ইউরোয় নতুন দুই: জোড়া ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, নেই প্রচলিত টার্গেট ম্যান
রবেনদের এ বার প্রথম চারেই
দেখছেন না ভারতের ডাচ টিডি
ভারতীয় ফুটবলের ‘ডাচ মস্তিষ্ক’কেই তাঁর ‘নিজের দল’কে নিয়ে আশাবাদী দেখাচ্ছে না।
যে দেশের কোচেরা আপাতত ভারত শাসন করছেন, যে দেশ থেকে জাতীয় কোচ আসছেন, সেই বিশ্বকাপ রানার্সদের আজ ইউরো অভিযান শুরু। কমলা ফুটবলে লাবণ্যের খোঁজ নিতে গেলে ভারতে আদর্শ লোক রব বান। নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলে দীর্ঘদিন সহকারী ছিলেন, কাজ করেছেন পি এস ভি আইন্দোভেনে। তাঁর উদ্যোগেই এখন ভারত জুড়ে ডাচ কোচ আর ৪-৩-৩ ছক।
বিশ্বকাপের সঙ্গে ইউরো কাপের নেদারল্যান্ডসের তুলনায় বসলে কী দেখছেন ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান টেকনিক্যাল ডিরেক্টর? স্নাইডার-ফান পার্সি-রবেনরা নামার আগের দিন দিল্লি থেকে সাক্ষাৎকারে বানের বিশ্লেষণ, “আমি শুধু নেতিবাচক দিকই বলতে পারি। এ বার প্রত্যাশা খুব বেশি। সবাই ভাবছে ফাইনালে টিম যাবেই, চ্যাম্পিয়নও হতে পারে ভাবছে অনেকে। এ জন্য চাপ বেশি। আমাদের দ্বিতীয় সমস্যা হল, একটা পজিশনে অনেক ফুটবলার। ১০ নম্বর পজিশনে স্নাইডার, ফান ডার ফার্ট, অ্যাফেলে অনেকে খেলতে চাইছে। ৯ নম্বর পজিশনে ফান পার্সি, হান্টেলার, কাউট।”
ডাচদের প্রধান দুর্বলতা তা হলে কী? রব বান নিজে সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে ধরছেন জার্মানি, স্পেন, সুইডেন ও রাশিয়াকে। ডাচদের পরে তাঁর নিজের প্রিয় দল ‘পজিশন প্লে পারফেক্ট অ্যাটাকিং স্টাইলের’ স্পেন। কিন্তু সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ‘সবচেয়ে ভারসাম্যের’ দল জার্মানিকে ধরছেন। নিজেদের দুর্বলতা প্রসঙ্গে ডাচ টিডির ব্যাখ্যা, “আমাদের রক্ষণ হল দুর্বলতম জায়গা। মাথিজসেন আর পিটার্সের চোটে আরও খারাপ অবস্থা। ওরাই ছিল দুটো বাঁ পায়ের ফুটবলার। অভিজ্ঞ। এখন যা অবস্থা, তাতে আমাদের ১৮ বছরের জেথ্রো উইলিয়ামসকে লেফটব্যাকে খেলাতে না হয়।”
গত চব্বিশ বছর নেদারল্যান্ডসের কোনও ট্রফি নেই। কারণটা কী? রসিকতার সুরে বানের মন্তব্য, “আমরা বিশ্বকাপে ব্রাজিল, আর্জেন্তিনা, ইংল্যান্ড, জার্মানি খেলা সত্ত্বেও দুই নম্বর দল। সেটাও একটা ট্রফি জয় কিন্তু। দ্বিতীয় কারণ হল, আমরা পেনাল্টি শু্যট আউটে বরাবর দুর্বল।”
‘কমপ্লিট ফুটবলার, গেমমেকার’ বলে এই ইউরোয় ভারতের ডাচ টিডির প্রিয় ফুটবলার ওয়েসলি স্নাইডার। তাঁর নিজের খেলার স্টাইলের সঙ্গে মিল রবেনের। পরের প্রজন্মে ভবিষ্যতের সুপারস্টার ধরেন আফেলে আর নরসিংহকে। তাঁর মন্তব্য শুনে মনে হবে, বিশ্বকাপ ফাইনালে ডাচদের অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল নিয়ে এখনও ধাঁধায়, “আমাদের কিছু প্লেয়ার প্রচুর রাফ খেলেছিল। ফাউল করেছিল। তবে আমরা কিন্তু সব সময় ইতিবাচক, সুন্দর ফুটবল খেলি। আমরাই সারা বিশ্বে একমাত্র দল, যারা সব সময় নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলি।”
