|
|
|
|
|
এনার্জি ফেরাতে শরীরচর্চাই বাজি
গরমের দৌরাত্ম্যে শরীর মনের প্রাণশক্তি ঝিমিয়ে পড়ছে?
দাওয়াই জেনে নিন। ফিটনেস এক্সপার্ট বিশ্বজিৎ তপাদার |
|
|
গ্রীষ্মের দাবদাহে ও ভ্যাপসা গরমের সময় অতিরিক্ত ঘাম হয়। তার জন্য শরীর থেকে প্রয়োজনীয় জল বেরিয়ে ক্লান্তি আসে, এনার্জির পরিমাণও কমে যায়। কিন্তু এনার্জি শুধু গরমের সময়ই কমে না। ফিটনেস বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায়, এনার্জিকে ‘ঘুম ও বিশ্রাম’, ‘পর্যাপ্ত পানীয় জল’, ‘শারীরিক পুষ্টি’, ‘পরিমিত ও নিয়মিত ব্যায়াম’ এবং ‘মনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’র সমষ্টিফল বলে উল্লেখ করা হয়। এর কোনও একটার ব্যাঘাত ঘটলেই এনার্জি ভাণ্ডারে টান পড়বে।
এনার্জিতে টান পড়ে কেন
• গরমের জন্য ক্লান্তি, ডিহাইড্রেশন ও শরীরে জলের টান
• ঘুম ও বিশ্রামের ব্যাঘাত
• পুষ্টির অভাব
• ‘স্লিম অ্যান্ড ট্রিম’ হতে গিয়ে হঠাৎ ভাত রুটি সহ সমস্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া বন্ধ করা
• ওবেসিটি আক্রান্তদের মেদের আধিক্যে শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন মজুত হওয়া
• অতিরিক্ত রোগা বা আন্ডারওয়েট শরীরে এনার্জি মজুত হতে না পারা
• অতিরিক্ত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম
• ধূমপান এবং তামাক সেবনের জন্য শরীরে টক্সিনের প্রকোপ
• মদ্যপানের পর হ্যাংওভার
• শারীরিক অসুস্থতা যেমন ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, অ্যাসিডিটি, ইউরিক অ্যাসিড, রক্তচাপের সমস্যা, মাইগ্রেন, হাঁপানি, ঘাড়ে ও কোমরে ব্যথা ইত্যাদি
• ঘন ঘন কাজের সময় বদল
• কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করা, বদ্ধ ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বসবাস করা
• অসুখী যৌনজীবন, একাকিত্ব, বয়সবৃদ্ধি
• অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড খাওয়া
|
|
শরীরচর্চায় প্রাণশক্তির জোয়ার আসে
যে কোনও শরীরচর্চা শুরু করতে হলে প্রাথমিক ভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন। এটা পাওয়া যায় উপযুক্ত খাবার, ঘুম ও বিশ্রাম থেকে। এর পর নিয়মিত শরীরচর্চা করলে আপনি সম্পূর্ণ প্রাণশক্তি পাবেন। অন্তত হাঁটুন। তাতে কিছুটা এনার্জি পাবেন। ব্যায়ামের মাধ্যমে এনার্জি সঞ্চার করতে হলে পদ্ধতিটি ঠিকঠাক হতে হবে। গোটা ব্যায়ামটাকে তিন ভাগে ভাগ করে নিন। প্রথমে ওয়ার্ম-আপ, তার পর টোনিং এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিং আর সব শেষে কুল ডাউন। ব্যায়ামের মাধ্যমে ভরপুর এনার্জি পেতে ঠিক করে ওয়ার্ম-আপ করা জরুরি। অতি উৎসাহে দৌড়ানো, ট্রেড মিলে হাঁটা বা অন্যান্য ব্যায়াম অতিরিক্ত অনুশীলন করলে আরও এনার্জি হারিয়ে ফেলবেন। যে হেতু ওয়ার্ম-আপ সেশনটাই এনার্জি অর্জনের প্রথম ধাপ, তাই ওটা করতেই হবে। তবে কার জন্য কতটা মাত্রা দরকার, তা ঠিক করবেন আপনার ফিটনেস ট্রেনার। কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ ছাড়া ব্রিদিং, ফ্রি হ্যান্ড এবং স্ট্রেচিংকেও ওয়ার্ম-আপে রাখতে হবে। তবে স্ট্রেচিং-এর ব্যায়ামগুলি আগে গা গরম করে নিয়ে তার পর অভ্যাস করবেন। নিয়মিত ‘সূর্য নমস্কার’-এর ভঙ্গিমার অভ্যাস এনার্জি বৃদ্ধির সহায়ক। টোনিং এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিং হালকা ওজন দিয়ে অথবা নিজের শরীরের ওজনকে কাজে লাগিয়ে করুন। এ ক্ষেত্রে পিলাটিস-এর ব্যায়ামগুলি আপনার শরীর প্রাণশক্তিতে ভরে দেবে। পিলাটিস শিরদাঁড়ার নমনীয়তা এবং দৃঢ়তাও খুব তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে দেয়। হালকা ওজনের ডামবেল বা কেটল বেল দিয়ে প্রত্যেকটা মাংসপেশিকে স্ট্রেংথ ট্রেনিং এবং টোন-আপ করিয়ে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। শরীর এনার্জিতে ভরে যাবে। কুল-ডাউন সেশনকে কিন্তু অবহেলা করবেন না। প্রাণশক্তিতে সারা শরীরকে ভরিয়ে তুলতে রিল্যাক্সারসাইজ এবং প্রাণায়াম একযোগে অভ্যেস করুন। মনে রাখবেন, ব্রিদিং এক্সারসাইজ এবং প্রাণায়াম এক জিনিস নয়। উভয়ই হয়তো শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু পদ্ধতিগত দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ওয়ার্ম-আপে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন, আর কুল-ডাউনে চাই প্রাণায়াম।
এ সবের সঙ্গে সঙ্গে সারা দিন যাতে নিজেকে ‘হাইড্রেটেড’ রাখা যায়, সে বিষয়ে যত্ন নিন। শরীর চর্চার সঙ্গে সঙ্গে মাসে দুই-এক বার বডি মাসাজ বা স্পা এনার্জি বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
এ ভাবেও প্রাণশক্তি বাড়ানো যায়
• স্বাস্থ্যকর পর্যাপ্ত প্রাতরাশের পর সারা দিনে বারে বারে অল্প করে খাওয়া।
• রিফাইন্ড শুগার, কফি, কোলা এড়িয়ে চলা।
• সারা দিনের প্রতিটা খাবারকে খাবারের মতো খান, ওষুধের মতো নয়।
• গরমের সময় গ্লুকোজের জল, নুন-চিনি-লেবুর জল, ডাবের জল, আখের রস, ছাতুর শরবত, ঘরে পাতা দইয়ের লস্যি, আমপোড়া শরবত খান।
• কলা, খাঁটি দুধ, প্রাকৃতিক সয়াবিন ডায়েটে রাখুন। সমস্ত মরসুমি ফল খান।
• লাইভ ফুড বা অক্সিজেন-সমৃদ্ধ খাওয়ার অভ্যাসে জোর দিন।
• মদ্যপান, ধূমপান, গুটখা এবং জরদা-পান বর্জন করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে টক্সিন দূর করে চনমনে হয়ে যান।
‘মন’কেও প্রাণশক্তি জোগান
• হীনম্মন্যতা ঝেড়ে ফেলে নিজের প্রতিটা মূল্যবোধকে সম্মান দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলুন।
• দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে ভাল করে স্নান করুন। ঘরের প্রতিটা জানলা খুলে পরিষ্কার হাওয়া-বাতাস আসতে দিন। বিছানায় পরিষ্কার চাদর পাতুন।
• যে ফুলের গন্ধ আপনার ভাল লাগে, ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখুন। পছন্দসই গন্ধ যুক্ত ধূপও জ্বালাতে পারেন।
• স্বাস্থ্যের উপযুক্ত রুম ফ্রেশনার ব্যবহার পছন্দ করলে লেমন কিংবা ল্যাভেন্ডার-এর গন্ধ যুক্ত রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করুন। লেমন-এর গন্ধ সব সময়ই আপনার মনঃসংযোগ এবং স্মৃতিশক্তিকে সজীব রাখবে। আর ল্যাভেন্ডার আপনার মানসিক অবসাদ কাটিয়ে আপনাকে তরতাজা রাখতে সাহায্য করবে।
• ঘরে হালকা আলো জ্বালান।
• পছন্দসই গান বা হালকা মিউজিক বাজান।
• সন্ধের পর বা রাতের দিকে হাওয়া-বাতাস থাকলে বারান্দায় কিংবা ছাদে গিয়ে পরিষ্কার আকাশে নিজের মনটাকে কিছু ক্ষণ মেলে ধরুন।
• ছুটির দিনটাকে ছুটির দিনের মতোই উপভোগ করুন।
|
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
|
|
|