যানজটে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে প্রচুর গাড়ি আটকে পড়ার ভুয়ো কাহিনি ফেঁদে যাত্রীবাহী বাস ঘুরপথে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকা লুটপাট করে চম্পট দিল একদল দুষ্কৃতী। বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ কালিয়াচকের মোথাবাড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। মোথাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি ও কালিয়াচক থানার মাঝে কলকাতাগামী একটি বেসরকারি বাসের মহিলা যাত্রীদের মারধর করে সোনার দুল, হার এবং পুরুষ যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ কয়েক লক্ষ টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। অন্তত ২০ মিনিট ধরে ডাকাতির পরে কালিয়চক থানার ৪০০ মিটার আগে রেলগটের কাছে দুষ্কৃতীরা বাস থামিয়ে নেমে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরে বাসের চালক কালিয়াচক থানায় না ঢুকে বাস নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হলে উত্তেজিত যাত্রীরা বাসের চালক, কন্ডাক্টর ও খালাসিকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরে যাত্রীদের চাপে বাস থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ডাকাত দলের সঙ্গে যোগসাজস থাকতে পারে আশঙ্কায় পুলিশ বাসের চালক হাসিবুল হক, কন্ডাক্টর মুজিবর রহমান ও খালাসি সুজিত দাসকে আটক করে জেরা শুরু করেছে। জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “ডাকাতদলের হদিশ করতে বাসের চালক, কন্ডাক্টর খালাসিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। ঘুরপথে আসায় ওই বাসে ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতদের ধরার জন্য তল্লাশি চলছে।”
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি-রসখোয়া থেকে কলকাতাগামী বাসটি ৬০ থেকে ৬২ জন যাত্রী নিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মালদহের গাজল পর্যন্ত ঠিকঠাক যায়। গাজলে একটি ধাবায় গাড়ির চালক-সহ বাসের যাত্রীরা নামেন। সেখানে খাওয়াদাওয়ার পরে উল্টো দিক থেকে একই সংস্থার একটি বাস থেকে কয়েকজন যাত্রী কলকাতাগামী গাড়ির চালককে জানায়, মালদহের পরে জাতীয় সড়কে প্রচন্ড যানজট, বাস ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যাত্রীদের অভিযোগ, মালদহ শহরের রথবাড়িতে বাস পৌঁছনোর পরে বাসের চালক ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ছেড়ে পশ্চিম দিকে মালদহ মানিকচক রাজ্য সড়ক ধরে অমৃতি হয়ে মোথাবাড়ির দিকে রওনা হয়। মোথাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি পার হতেই বাসের সামনে একটি সাদা রংয়ের গাড়ি দাঁড়ায়। কিছু বোঝার আগে দু’জন দুষ্কৃতী বাসের চালকের মাথায় পাইপগান ধরে বাসটি দাঁড় করায়। বাসের চালককে চালকের আসন থেকে সরিয়ে এক দুষ্কৃতী বাসটি আস্তে আস্তে চালাতে থাকে। ৫ থেকে ৬ জন দুষ্কৃতীরা বাসে উঠে যাত্রীদের মারধর করে টাকা, গয়না, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ডাকাতি করার পর কালিয়াচকের রেল গেটের কাছে বাস থামিয়ে নেমে দুষ্কৃতীরা মাঠের ভিতর দিয়ে হেঁটে পালিয়ে যায়। রসখোয়ার সুমি মন্ডল বলেন, “ডাকাতরা কানের দুল ও গলা থেকে হার ছিনিয়ে নেয়।” বাসযাত্রীরা জানান, মালদহের রথবাড়ি থেকে যখন বাসটি অন্য রুটে নিয়ে যাচ্ছিল তখন চালককে বারবার বলা হয়েছে জাতীয় সড়ক ছেড়ে অন্য রুটে যাবেন না। যানজটে দেরি হলে, হবে। কিন্তু চালক ও কন্ডাক্টর কথা শোনেনি। ইটাহারের চূড়ামনের রুপসেনা বিবি বলেন, “প্রথমে গয়না দিতে চাইনি। একজন ডাকাত আমার কপালে পাইপগান ঠেকিয়ে গলা ও কান থেকে গয়না কেড়ে নেয়।” বাসযাত্রীদের অভিযোগ, ডাকাতদের সঙ্গে বাসের চালক ও কন্ডাক্টরের যোগসাজস রয়েছে। না হলে মোথাবাড়ি রুট দিয়ে কেন একা একটি বাস নিয়ে চালক ও কন্ডাক্টর যাবেন? তা ছাড়া মোথাবাড়ি ফাঁড়ি পার হওয়ার পরে কেন বাসটি আস্তে চলছিল। বাসের গেটও খোলা রাখা ছিল। এমনকী, ডাকাতির পরে চালক কেন বাস কালিয়াচক থানায় না নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন যাত্রীরা। বাস চালক হাসিবুল হকের দাবি, “মালদহর পর থেকে জাতীয় সড়কে যানজট রয়েছে বলে মোথাবাড়ি দিয়ে বাস নিয়ে যাচ্ছিলাম। ডাকাতদের পাল্লায় পড়তে হবে, বুঝিনি। যারা ডাকাতি করেছে তাঁদের কাউকে চিনি না। স্টিয়ারিং ডাকাতদের হাতে তুলে না দিলে ওরা আমায় খুন করত।” |