|
|
|
|
|
|
পথে বিপদে শহর |
‘সুলভ’ সুলভ নয় |
কৌশিক ঘোষ |
পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যায়নের জন্য শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কলকাতা পুরসভা ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ শৌচাগারের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু জমি জটে আটকে রয়েছে সেই কাজ। এ ছাড়াও, নির্মিত অনেক শৌচাগার প্রশাসনিক জটিলতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে হস্তান্তর করা যায়নি।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) অতীন ঘোষ বলেন, “শহরের অনেক জায়গায় ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও জমি-সমস্যায় আটকে রয়েছে কাজ। পুরসভা ও বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ব্যাপারে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গেও কথা হয়েছে। পুরসভার সার্ভে দফতরকেও তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছি।” এই দফতরের এক আধিকারিক জানান, কমিটি গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
|

বিজয়গড় |
অন্য দিকে কোথাও কোথাও পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার পরেও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় তা চালু করা যাচ্ছে না।
সে ক্ষেত্রে, শৌচাগার সরানোর জায়গা পেতেও সমস্যা হচ্ছে। এমনকী, যেগুলি চলছে সেগুলির মধ্যে কয়েকটিতে রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা রয়েছে। পরিকাঠামোর অভাবে কিছু শৌচাগার নির্মাণে দেরিও হয়েছে।
শৌচাগার নির্মাণ করার পরে তা চালু করার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে হস্তান্তর করে পুরসভা। তার বিনিময়ে পুরসভা সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে অর্থও পায়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির আবেদনপত্রের ভিত্তিতেই পুরসভা অনুমতি দেয়। পুর কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর আগে এই ধরনের সংস্থাগুলি থেকে ‘ভ্যাট’ নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর পরেই অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই ধরনের শৌচাগার চালাতে নারাজ হন। তাঁদের বক্তব্য, শহর পরিষ্কার রাখতে ‘পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট’ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শৌচাগারগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণ করতেই এই অর্থ লাগে। পুরসভাকে টাকাও দেওয়া হয়। এই শৌচাগারগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা ‘ব্যবসা’ নয় বলে তাঁদের দাবি। ফলে ‘ভ্যাট’ দেওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুরসভা পদ্ধতি সরলীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অতীনবাবু জানান। কলকাতা পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, শহরে ‘পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেটের’ সংখ্যা ২২৫। এর মধ্যে অনেকগুলি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে কলকাতা পুরসভা শহরে ৩০০টি ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ শৌচাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছে। শহর জুড়ে মোট ১৭০টি শৌচাগার নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৬৬টি শৌচাগার নির্মাণের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। শহরের সংখ্যালঘু এলাকায় শৌচাগার নির্মাণে প্রাধান্য দেওয়া হবে। ৩৩টি শৌচাগারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দও করেছে বলে মেয়র পারিষদ জানান। পুরসভা-সূত্রে জানানো হয়েছে, শৌচাগারপিছু প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
|

কসবা |

প্রিন্স আনোয়ারশাহ রোড |
|
শৌচাগারগুলির ক্ষেত্রে কি নজরদারির অভাব ছিল? অতীনবাবু বলেন, “কিছুটা তো ছিলই। গত বোর্ডের আমলে কোনও নিয়মকানুন না মেনেই বিভিন্ন সংগঠনকে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু সেগুলি ঠিক চলছে কি না তা নিয়ে নজরদারি ছিল না। পরে অনেক সংস্থারই ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকী, তাঁরা পুরসভাকে কোনও টাকাও দেয়নি। পুরসভা গত কয়েক বছরে এই সমস্ত সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা পায়। বর্তমানে, টেন্ডারের মাধ্যমেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠগুলিকে শৌচাগার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কলকাতা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের বিরতি দত্ত বলেন, “আমার ওয়ার্ডে উল্টোডাঙার কাছে ক্যানাল ইস্ট রোডে একটি ‘পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট’ তৈরি হয়ে পড়ে আছে। সেটা চালু করাই যাচ্ছে না। পুর কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও কাজ হয়নি।” দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গড়ে এ রকমই একটি শৌচাগার পড়ে আছে। ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের রেখা দে বলেন, “বহু দিন পড়ে রয়েছে। পুরসভা দ্রুত খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।” ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলর কাউন্সিলর মালা মহলানবিশ বলেন, “আমার ওয়ার্ডে সাউথ সিটি মলের কাছে এবং যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের কাছে ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ খোলার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। জায়গার অভাবে আটকে রয়েছে। আনোয়ার শাহ রোডে একটি শৌচালয় নির্মাণের কাজ এক বছরের আগে শুরু হলেও পরিকাঠামোগত সমস্যায় শেষ করতে দেরি হচ্ছে।” |
 |
বেলেঘাটা |
৯১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দীপঙ্কর দে-র অভিযোগ, “কসবা রথতলার কাছে এই ওয়ার্ডের শৌচাগারের কোনও রক্ষণাবেক্ষণই হচ্ছে না। পুরসভাকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত গ্যালিফ স্ট্রিট খালপাড়েও একটি শৌচাগারে একই অবস্থা বলে তৃণমূল কাউন্সিলর স্মরজিৎ ভট্টাচার্য জানান। পাশাপাশি, বেহালার অনেক ওয়ার্ডেও ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ নির্মাণে জায়গার অভাব থাকার অভিযোগ এসেছে।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুলভ নিয়ে সমস্যা রয়েছে ঠিকই। যেগুলি নির্মাণ করা যায়নি সেগুলি যাতে দ্রুত নির্মাণ করা যায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য দিকে, জায়গার সমস্যার সমাধানও দ্রুত করার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” |
ছবি: পিন্টু মণ্ডল ও শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
 |
|
|