দরদর করে ঘামছিলেন অশীতিপর মানুষটি। গলায় ক্যানসার। যন্ত্রণায় কথাও বলতে পারছেন না। পাশে বসে একটানা হাতপাখা নিয়ে হাওয়া করে যাচ্ছিলেন তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রী। কিন্তু অসহ্য গরমে সেই বাতাস কোনও কাজেই লাগছিল না।
তিনি একা নন, পাশে তাঁর মতো আরও অনেকেই এ ভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। কারণ, সেখানে মাথার উপরে ঝোলানো সব ক’টি পাখাই অচল। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসা বিভাগের আউটডোরে গত দেড় মাস এটিই ছবি।
নিজেদের নিরাপত্তার দাবি তুলে যে হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজ বন্ধ করে আন্দোলন চালাচ্ছেন, রোগীদের ন্যূনতম এই পাওনার ব্যাপারটি কেন এত দিন তাঁদের নজরে আসেনি, সে প্রশ্ন করা হলে আন্দোলনকারীদের কেউই মুখ খুলতে চাননি।
|
বন্ধ পাখা। —নিজস্ব চিত্র। |
আর জি করে অঙ্কোলজি বিভাগের মেজেনাইন ফ্লোরে আউটডোর বসে। প্রতি দিন কয়েকশো রোগী এখানে আসেন। নিচু ঘরে একেই গরম বেশি। ভবনটি চালু হওয়ার সময়ে গোটাটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা ছিল, তাই জানলাও কম। কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা তো দূরের কথা, পাখাগুলিও চালু রাখা যায়নি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দেড় মাস আগে পাখাগুলি খারাপ হয়। পূর্ত দফতরের কর্মীদের বারবার বলা সত্ত্বেও এত দিনে তা সারানো যায়নি।
ক্যানসার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “শুধু আউটডোর নয়, রোগীদের রেডিয়েশন দেওয়া হয় যে ঘরে, সেখানকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রগুলিও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। রোগীদের ভোগান্তি তো হচ্ছেই, পাশাপাশি আমরা ভয় পাচ্ছি, যে কোনও দিন যন্ত্র বিগড়ে যাবে। তখন রেডিয়েশন বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া অন্য পথ থাকবে না।”
শুক্রবার সকালে আউটডোরে অসিত সরকার নামে এক রোগী অজ্ঞান হয়ে যান। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর গোটা শরীরে। প্রথমে ফুসফুস, তার পরে খাদ্যনালী এবং লিভারে। তাঁর মেয়ে শ্রাবণী সরকার বললেন, “আজ সকাল থেকেই বাবার শরীর খুব খারাপ হয়েছিল। হাসপাতালে এসে গরমের মধ্যে বসে থাকতে থাকতে বাবা দু’বার বমিও করেন। তার পরে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যান।”
কেন পাখাগুলি দেড় মাসেও সারানো গেল না? পূর্ত দফতরের কর্মীদের বক্তব্য, গরমকালে একসঙ্গে অনেক পাখা সারাতে সময় লাগাই স্বাভাবিক। ক্যানসারের মতো বিভাগে যেখানে এমননিতেই প্রবল রোগ যন্ত্রণা সইতে হয়, সেখানে কি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করা যায় না? পূর্ত দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “শুধু সারানো তো নয়, বেশ কয়েকটি পাখা বদলাতেও হবে। তার জন্য টেন্ডার ডাকতে হবে। সব কাজ মিটতে শীতকাল এসে যেতে পারে।” |