|
|
|
|
|
ফাইনাল পাস |
সেরা ম্যাচে প্রাপ্তি নতুন ছক
আর্মান্দো কোলাসো |
|
স্পেন ১ (ফাব্রেগাস)
ইতালি ১ (দি নাতালে) |
ফুটবল খেলাটা যে বিশ্বে জনপ্রিয়তম, তার প্রধান কারণ হল গোল। ওই যে তিন কাঠির মধ্যে বল ঢোকানো, সেটাই কিন্তু খেলাটার প্রাণভোমরা। এ বারের ইউরোয় একমাত্র রাশিয়া-গ্রিস ম্যাচটা বাদ দিলে এখন পর্যন্ত সে ভাবে গোলের ছড়াছড়ি নেই। স্পেন বনাম ইতালির মতো হেভিওয়েট দুটো টিমের ম্যাচে খুব বেশি গোল হবে আশা করিনি। ধরেই নিয়েছিলাম, এত বড় টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে সতর্কতাই হবে দুটো টিমের প্রাথমিক লক্ষ্য। সে দিক দিয়ে দেখলে রবিবারের সন্ধেয় প্রাপ্তি চমৎকার ফুটবল এবং দুটো মনে রাখার মতো গোল। এ ধরনের ম্যাচ দেখার জন্য বহু বহু মাইল হেঁটে যেতে পারি।
২০০৮-এর ইউরো চ্যাম্পিয়ন, ২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, তার পর এ বারে ইউরো। টানা দু’বার ইউরো, মাঝে একটা বিশ্বকাপ এর আগে কোনও টিমের নেই। সেই সুযোগটা এ বার স্পেনের সামনে আছে। আমি দেখতে আগ্রহী ছিলাম, বার্সেলোনা মডেলের তিকি-তাকা ফুটবল গত বিশ্বকাপের মতো এ বারের ইউরোতেও প্রাসঙ্গিক কি না। সহজ উত্তর হল প্রাসঙ্গিক, দু’বছর আগে যেমন লেগেছিল, এ বারও বারবার চোখ টানল স্পেনের ফুটবল। কিন্তু যে কোনও সুন্দর জিনিসই সুন্দর থাকে না, যদি না আসল উদ্দেশ্য মানে গোল না আসে। প্রথমার্ধে অসংখ্য পাস খেলল স্পেন, এমনকী বক্সের মধ্যেও। কিন্তু গোল আসছিল না। অদ্ভুত একটা ফর্মেশনে খেলছিল স্পেন, যেটাকে ৪-৬-০ ফর্মেশন বলা যেতে পারে। ডিফেন্সে চার জন, তারপর মিডফিল্ডে ছ’জন। মাঝে মাঝে সামনে উঠে আসার ভূমিকা ফ্যাব্রেগাসের। হাতে একঝাঁক বিশ্বসেরা মিডফিল্ডার থাকায় এই ঝুঁকিটা দেল বস্কি নিতে পেরেছিলেন। এই ফর্মেশন ম্যাচ জেতানোর ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী, তা হয়তো এ বারের ইউরো পরিষ্কার করে দেবে।
স্পেনের গোলটা এল অনেকটা ধাক্কা থেকে। হঠাৎ পিছিয়ে যাওয়ার ধাক্কা। দ্বিতীয়ার্ধে ইতালির বালোতেলি যে গোলটা মিস করেছিল, এক কথায় ক্ষমাহীন। তার পরেই ওকে তুলে নিয়ে দি নাতালেকে নামিয়েছিলেন ইতালি কোচ প্রানদেলি। মোক্ষম চাল। পির্লোর পাস থেকে রামোস আর পিকের মতো দুই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে চিলের মতো ক্ষিপ্রতায় গোলটা তুলে নিল নাতালে। পিকে উঠে যাওয়ায় একটা ফাঁক তৈরি হয়েছিল, রামোস সেটা কভার করতে পারেনি।
ওই যে ০-১ পিছিয়ে পড়া, সেটা সম্ভবত স্পেনের সেরাটা বের করে আনার জন্য দরকার ছিল। গোলের পরেই স্পেনীয় ফুটবলের ঝলক। ক্রমাগত চাপ তৈরি এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের গোল তুলে নেওয়া। বক্সের মধ্যে দাভিদ সিলভা যে রিভার্স পাসটা ফ্যাব্রেগাসের জন্য বাড়িয়েছিল, তাতে একেবারে গোলের ঠিকানা লেখা। এ জন্যই স্পেন বিশ্বসেরা। যদিও অতীতে আর্সেনালের হয়ে ফরোয়ার্ডে মাঝে মাঝে খেলেছে, এ দিন অদৃশ্য