বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করতে গিয়ে রাজনৈতিক ‘তকলিফ’-এর শিকার হয়েছে। তার ক্ষত এখনও শুকোয়নি। এর পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করতে আগ্রহী সহারা গোষ্ঠী। নিজের ৬৫ বছরের জন্মদিনে সহারা ইন্ডিয়া পরিবারের কর্ণধার সুব্রত রায় দেশের আরও ১০টি শহরে আবাসন-শিল্পের বিপুল বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা রবিবার ঘোষণা করলেন। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গও তাঁদের লগ্নি মানচিত্রে ঠাঁই পেতে চলেছে। আগামী বছরেই শিলিগুড়ি ও খড়্গপুরে তাঁদের আবাসন শিল্প প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
আজ এখানে ‘শুভ আগমন’ অনুষ্ঠানে যে দশটি ছোট-বড় শহরে সুব্রতবাবু তাঁদের নতুন আবাসন প্রকল্প চালুর কথা ঘোষণা করলেন, তাতে পুণে, ঔরঙ্গাবাদ, জোধপুরের পাশাপাশি কটক-ভুবনেশ্বরও রয়েছে। মোট ৯০০ একর জমিতে তৈরি হতে চলা ওই প্রকল্পে ২৫ হাজার আবাসন থাকবে। প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হবে আড়াই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। কিন্তু এখনও ‘সহারাশ্রী’-র মানচিত্রে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ নেই কেন? বিশেষ করে যিনি এখনও মনে-প্রাণে বাঙালি, কোনও রকম পশ্চিমি টান ছাড়াই অনর্গল বাংলায় কথা বলেন। পড়শি রাজ্য ওড়িশা কিংবা পড়শি দেশ বাংলাদেশে পা রাখলেও পশ্চিমবঙ্গ কত দিন ব্রাত্য থাকবে তাঁর কাছে? |
এ দিন স্পষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন সহারাশ্রী। জানিয়ে দিয়েছেন, আগে লগ্নি করতে এসে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়লেও এখন তাঁরা বাংলায় লগ্নির স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে ইচ্ছুক। তাই সোনারপুরে মেডিকেল কলেজ ও আবাসন প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। আগামী জানুয়ারিতেই খড়্গপুর ও শিলিগুড়িতে সহারা গোষ্ঠীর ‘সহারা সিটি হোম’ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। পূর্বে প্রস্তাবিত রাজারহাটের আবাসন প্রকল্পটি নিয়েও ফের এগোতে চান তাঁরা। রাজারহাটের প্রকল্পটির জট কাটতে সময় লাগলেও বিষয়টি নিয়ে এখনও আশাবাদী সহারাশ্রী।
পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখনও বৈঠক হয়নি সুব্রতবাবুর। সহারাশ্রী এ দিন নিজেই জানান, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে মমতার বৈঠক হলেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে গত এক বছরে আর বৈঠক হয়নি। তবে তিনি আশাবাদী শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হবে। তাঁর কথায়, “আমি যাব দেখা করতে।”
এর আগে সিপিএম জমানায় সুব্রতবাবু কলকাতায় লগ্নির উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। সুন্দরবনে ভাসমান পর্যটক কেন্দ্র, ফিল্ম সিটি এবং আবাসন প্রকল্পের বিষয়েও কথাবার্তা এগোয়। কিন্তু সিপিএমের সঙ্গে বিরোধের জেরে শেষ পর্যন্ত সুব্রতবাবু পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করা থেকে পিছিয়ে যান। সুব্রতবাবুর ছেলের বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেয়ে সে দিন দেশের বিভিন্ন দলের নানান নেতা এলেও বুদ্ধবাবু আসেননি। এর পর আর সুব্রতবাবু কলকাতামুখো হননি। সম্প্রতি অভিনেতা প্রসেনজিতের উৎসাহে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দাদাসাহেব ফালকে সম্মান পাওয়ার জন্য সুব্রতবাবু একটি বিশেষ সভার আয়োজন করেন। সেখানেও সুব্রতবাবু বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে উৎসাহী। কলকাতার চলচ্চিত্র শিল্পের জন্যও তিনি বিনিয়োগের ঘোষণা করেন।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতি তাঁর আগ্রহে যে এখনও ভাঁটা পড়েনি, সে কথা এ দিন বার বারই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আজ এখানে সহারা পরিবারের বিশাল প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠানের মধ্যে। আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, যা তাঁর মনে হয়, সেটা স্পষ্ট করে বলতে কোনও দ্বিধা নেই তাঁর। কারণ তিনি ‘আবেগপ্রবণ’ মানুষ। তাই আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির কথা বলতে গিয়েও পূর্বের অভিজ্ঞতার কথা সকলের সামনে বলতে দ্বিধা করেননি তিনি। জানিয়েছেন, রাজারহাটে জমির কিছু সমস্যা থাকায় প্রকল্প তখন এগোয়নি। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সমস্যা তাঁদের কাছে ‘তকলিফে’র বিষয় বলেও এ দিন উল্লেখ করেন তিনি। তাই তাঁর কথায়, “এটা তো ভাল যে লগ্নি করে তার পর ফিরে আসতে হয়নি। ”
বাম জমানার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হলেও তাঁর মতে, সার্বিক ভাবে তৎকালীন সরকার তাঁদের প্রকল্প বিশেষ করে, সুন্দরবন প্রকল্পটিকে সমর্থন করেনি। এ দিন অনুষ্ঠানের পরে প্রশ্নের জবাবে তাঁর বক্তব্য, ওই প্রকল্পটি নিয়ে পরিবেশগত কোনও সমস্যা না থাকলেও সরকার পিছিয়ে যায়। তাঁর কথায়, “বুদ্ধবাবু প্রগতিশীল ব্যক্তি। তিনি অনেক কিছু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। কারণ বিভিন্ন সমস্যা ছিল।” তবে ফের পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির ঝাঁপি নিয়ে হাজির হতে চান সহারাশ্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার উৎসাহ প্রকাশ করলে তিনি যে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে উৎসাহী, আজ তার স্পষ্ট বার্তাই এখানে দিলেন সুব্রতবাবু। সহারাশ্রীর আশা, নতুন সরকার তাঁর আর্জিতে সাড়া দেবে। |