|
|
|
|
|
|
|
অন্যকে তোমায় বোঝার সুযোগ দাও |
মানুষে মানুষে মতান্তর থাকাটাই তো স্বাভাবিক। কথাবার্তার মধ্যে সেই মতপার্থক্য বেরিয়ে আসতেই পারে।
কিন্তু নিজের মত প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যকে আঘাত করাটা কোনও কাজের কথা নয়।
তাতে তোমারই ক্ষতি। পরামর্শ দিচ্ছেন মন-চিকিৎসক শ্রীমন্তী চৌধুরি |
|
আমি ২০১১ সালে বি টেক পাশ করে সম্প্রতি ইনফোসিস টেকনলজিস লিমিটেড-এ চাকরি পেয়েছি। কাজের ক্ষেত্রে আমার কোনও অসুবিধে নেই। যত সমস্যা বাড়ি নিয়ে। বাড়ির লোকে অকারণে হামেশাই আমাকে অপমান করে, কথায় কথায় ছোট করে। ফলে অনেক সময়েই খুব ‘লো’ (low) মনে হয়। তখন নিজেকে কোনওভাবেই উদ্বুদ্ধ করতে পারি না। আমি এখনকার ছেলে, আমার এক রকমের চিন্তাধারা। আর বাড়ির লোকেদের চিন্তাধারা অনেকটাই উল্টো। এই ‘জেনারেশন গ্যাপ’-এর ফলেই হয়তো এক এক সময় বাড়িতে থাকতে অসহ্য লাগে। ওদের মতামতের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি না। যদিও আমি জানি যে আমাকে মানুষ করতে এক সময় বাবা-মা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আজ তাঁদের জন্যেই আমি এত দূর উঠতে পেরেছি। কিন্তু তবুও বাড়িতে যেন সব সময়েই একটা অশান্তির পরিবেশ। আমি কী করব যাতে বাড়ির লোকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আবার ঠিকঠাক হয়ে যায়? দয়া করে পরামর্শ দিন।
অভিষেক মুখোপাধ্যায়। |
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
|
তোমাকে বলছি |
অভিষেক, শুরুতেই জানাই, তোমার চিঠিটা এতই সংক্ষিপ্ত যে তোমাকে কিছু সাহায্য করা বা তোমার অবস্থার প্রতি সুবিচার করা একটু কঠিন। তাও খানিকটা চেষ্টা করছি।
চিঠি পড়ে মনে হল তুমি বেশ কৃতী মানুষ। কিন্তু বাড়ির লোক কেন যে তোমাকে অযথা অপমান ও সমালোচনা করেন তার কারণ নিরপেক্ষ ভাবে খুঁজে দেখেছ কি কখনও? ই-মেল-এর বিষয় বা ‘সাবজেক্ট’-এ লিখেছ, এটা সাম্প্রতিক সমস্যা (recent problem)। আবার চিঠির বয়ানে লিখেছ এই সমস্যা অনেক দিনের (always)। কোনটা ঠিক, বুঝতে পারছি না। সময়ের নিরিখে যদি এটা ইদানীং ঘটে থাকে তা হলে তোমাকে নিজেকে কারণটা খুঁজে বার করতে হবে। কারণটা কি সর্বৈব বাড়ির লোকের দোষ, না তোমারও এই সমস্যায় কোনও অংশ আছে, নাকি দু’পক্ষেরই কম বেশি সমস্যা আছে, তা ভেবে দেখা জরুরি। আসলে খানিকটা নিরপেক্ষ ভাবে কারণে পৌঁছতে না পারলে সমস্যার সমাধান হওয়াটা বেশ মুশকিল।
তোমার মনের অবস্থার হদিশ করো। লিখেছ তুমি খুব ‘লো’ অনুভব করো। এখানে আমাদের সচেতন থাকা দরকার এই ‘লো’ শব্দটি সম্পর্কে। তুমি কি দুঃখিত ও বিষণ্ণ বোধ করো? না কি আত্মপ্রত্যয়ের অভাব অনুভব করো? দুটোর কোনওটাই মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে সুবিধেজনক নয়। সে ক্ষেত্রে তোমার বিষণ্ণতা-রোগ বা অন্য কোনও মানসিক রোগ আছে কিনা, মন-চিকিৎসক দেখিয়ে জেনে নাও।
বাড়িতে শান্তি নেই জানিয়েছ। মনে রেখো, শান্তি রক্ষার দায় ও দায়িত্ব কিন্তু উভয়পক্ষেরই, বিশেষত যেহেতু তুমি এখন সাবালক। তোমার চিঠিতে এটা স্পষ্ট নয়, ‘জেনারেশন গ্যাপ’ বলতে তোমার কী কী ক্ষেত্রে অসুবিধে হচ্ছে। তোমার মানিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছে কী ভাবে সেটাও স্পষ্ট নয়। তাই সোজাসুজি কিছু সাহায্য করা কঠিন। তাই সাধারণ ভাবে কিছু কথা আলোচনা করছি। তুমি বুদ্ধিমান। এবং মা-বাবার অবদান সম্পর্কে তুমি অবগত। তাই পরামর্শগুলো বুঝে নিতে অসুবিধে হবে না ধরে নিচ্ছি।
