|
|
|
|
দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে জেরবার ‘পরিত্যক্ত’ কারখানা |
সুশান্ত বণিক • আসানসোল |
সীমানা পাঁচিল ভেঙে গিয়েছে কবেই। প্রতিদিনই লুঠ হয়ে যাচ্ছে কারখানার কোনও না কোনও সম্পত্তি। ভেঙে নেওয়া হয়েছে কারখানার ছাউনির বেশিরভাগ অংশই। সব মিলিয়ে অর্ধশতাব্দী প্রাচীন সাইকেল কারখানার দুরাবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ আসানসোলের সেনর্যালে এলাকার বাসিন্দারা। কারখানার সম্পত্তি সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন সংস্থার প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীরা। এই জমিতে শিল্প গড়ার আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা।
১৯৭০ সাল থেকে সেনর্যালে এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সাইকেল কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার এই কারখানাটির অর্থিক দুরাবস্থা শুরু হয়। সেই সময় কারখানাটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছিল। দাবি-দাওয়া নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বিরোধ বাধে। ১৯৭১ সালে কারখানা ‘ক্লোজার’ করেন মালিকপক্ষ। ১৩ মাস বন্ধ থাকার পরে ১৯৭২ সালের ২৯ মার্চ ফের খোলে কারখানাটি। ওই সময় এই কারখানার হাল ফেরাতে বেশ কিছু ঋণ দেয় ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিকনস্ট্রাকসন অফ ইন্ডিয়া’। কিন্তু কারখানার দিন ফেরানো সম্ভব হয়নি। ১৯৭৪ সালে বেশ কিছু কর্মী-সংকোচন হয়। এতেও হাল না ফেরায় ১৯৭৫ সালে কারখানাটির পরিচালন ভার নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। শেষমেশ ১৯৮০ সালে কারখানাটির জাতীয়করণ হয়। কিন্তু এর পরেও কারখানার দিন ফেরেনি। ১৯৯১ সালে কারখানাটি বিআইএফআর-এ চলে যায়। একের পর এক শুনানির পরেও কোনও আশার আলো না দেখে সেটি ২০০০ সালের ১৭ জানুয়ারি পাকাপাকি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় কর্মরত কয়েকশো শ্রমিক-কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হয়। |
মাস কয়েক আগে |
রবিবার |
|
|
এই মূল গেটও এখন আর অবশিষ্ট নেই। কারখানা চত্বর পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। —নিজস্ব চিত্র |
|
কলকাতা হাইকোর্ট ২০০৮-এর ১৪ মে কারখানার জমি, আবাসন, শেড, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি লিক্যুইডেশনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। প্রায় ২০ জন শিল্পপতি আসানসোলে এসে সম্পত্তি দেখেও যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই সম্পত্তি কেনার জন্য দর হাঁকেননি। তখন থেকেই এই কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের অনুমোদিত লিকু্যইডেটরের নিরাপত্তাকর্মীরা। গত ১২ বছর ধরে তাঁদেরই কারখানার সম্পত্তি রক্ষা করার কথা।
কিন্তু বাস্তব চিত্রটি পুরোপুরি আলাদা। কারখানার সামনে গেলেই দেখা যায়, প্রতিদিনই লুঠ হয়ে যাচ্ছে সম্পত্তি। সীমানা পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কারখানার ছাউনির সিংহভাগই ভেঙে নেওয়া হয়েছে। কারখানার ভিতরে ঢোকার মূল গেটটিও ভেঙে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রথম দিকে রাতের অন্ধকারে লুঠপাট চালাত দুষ্কৃতীরা। এখন প্রকাশ্য দিনের আলোতেই চুরি করছে। কারখানার ভিতরের মূল্যবান যন্ত্রাংশও লুঠ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের দাবি, “কিছু দিন আগে পর্যন্ত লিক্যুইডেটরের নিরাপত্তকর্মীদের দেখেছি। তাদের ভয় দেখিয়েই দুষ্কৃতীরা যথেচ্ছ লুঠপাঠ চালাত। আজকাল তো আর নিরাপত্তারক্ষীও চোখে পড়ে না।”
এই অবস্থায় কারখানার সম্পত্তি সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন সংস্থার প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীরা। এক সময় এই কারখানার দক্ষ কর্মী হিসাবে সরকারের পুরস্কার পেয়েছিলেন জ্যোতিভূষণ নিয়োগী। তিনি বলেন, “চোখের সামনে কারখানার সম্পত্তি লুঠ হতে দেখছি। এখনও কিছু বকেয়া পাব। সম্পত্তি লিক্যুইডেশন হলে বকেয়া মেটার সম্ভাবনা ছিল। এখন তো আর সেই আশাও নেই।” কারখানার জমিতে নতুন শিল্প গড়ে তোলারও আবেদন করেছেন প্রাক্তন কর্মীরা। এমনই এক প্রাক্তন কর্মী বারিন মজুমদারের কথায়, “পরিত্যক্ত অবস্থায় জমিটি পড়ে রয়েছে। এখানে শিল্প হলে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। আমরা স্থানীয় বিধায়কের কাছে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন করেছি।”
বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় জানান, বাসিন্দারা তাঁর কাছেও এই অভিযোগ জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। বিধানবাবু বলেন, “ওই এলাকায় কারখানার অনেক জমি রয়েছে। সেগুলিও এখন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমস্যাগুলির কথা জানিয়ে এখানে নতুন কোনও শিল্প গড়া যায় কি না তা ভেবে দেখার জন্য রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি।” |
|
|
|
|
|