ব্যাগ গুছিয়ে...
নীল শহরের কাহিনি
গোটা শহরটা যেন নীলিমায় নীল। নিঝুম নীলরঙা চাঁদনি রাতের মায়াজাল আনাচে-কানাচে। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম হলদে বালুকণা গোটা শরীরে। শহরের বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে মাঝখানে চলে এসেছি। পুরনো খোলস ছেড়ে আধুনিক আলো-ঝলমলে শপিং মল, কফি শপ, রেস্তোরাঁর রাজপুতানার গেটওয়েতে। আধুনিক রেস্তোরাঁয় রাজস্থানী খানা পিওর ভেজ। তার পরে রাজকীয় রাত। দূরে ভেপার ল্যাম্পের আলোয় জ্বলজ্বল করছে একটা দুর্গপাহাড়ের মাথায় চৌকিদারি চোখে যেন রাতপাহারা দেয়। তারই কোলে নীল চাঁদের জাফরি-কাটা আলোয় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গোটা শহরটা!
বাতাসে ইতিহাস ফিসফিস করে। রাতের স্বপ্ন জুড়ে রাজারানি, ঘোড়া, হাতি, কামান, যুদ্ধের ফ্ল্যাশব্যাক। ঘুম ভাঙতেই শহরটা আড়মোড়া ভাঙে। রাঠোর সেনাপতি রাও যোধার হাতে রাজস্থানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর যোধপুরের পত্তন হয় ১৪৫৯-এ।
শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ১২৫ মিটার উঁচু গোদাগিরি টিলার উদ্দেশে রওনা দিলাম। হলদে যোধপুরী অটোরিকশা নামিয়ে দিল মেহরানগড় দুর্গের পায়ের কাছে। বহু সিনেমা, বিজ্ঞাপনের চেনা লোকেশন। বাইরেটা দেখে বোঝার উপায় নেই ভিতরের গ্ল্যামারটা। টিকিট কেটে অডিও গাইড কানে নিয়ে দুর্গের আনাচে-কানাচে। উর্দিধারী রাজপেয়াদা যত্রতত্র। সোনার পালকি, রাজ সিংহাসন, ফুলমহল, মোতিমহল, শিসমহলের বিলাসী বৈভব সযত্নে রক্ষিত। পাহাড়চুড়োর মেহরানগড়ে এত ঐশ্বর্য আছে জানতে পারলে নিশ্চয়ই নকল ডক্টর হাজরা সোনার কেল্লার মরীচিকার পিছনে ছুটে মরতেন না! ঝিলকি মহলের রঙিন কাচের জানলার পিঠে এসে পড়েছে রোদ, রঙিন আলোয় আরও রঙিন হয় সুবিশাল সভাঘর, বাতিদান এবং সোনার রাজসিংহাসন।
গোগ্রাসী চোখে নানান মহল, জাফরির নকশা, অলিগলিতে চক্কর কাটতে কাটতে সোজা দুর্গের মাথায়। সেখানে সাজানো রয়েছে কামান। ছোট বড় নানান আকারের। অনেক নীচে যোধপুর শহর। প্রতি বাড়ির শরীরে নীল রঙের পোঁচ। ৪৫৭ মিটার লম্বা ও ২২৮ মিটার চওড়া এই দুর্গ ১৮০৬-এ নির্মাণ করেন মহারাজ মান সিংহ। যোধপুরের রাজপাটে নীল রং রাজপছন্দ ছিল। তাই ‘ব্লু সিটি’। হালকা কুয়াশা ব্লু সিটি-র শরীরে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। মেহরানগড়ের ঠিক উলটো দিকে শ্বেতপাথরের স্মৃতিসৌধ ‘যশোবন্ত থাড়া’। ১৮৯৯-এ রাজা যশোবন্ত সিংহের বিধবা রানি সৌধটি নির্মাণ করেন। হঠাৎ ভেসে এল রাজস্থানি তারযন্ত্রের মরু-রোমান্সের সুর। শ্বেতপাথরের সৌধে অসাধারণ কারুকার্য।
এ বার কমলা পাথরের ইতালীয় স্থাপত্যের অন্দরমহলে। উমাইদ ভবন প্যালেস। এক দিকে রাজপ্রাসাদ, অপর দিকে হেরিটেজ হোটেল। সোনার চেয়ার, অস্ত্রসম্ভার, বেলজিয়াম কাঁচের রাজবৈভবে বুঁদ হয়ে থাকতে হয়। ব্রিটিশ রয়্যাল আর্কিটেক্ট-এর প্রেসিডেন্ট স্বয়ং নকশা করেছিলেন আর ৩০০০ শ্রমিক ১৫ বছরে বহু যত্নে এর নির্মাণ শেষ করে ১৯২৯-এ। এ বার শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে রাজপুতানার রাজধানী মান্ডোর। বাগিচাময় রঙিন ফুলের অন্তরঙ্গতায় রাজা-মহারাজার সমাধিস্থল। মরুশহরে সবুজ স্নিগ্ধতায় মোড়া। পাখির কলতান। আলোকময় শহরে আরও এক রাজকীয় রাত চুপিসাড়ে নেমে আসে।
