|
|
|
|
|
|
|
হেঁশেল থেকে |
গরমেও ভূরিভোজ
সুচন্দ্রা ঘটক |
|
যে কোনও ঋতুর উদ্যাপনে মানানসই বাহারি রান্নার গল্প এখনও প্রচলিত ঠাকুরমা-দিদিমাদের মুখে মুখে। যেমন নানা স্বাদের পিঠে-পুলিতে ভরে যেত শীতের হেঁশেল, তেমনই গরমের উপযোগী সুস্বাদু রকমারি আমিষ-নিরামিষ রান্না হত শুধু এক কাঁচা আমের ব্যবহারেই। পাশাপাশি, এ সময়ে বিশেষ গুরুত্ব পেত লাউ-চালকুমড়োর মতো কিছু ‘ঠান্ডা’ সব্জি।
ফ্রিজ আসার আগে গ্রীষ্মকালের খাওয়াদাওয়া নিয়ে নানা গল্প এখনও শোনা যায় বিভিন্ন বাঙালি বাড়িতে। ঠাকুরমার কাছে শোনা তেমনই এক গল্প মনে পড়ে। গরমে নাজেহাল হয়ে যখন বাড়ির কেউই প্রায় কিচ্ছুটি মুখে দিতে নারাজ, তখন উদ্বিগ্ন হয়ে নতুন উপায় বার করলেন পরিবারের বড়গিন্নি।
ছেলেকে বললেন, একটা বড়সড় লাউ নিয়ে আসতে। একেই কিছু খেতে ইচ্ছে করে না, তার উপরে আবার লাউয়ের মতো অখাদ্য সব্জি শুনে তো খুব বিরক্ত ছোকরা।
তবু মায়ের কথা ফেলতে না পেরে, বাজার থেকে একটা মস্ত লাউ হাজির হল বাড়িতে। রাতে লেবু সহযোগে পান্তা ভাতের সঙ্গে রাঁধুনি দিয়ে লাউ আর টক-ঝাল করে লাউয়ের পাতা ভাজা খেয়ে নাকি মুগ্ধ সক্কলে। দিনভর আপিসে খাটাখাটনির পরে এমন মেনু পেয়ে খুশ কর্তাও। গিন্নি খালি হেসে বললেন, ‘সব রান্না খাওয়ারই একটা উপযুক্ত সময় থাকে!’ পরদিন থেকে লাউয়ের ডালও নাকি ‘হিট’ হয়ে গেল বাড়িতে।
নানা সময়ে দাদুর কাছে গল্পের ছলে শোনা যেত তাঁর শাশুড়ির জামাইষষ্ঠীর আপ্যায়নের সুখ্যাতি। বলা প্রয়োজন, দাদু একদম হাল্কা রান্না পছন্দ করতেন।
ভাজা জিনিস নিজেও খেতে চাইতেন না, নাতিনাতনিদেরও খেতে দিতেন না। বিয়ের প্রথম বছরেই দিদিমার মায়ের কাছে নাকি আবদার করে বলেছিলেন, গরমের মধ্যে জামাইষষ্ঠীর ভোজের আয়োজন না করতে। শাশুড়ি অভয় দিয়ে জানালেন, ও সব নিয়ে কোনও চিন্তা করতে হবে না বাবাজীবনকে।
নির্দিষ্ট দিনে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে খেতে বসে তো মাথায় হাত দাদুর। আয়োজন তো কিছু কম হয়ইনি, বরং তা অতিরিক্ত বললেও ত্রুটি থেকে যাবে। প্রতিবাদ করে লাভ নেই দেখে চিংড়ি-মাংসের ভোজে বাধ্য হয়ে হাত লাগালেন নতুন জামাই। কিন্তু অল্প চেখেই এক্কেবারে অবাক তিনি। ডাল-ভাজা থেকে শুরু করে শেষ পাত পর্যন্ত সবই একেবারে অভিনব। ডালের সঙ্গে সেই সুস্বাদু ডাবের তরকারির কথা শেষ জীবন পর্যন্ত বলেছেন দাদু। চিংড়ির চচ্চড়ি রাঁধা হয়েছিল পুদিনা পাতা দিয়ে। পোস্তোর বড়া থেকে ভেটকির পাতুরি, মাংসের কোরমা কাঁচা আমের ছোঁয়া পেয়ে হয়ে উঠেছিল একেবারে সময়ের সঙ্গে মানানসই। ওই বাড়ি জামাই-আদর নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন দাদু।
বাঙালি হেঁশেল থেকে এখন প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে সেই সব রন্ধনপ্রণালী। তপ্ত এই মরসুমকে ভোজনরসিক বাঙালির কাছে একটু সহনীয় করে তুলতে এক অন্য রকম উদ্যোগের দেখা মিলছে শহরে। ফেলে আসা দিনের হারিয়ে যাওয়া কিছু বাঙালি পদ দিয়ে এ গ্রীষ্মকে কলকাতাবাসীর কাছে সুস্বাদু করে তুলতে চাইছেন ‘ওহ্! ক্যালকাটা’র শেফরা।
টক ডাল, দই পটল, দই মুরগি থেকে শুরু করে কাঁচা আম দিয়ে নানা রকম আমিষ রান্না সেখানকার এ বারের গ্রীষ্মের খাবারের উৎসবের বৈশিষ্ট্য। গরমের মধ্যে কোনও এক দুপুর অথবা সন্ধ্যার এই ভোজকে স্মরণীয় করে রাখতে শেষ পাতে থাকছে অভিনব ফিউশন ‘কাঁচা আমের মুস’, ‘আমের রসগোল্লার মুস’।
|
|
ছবিগুলি ‘ওহ্ ক্যালকাটা’-র সৌজন্যে |
|
|
|
|
|