বিখ্যাত এক বাংলা উপন্যাসের নামটা একটু ঘুরিয়ে দিলে ম্যাচের নির্যাসটা অনায়াসে লেখা যায়: ‘একা বনাম কয়েক জন’।
এক দিকে তিনি, একা। তিনিক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। মাঝ মাঠ ধরে তাঁর বিদ্যুৎ-দৌড় ঘুম কাড়ে বিশ্বজোড়া তাবড় ডিফেন্ডারের। অদ্ভুত কায়দায় ফ্রিকিক থেকে স্কিলের আতসবাজি, মাঠে রোনাল্ডো থাকলে সব থাকে। কোচ পাওলো বেন্তো যতই বলুন, “একা রোনাল্ডোই আমাদের কাপ জেতাবে বলে ওর উপর চাপ বাড়াব না,” ঘটনা হল কোচ বেন্তো থেকে সতীর্থ নানি-মেরিলেস, সবাই ভালই জানেন ওই নামটাই টিমের আসল জয়মন্ত্র। ‘সি আর সেভেন’ ফর্মে থাকলে কাপের স্বপ্ন আছে, নইলে নেই। |
উল্টো দিকে আবার এক নয়, একাধিক। জনা কয়েক নয়, বেশ কয়েক জন। এক কথায়, ওঁত পেতে একঝাঁক জার্মান ‘বম্বার’। আর তাঁরা কে কে? মুলার, পোডোলস্কি, লাম, ওজিল, ক্লোসে, সোয়াইনস্টাইগার....। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ এই ইউরোর ফেভারিটের মুকুট ইতিমধ্যেই জার্মানদের দিয়ে দিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, ‘মৃত্যু গ্রুপ’-এ থাকলে কী হবে, জার্মানরা উঠবে ঠিকই। বরং বাকিদের জন্য মৃত্যু-পরোয়ানা নিয়ে আসবে।
এবং ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এ পর্তুগালের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচে জার্মানদের নিয়ে এই অভিমতের বিশেষ পরিবর্তন নেই!
তিন বারের ইউরো-জয়ী জার্মানদের সঙ্গে যুদ্ধে পর্তুগিজদের অভিজ্ঞতা এমনিতেই ভাল নয়। চার বছর আগের ইউরো থেকে পর্তুগালের ছুটি ঘোষণা হয়েছিল জার্মানদের হাতেই। ২০০৬ বিশ্বকাপেও তৃতীয় স্থান জার্মানি ছিনিয়ে নিয়েছিল পর্তুগাল-বধ করে। শুধু তাই নয়, ইউরোর যোগ্যতা অর্জন পর্বে ঝড় তুলে দশটার মধ্যে দশটা ম্যাচই জিতেছে জার্মানি। বলা হচ্ছে, তারুণ্যের স্পর্ধা যদি কোনও টিম দেখাতে পারে, সেটা জার্মানি। সঙ্গে যোগ হয়েছে চিরাচরিত জার্মান ঐতিহ্য। অর্থাৎ, কোনও বড় টুর্নামেন্টে হতাশ করে না জার্মানি। পর্তুগাল সেখানে উঠেছে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে। বসনিয়ার সঙ্গে কোনও মতে প্লে অফ জিতে। সাধে জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লাম ডাক দিচ্ছেন, শনিবারের ম্যাচে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে?
