|
|
|
|
|
‘ওয়ার্টারলুর যুদ্ধে
ওয়ার্ট এক রকম সংক্রমণ। ছোট ছোট আঁচিলের মতো দেখতে হয়।
ভয় নেই। প্রায়ই নিজে থেকেই সেরে যায়। আর ঠিক না হলে?
চিকিৎসা তাকে হারাবেই। ডা. সুব্রত মালাকার |
|
|
ত্বকের কিছু খুবই সাধারণ সমস্যা আছে। কিন্তু আমরা এগুলি নিয়েও যথেষ্ট বিভ্রান্ত হই এবং বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির খোঁজে ছুটে বেড়াই। এ রকমই একটা অসুখ ওয়ার্ট।
ওয়ার্ট ত্বকের একটি ভাইরাল সংক্রমণ। ছোট ছোট আঁচিলের মতো এটি দেখা যায়। ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলের হয়, তবে ছোটদের এটি বেশি হয়। থিয়োমেন প্যাপিলোমা নামক একটি ভাইরাস ত্বকের উপরিভাগে এপিডারমিসে সংক্রমণ ছড়ায়। ত্বকের কোনও অংশ কেটে গেলে সংক্রমণটি বেশি দেখা যায়। এটি দেখতে বাদামি রঙের এবং উপরিভাগটি খসখসে থাকে। মুখে ঠোঁটে হাতে পায়ে যে কোনও জায়গায় হতে পারে।
কাদের হতে পারে?
• যে কোনও বয়সে সকলের হতে পারে।
• বাচ্চা, টিন এজারদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
• যারা নখ খান, তাঁদের বেশি হয়।
• শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম (ডায়াবিটিস বা এডস রোগী) হলে, এই অসুখটি হতে পারে।
কারণ
• ত্বকের কোনও অংশ কেটে গেলে ভাইরাসটি সহজেই ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে। এই কারণেই বেশি হয়।
• শরীরের যে অংশে চুল থাকে সেখানে ওয়ার্ট হয়। যেমন মেয়েদের পায়ে, ভ্রূতে ও তার চারপাশে, ছেলেদের দাড়ি কামানোর জায়গায়।
• শরীরের এক জায়গায় হলে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়।
• সরাসরি স্পর্শ থেকে এটি হয়। যে ব্যক্তির ওয়ার্ট হয়েছে, তার ব্যবহৃত জিনিস থেকে অন্য কারও এটি হতেই পারে।
কী ভাবে চিনব?
• ত্বক বিশেষজ্ঞ দেখেই বুঝতে পারেন যে ওয়ার্ট হয়েছে। খুব কম ক্ষেত্রে বায়োপ্সির প্রয়োজন হয়। পায়ের তলায় যে কড়া হয়, সেটির সঙ্গে যেন ওয়ার্টকে মিশিয়ে ফেলবেন না। |
|
চিকিৎসা
• একটি কথা মনে রাখবেন যে এটি ক্ষতিকারক এবং মারাত্মক কোনও অসুখ নয়। অনেক সময়ই নিজে থেকে সেরে যায়। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় (বাচ্চাদের ক্ষেত্রে) কোনও চিকিৎসা ছাড়াই ওয়ার্ট ঠিক হয়ে গেল। প্রথমে একটি, দু’টি করে হয়, কিন্তু হঠাৎই দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে গাফিলতি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
• স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের একটি মিশ্রণ এপিডারমিসের ভাইরাসের ওপর প্রয়োগ করলে এটি সেরে যায়।
• স্যালিসাইলিক ও ল্যাকটিক অ্যাসিডের একটি মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকের উপরিভাগে লাগানো হয়। তার পর দেখা যায় একটি সাদা আস্তরণ জমে আছে। এই আস্তরণটি এপিডারমিসের কোষগুলিকে ধ্বংস করে ও সংক্রমণটি চলে যায়।
ক্রায়োথেরাপি
• তরল নাইট্রোজেনকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় আনা হয়। এটি খুবই ঠান্ডা থাকে এবং দু’ভাবে প্রয়োগ করা হয়। যেখানে হয়েছে, সেখানে স্প্রে করা হয় এবং তুলোর সাহায্যে লাগানো হয়। বাচ্চাদের চোখের চার পাশে হলে স্প্রে করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে তুলোর সাহায্যে লাগাতে হবে। তিন সপ্তাহ অন্তর দুই থেকে তিন বার ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। যাঁদের ক্রায়োথেরাপি করা হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে পরে একটি ফোসকা দেখা যায়। কিন্তু এটি নিজে থেকেই চলে যায়। এ ছাড়াও লাল বা কালো দাগ হতে পারে। এটিও চলে যায়। তাই চিন্তার কোনও কারণ নেই।
ইলেকট্রোসার্জারি
• এ ক্ষেত্রে টিস্যুটি তৎক্ষণাৎ ধ্বংস হয়ে যায়। কিছুটা ঘষে এটিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা হয়। ঠিক ভাবে না করতে পারলে কিন্তু দাগ হতে পারে।
লেজার
• লেজার সব সময় সকলের ক্ষেত্রেই প্রথম পছন্দ। এটি করার আগে জায়গাটিকে অবশ করা হয়। লেজার দুই থেকে তিন বার করার দরকার হতে পারে।
ইমিউনোথেরাপি
• শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ইমিউনোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। যখন অন্য পদ্ধতিগুলিতে কাজ হয় না, তখন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কেমিক্যালটি লাগানোর পর হালকা অ্যালার্জি হতে পারে। কিন্তু ভয়ের কোনও কারণ নেই। ওয়ার্ট নির্মূল হয়ে গেলেও অনেক সময় দেখা যায় বার বার হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ভাইরাসটি একটি কোষ থেকে অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়ে। সেই কারণে জলদি চিকিৎসার ব্যবস্থা
করা উচিত।
কিছু টিপস
• নিজে কি চিকিৎসা করা যায়? যখন খুব ছোট আকারে থাকে, এবং একটি বা দুটি হলে নিজে চিকিৎসা সম্ভব। যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে, এই ধরনের ওষুধ লাগাতে পারেন।
• ডায়াবিটিস থাকলে নিজে চিকিৎসা করতে যাবেন না।
• শরীরের কোনও অংশ কেটে গেলে সেটিকে দীর্ঘস্থায়ী হতে দেবেন না।
• প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
• মুখে বা যৌনাঙ্গে হলে নিজে চিকিৎসা করতে যাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
• যদি চুলকোয় বা রক্তক্ষরণ হয়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসা করান।
কিছু সাবধানতা
• কোনও সময়ে খুঁটবেন না। এতে দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• সুইমিং পুলে নামলে ওই জায়গাটি ঢেকে নামুন। কারণ আপনার থেকে অন্যদের হতে পারে।
• যে ব্যক্তির ওয়ার্ট হয়েছে, তার ওয়ার্ট-এর জায়গাটি ছোঁবেন না।
• হাতে বা পায়ে হলে, জলের কাজ করার পর তৎক্ষণাৎ শুকনো করে নেবেন।
|
যোগাযোগ: ২৩৫৮-৮০১০, ৯৪৩৩০২৩৮৭৯
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
|
|
|