তহবিলের অন্তত ১৫% লগ্নি করুন সোনায়
টানা প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের পর গত সপ্তাহের দু’দিন বৃষ্টি সাময়িক স্বস্তি আনলেও, তার জেরে যেমন বর্ষা আসেনি, ঠিক তেমনই টানা পতনের পরে গত সপ্তাহে কয়েক দিনের উত্থান বাজারে ‘বুল রানের’ সূচনা করেনি। তবে সাময়িক হলেও টানা লালের মধ্যে এই সবুজ ছোপের দরকার ছিল। প্রয়োজন ছিল বাজারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার।
বাজারের এই হঠাৎ উত্থানের কারণ মূলত দুটি। এক, নতুন করে সুদ কমার আশা এবং দুই, বিশ্ব বাজারের প্রভাব। সুদ কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। স্টেট ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে সুদ হ্রাস করেছে কোনও কোনও মেয়াদের আমানতে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমেছে, যা একটি সদর্থক দিক। এ ছাড়া, তৃতীয় ত্রৈমাসিক তথা বার্ষিক কোম্পানি ফলাফল মোটের উপর খারাপ হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন কমলেও একদম হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
পরিকাঠামো-সহ অন্যান্য ক্ষেত্র নিয়ে সরকার নড়েচড়ে বসায় কিছুটা আশা জেগেছে লগ্নিকারীদের মনে। আশা জাগিয়েছে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহের তথ্যও। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে মোট প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ আগের বছরের তুলনায় ১৩.০২% বেড়ে পৌঁছেছে ৫.৯০ লক্ষ কোটি টাকায়। মোট কোম্পানি কর সংগ্রহ বেড়েছে ১১.৫২%। এই খাতে সংগ্রহ পৌঁছেছে ৩.৯৬ লক্ষ কোটি টাকায়। অন্য দিকে, ব্যক্তিগত আয়কর সংগ্রহ স্পর্শ করেছে ১.৯৩ লক্ষ কোটি টাকা। বৃদ্ধি ১৬.২০%। ১৪.৫৬% সংগ্রহ বেড়েছে সম্পদ করের ক্ষেত্রেও। এ সব পরিসংখ্যান দেখে মনে হবে না অর্থনীতিতে মন্দা এসেছে।
বর্ষার জন্য যেমন সাধারণ মানুষ, তেমনই সুদ কমার আশায় বসে আছে শিল্প তথা শেয়ার বাজার। সুদ কতটা কমতে পারে তাই নিয়ে জল্পনা চলছে বিভিন্ন মহলে। এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নিলে বাজার দিশা পেতে পারে। তবে বাজারকে টানা চাঙ্গা রাখতে হলে ফিরিয়ে আনতে হবে পরিযায়ী পাখিদের। অর্থাৎ বিদেশি লগ্নি ছাড়া সূচকের বেশি উচ্চতায় পৌঁছনো সম্ভব নয়। সরকারের তরফে রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ মদত জোগাবে কোনও কোনও শিল্পকে। অন্য দিকে, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি চিন্তায় রেখেছে আমদানি-নির্ভর সংস্থাগুলিকে। এই কারণে সম্প্রতি দাম বেড়েছে পেট্রোল, কোনও কোনও গাড়ি, ল্যাপটপ-সহ অনেক পণ্যের। সুদ কমানো হলে তা বাড়াতে পারে ব্যাঙ্ক এবং বড় রকমের ঋণ-নির্ভর কোম্পানির শেয়ারের দাম। চাঙ্গা হবে গাড়ি এবং গৃহনির্মাণ শিল্প। সুদ কমলে বাড়তে পারে বন্ডের দামও।
সুদ এবং বিশ্ব পরিস্থিতি ছাড়া আর যার জন্য বাজার বসে আছে তা হল, পর্যাপ্ত বর্ষা। আকাশ থেকে জল সরবরাহ ঠিক না-হলে তা মাটি করে দিতে পারে সব উদ্যোগকেই। সুখের কথা, আন্দামান স্পর্শ করে কেরল হয়ে বাংলার পথে পাড়ি জমিয়েছে জলবাহী মেঘ। অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক দিনের। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নতুন করে সুদ কমালে সুদ কমতে পারে ব্যাঙ্ক জমার উপরেও, যার সূচনা স্টেট ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে করেছে। অর্থাৎ ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে হলে আর দেরি না-করাই ভাল।
সময় হয়েছে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রস্তুতি নেওয়ার। আপনার আয় থেকে উৎসমূলে কোনও কর কাটা হয়ে থাকলে তার টি ডি এস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে চটজলদি। একই সঙ্গে দেখে নিন আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে ২৬-এ এস ফর্মে তা দেখানো হচ্ছে কি না। না-হলে যে-সব সংস্থা বা ব্যাঙ্ক কর কেটেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
গরম যখন ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে তখন পাকা সোনাকে দেখা গিয়েছে ৩০,০০০-এর উপরে ঘোরাফেরা করতে। এতে মেয়ের বাবাদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা দেখা গেলেও খুশি লগ্নিকারীরা। অন্যতম সুরক্ষিত লগ্নির মাধ্যম হিসাবে এই হলুদ ধাতুটির এরই মধ্যে প্রবেশ ঘটেছে বহু গৃহে। অনিশ্চয়তার বাজারে বিশ্বময় সোনার চাহিদা ক্রমশ বেড়ে উঠছে। ফলে বাড়ছে দামও। লগ্নিযোগ্য তহবিলের কমপক্ষে ১৫% সোনায় লগ্নি করার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকেই। শেয়ার যখন গত তিন বছরে তেমন কোনও লাভের মুখ দেখাতে পারেনি, তখন একনাগাড়ে বেড়েছে সোনার দাম। অনিশ্চয়তার সময়ে সোনাই একমাত্র ভরসাস্থল। সোনা কেনার উপায় এখন অনেক। যেমন:
১) স্বর্ণকারের কাছ থেকে ক্রয়। এ ক্ষেত্রে কোনও কোনও সময়ে ওজন ও বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সন্দেহ থাকতে পারে।
২) ব্যাঙ্ক থেকে খাঁটি সোনার মুদ্রা কেনা।
৩) শেয়ার বাজার থেকে গোল্ড ইটিএফ কেনা।
৪) লগ্নি করা যেতে পারে গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডে। এ ক্ষেত্রে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট না-থাকলেও চলবে।
৫) আগাম লেনদেনের বাজার বা কমোডিটি মার্কেট থেকেও সোনা কেনা যেতে পারে। সোনার দর যখন বাড়ে, তখন কাগুজে সোনাও প্রায় একই হারে বাড়ে। কাগজ রাখা নিরাপদ। যখন তখন ভাঙানোও যায়। সোনার দাম কি পড়ে না? পড়ে, ছোট মেয়াদে। দীর্ঘ মেয়াদে এই ধাতুটির দাম সব সময়েই ঊর্ধ্বমুখী থাকতে দেখা গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.