মাইকেল বালাকের উত্তরসুরি লামের সাফ হিসেব, “আমরা গত দু’বছর এই মুহূর্তটার জন্য খাটছি। এখন শুধু দেখাতে হবে আমরা কী করতে পারি।” রোনাল্ডো-আতঙ্ক উড়িয়ে লুকাস পোডোলস্কির আবার ভবিষদ্বানী, “রোনাল্ডো কী ভাবছে না ভাবছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জার্মানি জিতবে, আর সেটা ২-০।” সঙ্গে চোখরাঙানি, “সামনে যে-ই পড়ুক, তার সেটাই শেষ স্টেশন!” |
আর এই জাত্যভিমান ধরে রাখার মরিয়া প্রত্যয় পোডোলস্কিদের এক দিনে আসেনি। য়ুরগেন ক্লিন্সম্যানের ‘ব্যাটন’ গত চার বছর ধরে টানছেন জোয়াকিম লো, এবং টানছেন সফল ভাবে। ‘যান্ত্রিক’ ফুটবলের বদনাম মুছে জার্মান ফুটবলে এনেছেন ছন্দ। তুলে এনেছেন সোয়াইনস্টাইগার, মুলারের মতো প্রতিভাকে। সোয়াইনস্টাইগার এখন টিমের ‘হৃদযন্ত্র।’ মুলার মাটিতে যতটা ক্ষিপ্র, ততটা দক্ষ আকাশে।
সব দেখেশুনে রোনাল্ডোর মতো মহাতারকাকেও তো সুর নরম করতে হচ্ছে! শনিবারের ম্যাচ চার বছর আগের ইউরোর প্রতিশোধ ম্যাচ কি না জিজ্ঞেস করলে বলতে হচ্ছে, “ফুটবলে ও সব প্রতিশোধ হয় না। এটা ফুটবল। যুদ্ধ নয়।”
‘রণং দেহি’ মেজাজ থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া উপায় কী? ‘সি আর সেভেন’ও জানেন মাদ্রিদ-মাঝমাঠের মতো এখানে তাঁর পাশে কোনও মেসুট ওজিল নেই। নেই কোনও স্যামি খেদেইরা। ‘যুদ্ধ নয়’ তো বলতেই হবে রোনাল্ডোকে। শনিবার এঁরা যে সবাই সেন্টার সার্কেলের উল্টো দিকে। যাঁদের কাছে এই ইউরোর প্রত্যেক ম্যাচই যুদ্ধ। শুধু ফুটবল নয়!
|
সেয়ানে সেয়ানে |
মুলার
২০১০ বিশ্বকাপে সোনার বুট জয়ী জার্মান মাঝমাঠের স্তম্ভ। হেডে যেমন দক্ষ, তেমনই দু’তিন জনকে অনায়াসে ড্রিবল করে বেরিয়ে যেতে পারেন। গোল করতে পারেন, করাতেও পারেন। অ্যাটাকিং থার্ডে সবচেয়ে বিপজ্জনক। |
বনাম |
পেপে
ব্রাজিল জাত ডিফেন্ডার এখন পর্তুগিজ রক্ষণের সেরা ভরসা। আদতে সেন্টার ব্যাক, কিন্তু কার্লোস কুইরোজের জমানায় রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। এবং এই কাজেও তিনি সমান সফল। |
|
ওজিল
রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের এই তারকা জার্মান টিমের নিউক্লিয়াস। সারা মাঠ জুড়ে খেলেন। বল যেখানে, সেখানেই পৌঁছে যান ওজিল। এক কথায়, গেমমেকার। বিপক্ষের দুর্গ তছনছ করার সেরা বাজি। |
বনাম |
রোনাল্ডো
স্কিল, গতি, স্কোরিং দক্ষতায় তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি। কিন্তু মেসি যেমন এখনও আর্জেন্তিনাকে বড় ট্রফি জেতাননি, তেমনই রোনাল্ডোও পারেননি। দেশের জার্সিতে এই ইউরো রোনাল্ডোর সামনে বড় পরীক্ষা। |
|
সোয়াইনস্টাইগার
সব অর্থেই জার্মানদের ‘হৃদযন্ত্র’। পায়ে কার্যত কামানের গোলার মতো শট। বিশ্বের অন্যতম সেরা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী নিজের খেলা পাল্টে ফেলতে পারেন। |
বনাম |
নানি
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের উইঙ্গার ডান পায়ের ফুটবলার হলে কী হবে, লেফট উইং ধরে বল নিয়ে উঠতে পারেন অনায়াসে। চলতি বছরে প্রিমিয়ার লিগের যে চার ফুটবলারকে ফিফা ব্যালন ডি’ওর-এর জন্য বাছা হয়, তাতে নানিও ছিলেন। |
|
|