের সারি সারি ক্রেট। এই ‘ঠান্ডা মতলব কোকা কোলা’ বিজ্ঞাপনটা কান-এর ২০০৩ সালে, ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অব ক্রিয়েটিভিটি বিভাগে, গোল্ডেন লায়ন জিতেছিল।

• ১৯৭০ সালে, মরিস আর চার্লস, দুই ভাই মিলে ‘সাচি অ্যান্ড সাচি’ এজেন্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের সব থেকে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনটা তো ব্রিটেনের সরকারই ফেলে দিয়েছিল। তাঁরা বিখ্যাত প্রচার উদ্যোগ বানালেন, ‘লেবার ইজ্নট ওয়ার্কিং’। ব্যস, সেই জোয়ারেই ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জেমস কালাহানের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টিও হেরে গেল।

• ১৯৪৩ সালে সত্যজিৎ রায় ডিজে কেমার-এ যোগ দেন। তিনি ভারতের বিজ্ঞাপন জগতের নক্ষত্র নন ঠিকই। কিন্তু বিজ্ঞাপনের কাজ করার ওই সময়টাই তাঁকে সিনেমা পরিচালনার জন্য প্রস্তুত করেছিল। অ্যাডভার্টাইজিং-এ তিনি কিছু ভারতীয় প্রতীক ও হস্তলিপি চালু করেন। তাঁর নকশা করা দু’টো ‘ফন্ট’, ‘রে রোমান’ ও ‘রে বিজার’ আন্তর্জাতিক বাজারে দারুণ সমাদর পেয়েছিল।
বলো তো
কোন ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রথম বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়?
২০০৭ ও ’০৯-এ মুক্তি পাওয়া অমিতাভ বচ্চন অভিনীত দু’টি ছবি পরিচালনা করেন কোন বিজ্ঞাপননির্মাতা?
১৯৯৫ সালে, লাক্ষাদ্বীপে, কোন ভারতীয় অ্যাড ফিল্ম পরিচালক স্কুবা ডাইভিং স্কুল খুলেছেন?
বিজ্ঞাপন জগতের কোন বিখ্যাত গল্প ‘দ্য উইজার্ড অব ওজ’-এর অনুপ্রেরণায় তাঁর নতুন এজেন্সির নাম রেখেছিলেন ‘রেড ব্রিক রোড’?
১৯১২ সালে নিউ ইয়র্কে, স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে, কে তাঁর এজেন্সি খোলেন?
উত্তর
১) হিকি’স বেঙ্গল গেজেট বা দ্য ক্যালকাটা জেনারেল অ্যাডভাইসর
২) আর বালাকৃষ্ণণ, তাঁকে আমরা আর বালকি নামেই বেশি চিনি
৩) প্রহ্লাদ কক্কর ৪) স্যর ফ্রাঙ্ক লোয়ি ৫) হ্যারি ম্যাকক্যান


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.