আসছে আইন, কাউন্সিলও কঠোর
মুখ্যমন্ত্রী কড়া হতে কাজে ফিরল আরজি কর
ফেব্রুয়ারি আর মে মাসের দু’টি ধর্মঘট ও বনধে কড়া হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে কাজ হয়েছিল। ফের তাঁর কঠোর মনোভাব দেখা গেল জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির ক্ষেত্রে। আর তাতেই উঠে গেল ওই কর্মবিরতি আন্দোলন।
মমতার নেতৃত্বাধীন স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল মেডিক্যাল কাউন্সিলও। সেই জোড়া চাপেই তিন দিন ধরে চলা কর্মবিরতি শুক্রবার তুলে নিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের সমর্থনে এ দিন কর্মবিরতি আন্দোলন শুরু করেছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশও। জোড়া চাপের মুখে পড়ে তাঁরাও আন্দোলন তুলে নিয়েছেন।
জোড়া চাপ কেমন?
রোগীদের স্বার্থ দেখা যাঁদের প্রধান দায়িত্ব, সেই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি রুখতে এ বার আইন করার কথা ভাবছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী শীঘ্রই এই নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আর রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল ঠিক করেছে, যে-সব চিকিৎসক কর্মবিরতিতে যোগ দেবেন, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করবে তারা। সেই সব চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেতে সমস্যা হতে পারে। নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার থেকে আর জি করে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া ৩০০ জুনিয়র ডাক্তারের কাছে এই দু’টি কঠোর বার্তা পৌঁছে যায় অচিরেই। তার পরেই এ দিন বিকেলে তুলে নেওয়া হয় কর্মবিরতি আন্দোলন।
তখন কর্মবিরতি। অসহায় রোগী, দিশাহারা পরিজন।
শুক্রবার আর জি কর হাসপাতালে প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, কর্মবিরতি না-উঠলে সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। কিন্তু সেই হুঁশিয়ারিতে কাজ না-হওয়ায় এ দিন সকালে হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। আর জি করের অধ্যক্ষ পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তাঁর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক বসে। কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র না-বেরোনোয় স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তাকে ঘরে আটকে রাখেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। একই ভাবে তাঁরা ডিসি (উত্তর) গৌরব শর্মাকেও ঘরে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তিন দিন ধরে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের ঢুকতেও বাধা দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা।
এই আন্দোলনে তিনি যে বিরক্ত, এ দিন মহাকরণে স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে ডেকে পাঠিয়ে তা জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। অবিলম্বে আন্দোলন না-উঠলে তিনি নিজেই যে কড়া ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হবেন, তা-ও জানানো হয় স্বাস্থ্যসচিবকে। সেই বার্তা পৌঁছে যায় আর জি করে অধ্যক্ষের ঘরে বৈঠকে বসা স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকতার্র কাছেও। জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর মনোভাবের কথাও আন্দোলনকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এ দিন দুপুর থেকে ওই ডাক্তারদের সমর্থনে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। রাজ্য সরকার যে কড়া হচ্ছে, সেই খবর পৌঁছতে কর্মবিরতি উঠে যায় দুই হাসপাতালেই।
জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তার দাবিটি অবশ্য মেনে নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যসচিব জানান, চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হাসপাতালে নিরাপত্তাকর্মী এবং সিসিটিভি-র সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। আর জি করের জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে তাপস রায় বলেন, “নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই আমরা এই পথে নামতে বাধ্য হয়েছি। যে-কোনও ছোটখাটো ঘটনায় রোগীর বাড়ির লোকেরা আমাদের গায়ে হাত তুলছেন।” আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। আর কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে যখন-তখন রোগীর বাড়ির লোক হিসেবে যে-কেউ ওয়ার্ডে বা জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়তে না-পারেন। তাপসবাবু বলেন, “কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন।”
মুষ্টিমেয় কিছু লোকের আচরণের জন্য অসংখ্য রোগীকে বিপাকে ফেলে তাঁরা কি ক্রমশ সাধারণ মানুষের আস্থা হারাচ্ছেন না? তাপসবাবুর জবাব, “আন্দোলন না-করলে আমাদের দাবিও মানা হত না।”
স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা জানান, তাঁরা জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। তাই নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা করছেন। সেই সঙ্গে সরকার কর্মবিরতি রুখতে কড়া হচ্ছে। সুশান্তবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে আইন তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। হাউসস্টাফদের উপরে সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য তাঁদেরও চুক্তির ভিত্তিতে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।”
গত দু’দিনের মতো শুক্রবারেও বহু রোগী আর জি কর থেকে চিকিৎসা না-পেয়ে ফিরে গিয়েছেন। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে আসা রোগীদেরও হেনস্থা হতে হয়েছে। বরাহনগরের বাসিন্দা উমা ধাড়ার অভিযোগ, তিন দিন ধরে তিনি এক্স-রে করানোর জন্য হাসপাতালে আসছেন। তিন দিনই জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। বিরক্ত উমাদেবী বলেন, “মাঝেমধ্যেই তো শুনি, ওঁরা আন্দোলন করছেন। তা হলে কাজটা করেন কখন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.