পরদিন ভোরে যোধপুর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরের ওঁশিয়ায়। প্রাচীন জনপদ আর মন্দিরনগরী। এক সময়ের নামকরা বাণিজ্যনগরী। জৈনদের তীর্থনগরী আজও অল্প চেনা। রাস্তার দু’পাশে বালির পরত ছাড়িয়ে ৬৫ কিলোমিটার গেলেই মন্দিরনগরীতে প্রবেশ। অসাধারণ সব মন্দির, যার কারুকার্য ও শিল্পসুষমা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সব জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে ঢোকা যায় না। সচিয়া মাতার মন্দিরটি সত্যিই অসাধারণ। এক দিকে নীলচে যোধপুরী রোমান্স, অন্য দিকে ওঁশিয়ার মন্দিরনগরীর নীরব নিঃশ্বাস স্মৃতির মণিকোঠায় অনেক দিন জেগে থাকে। মেহরানগড়ের ছাদের রোদ-পোহানো মৃত কামান থেকে শুরু করে প্রাসাদের পালকি, হাওদা, সিংহাসন, ইতালীয় স্থাপত্যের ছোঁয়া, কাঠপুতলি, অতি রঙিন পোশাকের মানুষজন, পাহাড়চুড়োর বিপুল ঐশ্বর্যভাণ্ডারের কথায় কোনও সম্মোহিত জাতিস্মরের পূর্বজন্মের স্মৃতির গভীর থেকে অস্ফুট উচ্চারণে উঠে আসতেই পারে যেন এক ধূ-ধূ রেগিস্তানের গেটওয়ের নাম, যোধপুর।
প্রেসিডেন্ট স্বয়ং নকশা করেছিলেন আর ৩০০০ শ্রমিক ১৫ বছরে বহু যত্নে এর নির্মাণ শেষ করে ১৯২৯-এ।
এ বার শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে রাজপুতানার রাজধানী মান্ডোর। বাগিচাময় রঙিন ফুলের অন্তরঙ্গতায় রাজা-মহারাজার সমাধিস্থল। মরুশহরে সবুজ স্নিগ্ধতায় মোড়া। পাখির কলতান। আলোকময় শহরে আরও এক রাজকীয় রাত চুপিসাড়ে নেমে আসে।
পরদিন ভোরে যোধপুর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরের ওঁশিয়ায়। প্রাচীন জনপদ আর মন্দিরনগরী। এক সময়ের নামকরা বাণিজ্যনগরী। জৈনদের তীর্থনগরী আজও অল্প চেনা। রাস্তার দু’পাশে বালির পরত ছাড়িয়ে ৬৫ কিলোমিটার গেলেই মন্দিরনগরীতে প্রবেশ। অসাধারণ সব মন্দির, যার কারুকার্য ও শিল্পসুষমা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সব জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে ঢোকা যায় না। সচিয়া মাতার মন্দিরটি সত্যিই অসাধারণ। এক দিকে নীলচে যোধপুরী রোমান্স, অন্য দিকে ওঁশিয়ার মন্দিরনগরীর নীরব নিঃশ্বাস স্মৃতির মণিকোঠায় অনেক দিন জেগে থাকে। মেহরানগড়ের ছাদের রোদ-পোহানো মৃত কামান থেকে শুরু করে প্রাসাদের পালকি, হাওদা, সিংহাসন, ইতালীয় স্থাপত্যের ছোঁয়া, কাঠপুতলি, অতি রঙিন পোশাকের মানুষজন, পাহাড়চুড়োর বিপুল ঐশ্বর্যভাণ্ডারের কথায় কোনও সম্মোহিত জাতিস্মরের পূর্বজন্মের স্মৃতির গভীর থেকে অস্ফুট উচ্চারণে উঠে আসতেই পারে যেন এক ধূ-ধূ রেগিস্তানের গেটওয়ের নাম, যোধপুর।

কোথায় থাকবেন

সরকারি ও বেসরকারি প্রচুর হোটেল ও লজ রয়েছে। সিজন বুঝে দাম বাড়ে বা কমে।
কখন যাবেন
সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আবহাওয়া ভাল থাকে।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে বা বিমানে যোধপুর। অটো বা গাড়ি ভাড়া করে শহরটা ঘুরে
দেখা যায়। ওঁশিয়া থেকে আলাদা গাড়ি ভাড়া করতে হয়।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.