মুখ্যমন্ত্রীর ‘স্পেশ্যাল প্যাকেজে’ প্রায় সব কাজই কেন্দ্রীয় বরাদ্দে
কেশিয়াড়ি-নয়াগ্রামের মধ্যে সুবর্ণরেখা নদীর উপর সেতু তৈরি থেকে শুরু করে জঙ্গলমহল এলাকায় ছাত্রী-আবাস, নতুন বিদ্যালয়, প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি— মুখ্যমন্ত্রীর ‘স্পেশাল প্যাকেজে’র প্রায় সব প্রকল্পেই অর্থ আসবে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্র্যান্ট ফান্ড’ (বিআরজিএফ) থেকে। এ জন্য পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়েছে এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) উত্তম পাত্র। তিনি বলেন, “গত ১৮ মে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিশেষ বৈঠকও হয়েছে।”
রাজ্যের বেহাল আর্থিক পরিস্থিতিতে কেন্দ্র প্রয়োজনীয় সাহায্য করছে না বলে প্রায় নিয়মিতই অভিযোগ করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয়স্তরের মন্ত্রীরা। এই বিষয়টিকে নিয়ে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের প্রধান শক্তি কংগ্রেসের সঙ্গে শরিক তৃণমূলের মন-কষাকষি এমন পর্যায়ে যে, জোট ভেঙে যাওয়ারও উপক্রম হচ্ছে। যেমন রাজ্যের ৬টি পুরসভার আসন্ন ভোটেও কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়নি তৃণমূলের। তবে জঙ্গলমহলের জন্য কেন্দ্র অনেকখানিই দরাজ-হস্ত। মাওবাদী প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে কেন্দ্রও সমান উদ্বিগ্ন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মাওবাদী কার্যকলাপকে দেশের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা’র ক্ষেত্রে ‘সবচেয়ে বড় বিপদ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। সেই সূত্রেই দেশের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলির জন্য বিশেষ সাহায্য-প্রকল্প রয়েছে কেন্দ্রের। মুখ্যমন্ত্রীর ‘স্পেশাল প্যাকেজে’র জন্য অর্থ-বরাদ্দেও কার্পণ্য করছে না কেন্দ্র।
ক্ষমতায় এলে জঙ্গলমহলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সেই প্রতিশ্রুতি পালনে পদক্ষেপও করেছেন। ইতিমধ্যে লালগড়, ঝাড়গ্রামে একাধিকবার এসে গুচ্ছ-গুচ্ছ উন্নয়ন-প্রকল্পের কথা ঘোষণাও করে গিয়েছেন। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, এই স্পেশাল-প্যাকেজের প্রকল্পগুলি রূপায়িত হলে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হবে। মূলত, অনুন্নয়নের জন্যেই এখানে মাওবাদীদের প্রভাব-বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে নানা মহলেরই বক্তব্য। অবস্থা পাল্টাতে নতুন সরকার জঙ্গলমহল নিয়ে নতুন করে উন্নয়ন-পরিকল্পনা তৈরি করে। এখানে আদিবাসী মানুষের বসবাস বেশি। এলাকায় স্বাস্থ্য-পরিষেবা একেবারে ভেঙে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থারও তেমন উন্নয়ন হয়নি। নেই পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা। অনেক এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলেরও ব্যবস্থা নেই। অথচ, আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য অনেক প্রকল্পই রয়েছে। যে-সব প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দও করে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্যাকেজ’ও সেই সূত্রেই কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্যাকেজে’র মধ্যে রয়েছে সুবর্ণরেখা-সেতু। প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা। প্রয়োজনীয় অর্থ আসবে ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্র্যান্ট-ফান্ড (বিআরজিএফ) থেকেই। আড়াই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। ৫০টি ছাত্রী-আবাস তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে। এক-একটি আবাসে ৫০ জন ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা থাকবে। এ ক্ষেত্রে হয় সংশ্লিষ্ট স্কুলকে জমি দিতে হবে, নচেৎ পাশে কোনও খাসজমি থাকলে সেখানেই হস্টেল তৈরি হবে। জঙ্গলমহল এলাকায় ছাত্রাবাস-সহ নতুন ১০টি স্কুল তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন স্কুল তৈরির জন্য ৩ থেকে ৫ একর জমি প্রয়োজন। ইতিমধ্যে জমির খোঁজ শুরু হয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় অর্থ আসবে বিআরজিএফ থেকেই। তবে শালবনি, লালগড়, নয়াগ্রামে কলেজ তৈরির ব্যয়ভার বহন করতে হবে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরই। ২০১৪ সালের মার্চের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা। নয়াগ্রাম ও শালবনির ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। লালগড়ের ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা।
তবে, রামগড়ে প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনার অর্থ জোগাবে কেন্দ্রই। এ ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৬৮ লক্ষ ১৪ হাজার। ৩.২ একর জায়গার উপর কেন্দ্রটি তৈরি হবে। শালবনিতে আইটিআই তৈরিরও কথা রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য খবর, রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতর থেকে এ নিয়ে এখনও বিস্তারিত নির্দেশ আসেনি। জঙ্গলমহল এলাকার ১৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়ন এবং এই কেন্দ্রগুলিতে ১০টি করে শয্যা রাখার প্রস্তাব রয়েছে। তবে, এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে বিআরজিএফ থেকেই প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামে স্পোটর্স অ্যাকাডেমি তৈরির খরচ অবশ্য বহন করবে রাজ্যের ক্রীড়া দফতরই। এ ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে বিআরজিএফ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রায় ২৫ কোটি টাকা পেয়েছিল। এ বার প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পেতে চলেছে। এর পরেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা-মতো সময়ে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না, সেটা নিয়ে অবশ্য কিছুটা সংশয় থাকছেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.