চিপ্স, পিৎজা, বার্গার, চাউমিন, ঠান্ডা পানীয় এখনকার বেশির ভাগ স্কুলপড়ুয়ার পছন্দের খাবারের তালিকায় এগুলোই উপরের দিকে থাকে।
এই খাবার বা ‘জাঙ্ক ফুড’-এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নানা আলোচনা হলেও এগুলো খাওয়ার প্রবণতা কিন্তু কমছে না। উল্টে এ সব খেয়ে এমন সব রোগ বাসা বাঁধছে বাচ্চাদের শরীরে, যা বছর দশেক আগেও দেখা যেত না।
আর তাই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী কৃষ্ণা তিরথ ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়ার বদ-অভ্যেস বন্ধ করতে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আজ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “পড়ার চাপে বা সময়াভাবে দ্রুত খাওয়া শেষ করতে বাচ্চাদের নজর পড়ে এই সব ‘জাঙ্ক ফুডে’। এগুলো সহজে পাওয়া যায় কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।” তাই এই সব খাবার থেকে স্কুলপড়ুয়াদের দূরে রাখতে স্কুল-ক্যান্টিন বা স্কুল- চত্বরের কাছাকাছি নানা খাবার দোকানে নিয়ন্ত্রণ চালু করার বিষয়ে ভাবতে বলছেন তিরথ।
দেশে অসংখ্য শিশু এমনিতেই অপুষ্টির শিকার। কিন্তু তিরথের বক্তব্য, “অ-পুষ্টি (‘আন্ডার নিউট্রিশন’) আর পুষ্টির গোলমালের (‘ম্যালনিউট্রিশন’) মধ্যে তফাতটা আমরা বুঝতে পারি না। তাই জানি না, যারা ‘জাঙ্ক ফুড’ খায়, তাদের মধ্যেই পুষ্টির গোলমাল বা ‘ম্যালনিউট্রিশন’ দেখা যায়।” শহরে শিশুদের স্থূলতা ও অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে সচেতন করতে শিশু-চিকিৎসক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “ম্যালনিউট্রিশন থেকেই স্থূলতা আসে। দশ বছর আগেও অপুষ্টির সমস্যা দেখা যেত শহুরে বাচ্চাদের মধ্যে। এখন সেটা কমে গিয়েছে। ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়ায় পুষ্টির গোলমালে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, এমনকী গ্যাসট্রাইটিসও হচ্ছে বাচ্চাদের।”
শুধু শহুরে বাচ্চা নয়, গ্রামেগঞ্জে পানের দোকানেও এখন চিপ্সের প্যাকেট আর ঠান্ডা পানীয়ের সুবাদে ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়ার অভ্যেস তৈরি হচ্ছে বলে জানালেন সুব্রতবাবু। ‘জাঙ্ক ফুড’ খেয়ে পেট ভরে যায় বলে প্রাকৃতিক খাবার (ডাল, ভাত, তরকারি) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিশুরা। কিন্তু সুব্রতবাবু বলছেন, এতে পেট ভরলেও শরীরে তৈরি হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি (যাকে বলা হয় ‘এম্পটি ক্যালোরি’)। অথচ দরকারি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ তৈরি হচ্ছে না শরীরে।
এই সব খাবার বন্ধ করতে তিরথের দাওয়াই, “স্কুল ক্যান্টিন বা স্কুলের বাইরের দোকানে ‘জাঙ্ক ফুড’ বন্ধ করে একটা কড়া বার্তা দেওয়া হোক। তাতে এগুলো খাওয়ার উৎসাহও কমবে।” আর এ ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বাচ্চাদের সচেতন করতে ক্লাসরুমের ভিতরেও এই নিয়ে আলোচনা দরকার, বলছেন তিরথ। জাঙ্ক ফুড রুখতে কিছু স্কুল অবশ্য সতর্ক।
বিড়লা হাইস্কুলের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর অরুন্ধতী রায় যেমন বললেন, “আমাদের স্কুল-ক্যান্টিনে ‘জাঙ্ক ফুড’ ঢুকতে দেওয়া হয় না। বাচ্চারা এ সব খাচ্ছে কি না, খেয়াল রাখা হয় সে দিকেও।” ‘জাঙ্ক ফুড’ নিয়ে তিরথের অনুরোধ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। |