গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে গাছের ডালে ঝুলছিল এক কিশোরীর দেহ। ‘প্রেমে’ ব্যর্থ হয়ে গ্রামেরই এক যুবক মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে বাদুড়িয়ার কুলবেড়িয়া গ্রামে। পুলিশ জানায়, আমেনা খাতুন (১৬) নামে ওই কিশোরী এ বার পিঙ্গলেশ্বর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেছিল। তাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে জুম্মান তরফদার নামে এক যুবককে খুঁজছে পুলিশ। একাধিক লোক এই ঘটনায় যুক্ত থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তে তাদের অনুমান। বাদুড়িয়ার ওসি সামসের আলি বলেন, “অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা, তা ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলেই বোঝা যাবে।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদুড়িয়ার যদুরআটি উত্তর পঞ্চায়েতের কুলবেড়িয়া গ্রামের পূবের পাড়ায় বাড়ি আবদুল মালেক মণ্ডলের। তাঁর ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে ছোট আমেনা। গরিব পরিবারের মেয়ে মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করায় খুশি হয়েছিলেন গ্রামের অনেকেই। কলেজে ভর্তি হওয়ার ফর্মও তুলেছিল মেয়েটি। কয়েক বছর আগে গ্রামেরই যুবক জুম্মান মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন। পেশায় দরজি ওই যুবকের সঙ্গে আমেনার ‘সম্পর্ক’ও তৈরি হয়েছিল। এই নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় দুই পরিবারে। বিয়েতে মত ছিল না তাঁদের। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জুম্মান। কিন্তু তাতে রাজি ছিল না আমেনা। গ্রাম্য সালিশিতে জুম্মানকে মেয়েটির সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করা হয়। সেই থেকে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল না বলে দাবি করেছেন আমেনার বাবা-মা।
শনিবার একটি বিয়ের সম্বন্ধ আসে আমেনার। পাত্রপক্ষ দেখতে আসে মেয়েটিকে। তাঁরা চলে যাওয়ার পরে দুপুর ১টা নাগাদ বারান্দায় বাবাকে খেতে দিয়ে নিজের জন্য ভাত বেড়েছিল আমেনা। সে সময়ে তার মোবাইলে একটি ফোন আসে। ‘একটু আসছি’ বলে বাড়ি থেকে বেরোয় ওই কিশোরী। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললেও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সকলে।
খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বিকেল ৪টে নাগাদ গ্রামের লোক দেখেন, বাড়ির কাছেই একটি পাট খেতের পাশে নিমগাছের ডালে ঝুলছে ওই কিশোরীর দেহ। গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো। জামা-কাপড় বিস্রস্ত। খবর দেওয়া হয় থানায়। তত ক্ষণে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন জুম্মান ও তাঁর পরিবারের সকলে। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়।
আমেনার মা সাহিদা বিবি বলেন, “দুই পরিবার থেকেই বিয়েতে মত ছিল না। মেয়েকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।” আমেনার পারিবারিক সূত্রের খবর, জুম্মানের ‘স্বভাব-চরিত্র’ নিয়ে আপত্তি থাকতেই বিয়েতে মত দেননি তাঁরা। সে জন্য নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হত মেয়েটিকে। আমেনার উপরে ‘প্রতিশোধ’ নিতেই তাকে এ ভাবে ধর্ষণ করে খুন করেছে জুম্মান। পুলিশের কাছে তাঁর নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। |