|
|
|
|
মদরিচদের ফুটবলে এখনও উঁকি মারছেন সুকেররা |
রূপায়ণ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
ক্রোয়েশিয়া ৩ (মান্দজুকিচ-২, জেলাভিচ)
আয়ার্ল্যান্ড ১
(লেজার) |
দুটো দল এমনই যে, নাম শুনলেই তাড়া করে অতীত। আয়ার্ল্যান্ডের নাম উঠলেই জ্যাক চার্লটন আর লং বল ট্যাকটিক্সের স্মৃতি ভেসে আসে। ক্রোয়েশিয়ার কথা তুললেই মনে পড়ে বোবান, সুকেরদের পাসিং ফুটবল।
কী আশ্চর্য, পঁচানব্বইয়ে জ্যাক চার্লটন আয়ার্ল্যান্ড থেকে সরে যাওয়ার পরের বছরের ইউরোতেই সুকেরদের ক্রোয়েশিয়ার উত্থান!
এতদিন পরেও দুটো দলের ম্যাচে দেখা গেল, পুরনো দর্শন উঁকি মারছে!
এমনিতে চার্লটনের উত্তরসূরি জিওভানি ত্রাপাত্তোনির তত্ত্ব হল, ‘সেফটি ফার্স্ট’। প্যারালিসিস, হার্ট অ্যাটাক কিছুই বিদেশ ঘুরে কোচিং করানোর ইচ্ছে দমাতে পারে না। কিন্তু ইতালির লোক বলেই বোধ হয় বলেন, “আপনি যদি বিনোদন চান, তা হলে মিলানের লা স্কালাতে যান। অপেরা হাউসে।” লং বল খেলান না ট্র্যাপ। কিন্তু প্রাথমিক লক্ষ্য জ্যাকের মতোই-- না হারা। শেষ চোদ্দো ম্যাচে অপরাজিত আইরিশরা রবিবার গোল হজম করলেন তিন মিনিটে। না দমে ৪-৪-২ ছকের আদর্শ ব্যবহার করে অকুতোভয় উঠলেন ক্রোয়েশিয়া বক্সে। এই ইউরোয় ফ্রি কিক গোল দেখাই যাচ্ছে না। আইরিশরা গোলটা শোধ করলেন ফ্রি কিক থেকে চমৎকার হেডে। নিখুঁত ব্রিটিশ স্টাইলের সেট পিস।
ক্রোটদের অত্যাশ্চর্য প্রত্যাবর্তন এর পরে। জার্সিতে তাদের দাবা বোর্ডের খোপকাটা ঘর। দাবার মতোই কল্পনাশক্তি প্রয়োগ হল ফুটবলে। নেতৃত্বে টটেনহ্যামের লুকা মদরিচ। আদতে মদরিচ ছিলেন সেকেন্ড স্ট্রাইকার। বর্তমান কোচ বিলিচ তাঁকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে আনেন, একটু নীচের দিকে। টটেনহ্যামের কোচ রেডন্যাপ তাঁকে একটু ওপরে ব্যবহার করেন। এই ম্যাচে দুটো ভূমিকা পালন করে ত্রাপাতোনির ‘ট্র্যাপ’ থেকে বের করে আনলেন দলকে। কিছুটা বক্স টু বক্স, কিছুটা ডিপ লাইং মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেন। তাঁকে কেন্দ্র করেই ক্রোয়েশিয়ার খেলাটা তৈরি হল। মিনিট খানেক অন্তরই টিভি ধারাভাষ্যকারদের মুখে মদরিচের নাম শোনা যাচ্ছিল।
ক্রোট কোচ বিলিচ নিজে গিটার বাজান। তাঁর দলটায় লিড সিঙ্গারের কাজটা করলেন মদরিচ। প্রথম অর্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিটেও আইরিশ কিপারকে বোকা বানিয়ে মান্দজুকিচের গোল। অতঃপর ক্রোয়েশিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া। নিটোল পাসিং বুনুন করে উঠে আসা অ্যাটাকিং থার্ডে। যে স্টাইলে স্পেন, নেদারল্যান্ডস খেলে। যে স্টাইলে রাশিয়া চমকে দিয়েছে প্রথম দিন।
ত্রাপাতোনিকে ইতালির সেরা কোচ ধরেন অনেকে। জুভেন্তাস, এ সি মিলান, ইন্টার মিলান, ফিওরেন্তিনাকোথায় কোচিং করাননি? বিশ্বের একমাত্র কোচ যিনি ইউরোপের সেরা তিনটি ট্রফি জিতেছেন। কিন্তু হাতে মশলা না থাকলে অভিজ্ঞতম কোচেরও যে চমৎকারিত্ব দেখানো সম্ভব নয়, তা বুঝিয়ে গেল ম্যাচটা। মনে করাল আমাদের নিজস্ব পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের চচ্চড়ি-বিরিয়ানির গল্প।
আর কী বোঝাল? আর কী মনে করাল?
আর বোঝাল, বোবান-সুকের-প্রসিনেস্কি-বকসিচদের দেশের ফুটবলটা মরেনি। ওঁরা সরে গেছেন বহুদিন। কিন্তু মদরিচ-মান্দজুকিচ-জেলাভিচরা আছেন। প্রবল ভাবেই আছেন। |
|
|
|
|
|