সমর্থনে খামতি নেই ভক্তদের। ইউক্রেনের রাস্তায় রবেন হওয়ার চেষ্টা। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপের পরে শেষ দু’বছরে ফুটবল কী ভাবে পাল্টেছে? ক্রুয়েফ, খুলিতদের দেশের কোচের ব্যাখ্যা, “অনেক দেশ পাসিং গেম খেলছে। সময় নিচ্ছে পিছন থেকে খেলাটা তৈরি করে এগোতে। অপেক্ষা করছে প্রতিপক্ষের ভুলের জন্য। ভুল দেখলেই আক্রমণের চেষ্টা করছে।” আরও বিস্তৃত হয়ে পরের মন্তব্য, “গত চার বছরে ইউরোপে ব্যাপক স্টাইল বদলেছে। জার্মানি, এমনকী ইতালিতে বিদেশি কোচ, বিদেশি ফুটবলারের প্রভাব পড়েছে। ফলে আরও আক্রমণাত্মক হয়েছে ফুটবল। সাফল্য পেতে হলে ভাল রক্ষণ সংগঠন করতে হবে, যেমন মোরিনহো করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ওরা রক্ষণাত্মক সিস্টেমে খেলছে। ওদের দলেরই রোনাল্ডো কিন্তু অন্যতম সেরা স্কোরার হয়েছে।”
এই ইউরোয় চেলসি মডেলের প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছেন অনেক কোচ। রব বান একেবারেই দেখছেন না। অন্যদের মতো ৪-৩-৩ বা ৪-২-৩-১ বলেন না ভদ্রলোক। গোলকিপারকে সিস্টেমে রেখে বলেন ১-৪-৩-৩ বা ১-৪-২-৩-১। বললেন, “মনে হয়, আমাদের দল ১-৪-৩-৩ খেলতে খেলতে ১-৪-২-৩-১ ছকে চলে যাবে। চেলসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে ভাগ্যের জোরে। বার্সেলোনা ম্যাচেও, ফাইনালেও। চেলসির জয়ের প্রভাব ইউরোয় পড়বে না।”
এই ইউরোতে তা হলে নতুন কী দেখব? আইন্দোভেন, ফেনুর্ড, রটারডাম, টোয়েন্টেনেদারল্যান্ডসে অজস্র ক্লাবে কোচ করা প্রবীণ ডাচ কোচ পাঁচটি নতুন জিনিসের কথা বললেন।
ক) জোড়া ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
খ) কোনও টিপিক্যাল টার্গেটম্যান থাকবে না। যে কোনও অ্যাটাকার স্ট্রাইকার হিসেবে কাজ করবে।
গ) উইং ব্যাকেরা ‘উইং প্লেয়ার’ হিসেবে কাজ করবে, ফুল ব্যাক হিসেবে নয়।
ঘ) সেট পিস থেকে গোল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। ওপেনিং হিসেবে কাজ করবে।
ঙ) রেফারির সিদ্ধান্ত আবার ভাগ্য গড়ে দেবে। কেননা সেরা রেফারি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ পায় না। প্রায় ‘রাজনীতি’ ওদের নিয়োগের পিছনে কাজ করে।

ডাচদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারতীয় ডাচ টিডিকে আশাবাদী শোনাচ্ছে না। তাঁর কিন্তু প্রবল আস্থা ডাচ কোচ ফান মারউইকের উপরে। হিডিঙ্ক, ফান গাল, অ্যাডভোকাটদের মতো কিংবদন্তি কোচেদের সঙ্গে বর্তমান ডাচ কোচের ফারাকটা কী? রব বানের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ, “ও একটা দিক দিয়েই সম্পূর্ণ আলাদা। সব সময় এক দর্শন নিয়ে কাজ করে। ভাল সময়, খারাপ সময়ে দর্শন পাল্টায় না। ও এমন কিছু সহকারী নিয়েছে, যাদের উপর অনেক দায়িত্ব দিয়েছে। ওর সহকারী কুকি ভুর্ন ওর জীবনের শুরু থেকে সঙ্গে আছে। হঠাৎ হঠাৎ করে সিস্টেম বদলায় না।”
শনিবার ড্যানিশ ডিনামাইটদের বিরুদ্ধে কী পরামর্শ থাকছে তা হলে? ফান বোমেল, নাইজেল ডি জংকে একসঙ্গে খেলানো উচিত? বান একেবারে চাঁছাছোলা, “ডেনমার্কের বিরুদ্ধে নাইজেলকে খেলানো উচিত নয়। ফান ডার ফার্টকে খেলানো দরকার। তবে জার্মানির বিরুদ্ধে দরকার নাইজেলকে।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.