স্ট্রাইকারের ভূমিকায় ফাব্রেগাসকে রাখা হয়েছিল এই ম্যাচটায়। যে স্ট্রাইকার নয়, কিন্তু প্রয়োজনে স্ট্রাইকার। ঠিক সময়ে কোচের মুখ রেখে নিজের কাজটা করে দিয়ে যায় ফাব্রেগাস। তবু বলব, দাভিদ ভিয়ার না থাকাটা এ বারে ইউরোয় স্পেনকে ভোগাতে পারে। তোরেসকে দ্বিতীয়ার্ধে ১৭ মিনিটের জন্য নামিয়েছিলেন দেল বস্কি। নিয়মিত স্ট্রাইকার নামায় আরও ভয়ঙ্কর দেখাল স্পেনকে। কিন্তু একবার বুঁফোকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ টোরেস। আর একবার ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে দুই ডিফেন্ডারকে ঘাড়ে রেখে বক্সের মাথা থেকে মারা শটটা একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। গত দেড় বছর ধরেই তো ফর্মে নেই তোরেস। স্পেনকে জিতিয়ে দেওয়ার চমৎকার সুযোগ কিন্তু ও মাঠে রেখে গেল। আবার বলব, স্পেনের ডিফেন্সে পুয়োল না থাকাটাও সমস্যা। যথেষ্ট সুযোগ কিন্তু ইতালি পেয়েছিল।
উপভোগ্য ম্যাচটায় যে কেউ জিতল না, এটাই সম্ভবত যুক্তিসঙ্গত ফলাফল। বেশ পিছিয়ে আন্ডারডগ হিসেবে ম্যাচটায় নেমেছিল ইতালি। সিজার প্রানদেলির টিমের কথা বলতে হলে প্রথমেই বলতে হয়, টানা তিনটে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হেরে এই ম্যাচটা খেলছিল। যার মধ্যে শেষটায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিন গোল। তার উপর দেশে ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ে কেলেঙ্কারি। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন টিমের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটায় নামা সব সময় চাপের। সে দিক দিয়ে দেখলে বরাবরের ট্র্যাডিশন মেনে দুর্দান্ত সংঘবদ্ধ ফুটবল উপহার দিল ইতালি। কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলে এতটা ভাল খেলবে আশা করিনি। আমার কাছে আন্দ্রে পির্লোই ম্যাচের সেরা। গোলটার পিছনেও কিন্তু ওর ভূমিকা।
|
আশা দেখছেন না ইউক্রেন কোচ
নিজস্ব প্রতিবদেন |
নিজের দেশে ইউরো, আর তাতে যেন শিরে সংক্রান্তি! ইউক্রেন কোচ ওলেগ ব্লোকিনের অবস্থাটা ঠিক এ রকমই। টিম এখনও নামেনি টুর্নামেন্টে, সোমবার নামছে জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের সুইডেনের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার আগেই ইউক্রেন কোচের সন্দেহ, ঘরের মাঠে খেলার চাপ টিম নিতে পারলে হয়! আগেভাগেই জানিয়ে রাখছেন, সমর্থকরা যতটা প্রত্যাশা করবেন, ততটা ভাল বোধহয় টিম খেলতে পারবে না। সুইডেনকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেয়ে ইব্রাহিমোভিচ এমনিতেই অসম্ভব তেতে। এসি মিলান স্ট্রাইকার বলেই দিয়েছেন, “আমার লক্ষ্য প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করা।” তখন ব্লোকিনের বক্তব্য, “আমাদের দেশে খেলা বলে প্রত্যাশার চাপ অনেক বেশি থাকবে। সমর্থকদের যেমন, প্লেয়ারদেরও তেমন। আর সেটা কাউকেই সাহায্য করে না।” |
|
|
|
|
|