বছর দুয়েক আগে ডাচদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হয়েছিল ডেনমার্ককে হারিয়ে। জোহানেসবার্গে ড্যানিশদের বিরুদ্ধে ২-০ জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই বিশ্বকাপ। যার শেষ হয়েছিল ফাইনালে স্পেনের কাছে হার দিয়ে। ফাইনালে যা-ই হোক, এ বারের ইউরো অভিযানে প্রথম ম্যাচের আগে তাই বিশ্বকাপের অ্যাকশন রিপ্লের আশায় কমলা জার্সি।
দু’বছর আগে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যে দল নামিয়েছিলেন ডাচ কোচ বার্ট ফান মারউইক, শনিবারের দলের বেশির ভাগ মুখই তার মধ্যে থেকে গিয়েছে। লক্ষ্যও একবড় ট্রফির খরা মেটানো। যে খরা দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে। ট্রফির স্বপ্ন দেখিয়েও চব্বিশ বছর কোনও বড় জয়ের স্বাদ পায়নি অরেঞ্জ দল। ১৯৮৮ সালে খুলিট-ফান বাস্তেনরা শেষ বার জিতেছিলেন ইউরো। তার পরে আর বড় ট্রফি আসেনি। |
এ বার কোয়ালিফাইং রাউন্ডে দশটার মধ্যে ন’টা ম্যাচে জয়, সব মিলিয়ে ৩৭টা গোল, স্যান মারিনোর বিরুদ্ধে রেকর্ড ১১-০ জয়ইউরোর প্রাথমিক পর্বে ডাচদের যা ফর্ম, এ বার ট্রফির খরা কেটে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারেন ‘টোটাল ফুটবল’-এর ভক্তরা।
সঙ্গে রয়েছে চলতি মরসুমে রবিন ফান পার্সির দুর্ধর্ষ ফর্ম। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মরসুমটাই আর্সেনাল স্ট্রাইকারের জীবনের সেরা। ডেনমার্কের বিরুদ্ধে মারউইকের ৪-২-৩-১ আক্রমণের ফলা যে তিনিই হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। যার জন্য কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ১২টা গোল করেও ক্লাস-জান হান্টেলারের বাদ পড়া প্রায় নিশ্চিত। বাদ পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে হান্টেলারের প্রকাশ্য বিরক্তি আবার তুলে দিয়েছে ডাচ ফুটবল নিয়ে সেই পুরনো প্রশ্নফুটবলারদের ইগোর কালো ছায়া কি এ বারও পড়তে চলেছে ফুটবল মাঠে?
এ বারের ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এ নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে রয়েছে জার্মানি আর পর্তুগাল। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট দলের জন্য তাই একটা ভাল শুরু যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, খুব ভাল ভাবেই জানেন অভিজ্ঞ ডাচ কোচ। তাঁদের প্রথম ম্যাচ গ্রুপের সবচেয়ে সহজ প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে হলেও তাই কোচের গলায় সতর্কতা। “ড্র হওয়ার সময়ই বলেছিলাম, আমাদের প্রথম ম্যাচটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখনও তাই বলছি,” বক্তব্য মারউইকের। তবে ডাচদের প্রতিপক্ষ ডেনমার্ককে কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ১৯৯২-এর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন অঘটন ঘটালেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এবং অঘটনের প্রধান কারিগর হতে পারেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। আয়্যাক্সের কুড়ি বছরের তারকা ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইউরোপের বড় কোনও ক্লাবই তাঁর গন্তব্য। ধারে ও ভারে কিন্তু ডাচদের তুলনায় পিছিয়ে নেই ডেনমার্ক। বিশেষ অস্ত্র অবশ্যই কোচ মর্টেন ওলসেন। যিনি বরাবর জোর দিয়ে এসেছেন ধারাবাহিকতার উপরে।
|
কমলা জার্সির বিপ্লব |
|
• টোটাল ফুটবলের জন্য ডাচরা যদি বিখ্যাত হয়ে থাকে, তা হলে কুখ্যাত ফুটবলারদের ইগোর জন্য। মনে করা হয়, সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেও ট্রফি না জেতার অন্যতম কারণ এটাই।
• ২০১০ বিশ্বকাপ রানার্স পুরো টিমটাই এ বারের ইউরোয় খেলছে। কোচও পাল্টায়নি—ষাট বছরের বার্ট ফান মারউইক।
• ডাচদের তিন তারা: স্নাইডার, রবেন, ফান পার্সি। যাঁদের মধ্যে ফান পার্সির দুর্ধর্ষ ফর্মের ঝলক এ বার দেখেছে আর্সেনাল। মিডফিল্ডে চমক দিতে পারেন বাইশ বছরের কেভিন স্ট্রুটম্যান। |
“ইউরো লম্বা টুর্নামেন্ট। আর গত ছ’মাসের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা আমরা শনিবার খেলতে যাচ্ছি”
ফান মারউইক। |
|
ড্যানিশদের ডিনামাইট |
|
• কোচ মর্টেন ওলসেন দীর্ঘ দিন টিমের দায়িত্বে। তাঁর মগজাস্ত্রকে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ ধরছে ইউরোপের সব টিমই। এটাই তাঁর কোচিংয়ে শেষ বড় টুর্নামেন্ট। তার পর নাকি দায়িত্বে আসতে পারেন লাউড্রপ।
• ধারাবাহিকতায় ডেনমার্ক দল চোখধাঁধানো। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ন’নম্বরে। পর্তুগালের আগে। আর্জেন্তিনা, ক্রোয়েশিয়ার ঠিক পরে।
• নজর কাড়তে পারেন এরিকসন, বেন্টনার এবং অ্যাগের। কুড়ি বছর বয়সী আয়াখস আমস্টারডামের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার এরিকসন এ বারের ইউরোর চমক হতে পারেন। |
“ইউরোতে এক সপ্তাহে আপনাকে তিনটে ম্যাচ খেলতে হবে। আর
ওই নির্দিষ্ট দিনে যদি আপনার ফর্ম ও ভাগ্য সহায় হয়, সব কিছু সম্ভব।’’
ওলসেন। |
|
|