ডিজেল এবং যন্ত্রাংশের দাম বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না ভাড়া। এই অবস্থায় বাসের মতোই কমতে শুরু করেছে গঙ্গার ফেরির সংখ্যা। খরচ সামলাতে না পেরে ‘কম লাভজনক’ কিছু পরিষেবা বন্ধ করে দিচ্ছে ‘হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি লিমিটেড’। সমিতির এক কর্তার কথায়, “সরকার ভাড়া বৃদ্ধিতে সায় দিচ্ছে না। নিছক জনসেবার জন্য ফেরি চালানো কোনও মতেই সম্ভব নয়।” তাই কর্তৃপক্ষ এবং কর্মী-সমিতি, উভয় তরফেই পরিবহণমন্ত্রীর কাছে ভাড়া বাড়ানোর আর্জি জানানো হয়েছে।
গঙ্গায় যাত্রী পারাপারের লক্ষ্যে ১৯৮০ সালে তৈরি হয় ‘হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি লিমিটেড’। সমিতি সূত্রের খবর, এখন কর্মী-সংখ্যা ৩৩৫। বেতন দিতে খরচ হয় মাসে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। মোট ৩৭টি লঞ্চ চলে। তেল বাবদ মাসিক ব্যয় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। সমিতির নিজের ফেরি ১০টি। কিন্তু আয়ের অভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করা যাচ্ছে না। সমিতির লঞ্চের ভাড়া শেষ বার বেড়েছিল ২০০৫-এর শেষ দিকে। সমিতির হিসেব অনুযায়ী, এর পরে কয়েক দফায় ডিজেলের দাম লিটার-পিছু বেড়েছে ১২ টাকা। মাসিক ১৫ হাজার টাকায় বেসরকারি লঞ্চ ভাড়া করা হয়। আয় বাড়ছে না বলে এ রকম লঞ্চের সংখ্যা কমে পনেরোয় দাঁড়িয়েছে। অথচ আগের তুলনায় যাত্রী বেড়েছে। সমিতির এক কর্তা বলেন, “বাসের সংখ্যা কমে যাওয়াতেই সম্ভবত যাত্রীদের একাংশ লঞ্চের দিকে ঝুঁকেছেন। এখন দিনে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী হয়।”
|
আয় কমে যাওয়ায় গত কয়েক মাসে ভাড়া করা ৬টি লঞ্চ বসিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে আর্মেনিয়ান ঘাট-জগন্নাথ ঘাট-গোলাবাড়ি-নতুন মন্দির-ঘুসুরি ও বাগবাজার-কাশীপুর-বরাহনগরের পরিষেবা। রেলকর্মীদের সুবিধার্থে হাওড়া-গার্ডেনরিচ লঞ্চ চলত। সেটিও বন্ধ। এর আগে মন্দিরতলা-বড়বাজার, ৫৮ গেট (গড়চুমুক)-গেঁওখালির রুটও বন্ধ হয়ে যায়।
সমিতি সূত্রের খবর, বছর দুই আগে সরকারের অনুমতি ছাড়াই সিটু উদ্যোগী হয়ে সমিতির কর্মীদের বেতন বাড়িয়েছিল। এই ঘটনা ঘিরে জটিলতা দেখা দেয়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কর্মীদের বাড়তি বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। সমিতির কর্মী-সংগঠনের প্রাক্তন সম্পাদক, সিটু নেতা মোহনলাল মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, “আমরা উদ্যোগী হয়ে সমিতির আর্থিক ভিত্তি শক্ত করার নানা চেষ্টা করেছিলাম। সাফল্যও পেয়েছিলাম।”
কী ভাবে সেই চেষ্টা হয়? মোহনবাবু বলেন, “সরকারের ১২টি লঞ্চ সমিতি ভাড়া নেয়। এর জন্য আগে মাসে ৮০০০ টাকা দিতে হত। তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রীকে অনুরোধ করে সেই ভাড়া ১০০ টাকায় নামিয়ে আনি। জেটি-পিছু ৩৫০০ টাকা সরকারকে ভাড়া দিতে হত। সেটাও মকুব করিয়েছিলাম। এ ভাবে বছরে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা বাঁচাতে পেরেছিলাম।” কিছু রুটে কাঠের লঞ্চ চলত। যাত্রী কম হওয়ায় সেগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতেও বেশ কিছু টাকা বেঁচেছে বলে দাবি করেন তিনি।
এখন ফেরির ভাড়া ৪ থেকে ৬ টাকা। কর্তৃপক্ষ প্রতি পর্যায়ে ন্যূনতম ১ টাকা বাড়াতে চিঠি দিয়েছিলেন মহাকরণে। অনুমোদন মেলেনি। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “এই সমিতির পরিচালনা ও নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব সমবায় দফতরের হাতে। ওরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে।” সমবায়মন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি বলেন, “হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির পরিচালনমণ্ডলী ভেঙে প্রশাসক বসানো হয়েছে। সেই প্রশাসক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন। তবে, এখনই ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না।” সমিতির সরকার-নিয়োজিত প্রশাসক অপরেশ ঘোষ বলেন, “সরকার ফেরির ভাড়া বাড়াতে রাজি নয়। কী ভাবে আয় বাড়ানো যায়, তা খতিয়ে দেখছি।” |