দ্যাখো, বিভিন্ন মানুষের মধ্যে মতান্তর থাকবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। মতামত জানানোর কয়েকটি ভাল পদ্ধতি আছে। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ‘অ্যাসার্টিভ কমিউনিকেশন’। মতামত জানানোর উপায় বিভিন্ন রকমের হতে পারে। মুখের ওপর উগ্রভাবে মতামত জানানো (অ্যাগ্রেসিভ কমিউনিকেশন) কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্যকে বিফলে দিতে পারে। আবার যদি অন্যের মত তোমার মতের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়, কারণ তুমি প্যাসিভ থাকতে চেষ্টা করো, তা হলে সেটাও খুব সুবিধেজনক কি? আর কেউ যদি মুখে এক রকম কথা বলে, আর অন্য রকম কথা ভাবে (প্যাসিভ অ্যাগ্রেসিভ), তা হলে ধরে নিতে হয় সে নিজের মতামত জানাতে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ নয়।
ভদ্র ভাবে নিজের মত প্রকাশ করা সর্বদাই স্বাগত। এতে তোমার আত্মপ্রত্যয় বাড়বে। নিজের অনুভূতিগুলোকে চিনতে ও জানতে শিখবে, মতামত প্রকাশ আরও সাবলীল হবে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যদের সঙ্গে সৎ ও সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। অন্য কারও অনুভূতিকে আঘাত না করে কী ভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে হয়, সেটা কিন্তু একটা জরুরি শিক্ষা।
এ বার কতকগুলো পরামর্শ:
১) তোমার নিজের বক্তব্য প্রকাশের ধরনটি কী রকম, সেটা ভাবো।
২) অন্যকে ভুল প্রমাণিত করার বদলে, তুমি কী ভাবে নিজের মতটি প্রকাশ করলে অপর পক্ষও বেশি ধৈর্য দিয়ে তোমার কথা শুনবে, সেটা বোঝার চেষ্টা করো।
৩) কোনও ক্ষেত্রে ‘না’ বলার প্রয়োজন হলে স্পষ্ট ভাবে সে কথা বলো, কিন্তু উদ্ধত ভাবে নয়। কারণ ব্যাখ্যা করার সুযোগ থাকলে সেটা কোরো, তাতে অন্যেরও তোমাকে বুঝতে সুবিধে হবে।
৪) আগে থেকেই বার বার ভেবে ঠিক করে নাও, তুমি কী বলতে চাও। এবং কী ভাবে সেটা বলা ভাল।
৫) মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে শুধু মুখের কথাই নয়, শরীরের ভাষাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সোজাসুজি দাঁড়িয়ে, চোখ না রাঙিয়ে, স্পষ্ট ভাবে তাকিয়ে কথা বলো। দরকার হলে একা বা বন্ধুদের সঙ্গে অভ্যেস করে নাও, কী ভাবে বলবে।
৬) নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখো। চিৎকার করা, গালি দেওয়া, কেঁদে ফেলা ইত্যাদি হলে সুর কেটে যায়। সে ক্ষেত্রে নিজেকে সংযত করার সময় নাও আগেই। ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নাও। গলার স্বর যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখো।
যথাযথ ভাবে মতামত প্রকাশের অভ্যেস তৈরি করতে শেখাটা জরুরি। তোমার নিজের মতের ঠিকঠাক মূল্যায়ন যাতে অন্যরা করতে পারে, সে জন্যই এই অভ্যেস তৈরি করো। |
|
বাবা-মাকে বলছি |
জীবনে অন্যতম কঠিন কাজ বোধ হয় সন্তান পালন। কিছু কিছু ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অনেক মা-বাবাই সম্ভবত বুঝতে পারেন না যে কী ভাবে তাঁরা সন্তানের মনখারাপের কারণ হয়ে উঠছেন।
আপনাদের সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সে দায়িত্বশীলও বটে। সে ক্ষেত্রে রুক্ষ ভাবে না বলে আলাপ-আলোচনার বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন। কোন্ বিষয়ে কথা বলবেন, আর কোন্ বিষয়ে বলবেন না, সেটা ভাল করে ভাবুন। ক্ষতিকারক কিছু না করলে বিষয়টি ওর নিজের বিবেচনার ওপরই ছেড়ে দিন। এতে শুধু সুসম্পর্কই বজায় থাকে না, ওর বিবেচনাবোধের চর্চা ও প্রয়োগের সুযোগ ঘটে। এই চর্চার মাধ্যমেই ওর বিবেচনা আরও পরিশীলিত হয়ে ওঠা কিংবা আত্মপ্রত্যয় বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|