আশঙ্কা দুর্ভোগের
অসমাপ্ত প্রকল্প
ময় সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি হাওড়া শহরের নিকাশি উন্নয়নের কাজ।
হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য কেএমডিএ, কেএমডব্লিউএসএ, সেচ দফতর এবং এইচআইটি মিলে একটি পরিকল্পনা করে। জেএনএনইউআরএম-এর অন্তর্গত এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ৯৩ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। ২০০৭-এর শেষ দিকে কাজ শুরু হয়। ২০১০-এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
দক্ষিণ ও মধ্য হাওড়ায় পিঁজরাপোল খাল, সুতি খাল ও শেওড়াপোতা খাল সংস্কারের দায়িত্বে ছিল এইচআইটি। খরচ ধরা হয়েছিল ২৭ কোটি টাকা। এইচআইটি সূত্রে খবর, ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে বেলিলিয়াস রোডের ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা তৈরির কাজ শেষ হয়নি। এইচআইটির চেয়ারম্যান শীতল সর্দার বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারদের তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছি। পুরসভার সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। মাঝে বর্ষার জন্য কাজ বন্ধ থাকবে।
পুজোর পরে আবার শুরু হবে। এ বার জল জমলে পাম্প ব্যবহার করা হবে।” এইচআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বেলিলিয়াস রোডে স্থানীয় ও শ্রমিকের সমস্যা ছিল। ঠিকাদারও ঠিকমতো কাজ করেনি। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তবে গঙ্গা উঁচুতে থাকায় স্থায়ী সমাধান কঠিন।”
হাওড়া ড্রেনেজ চ্যানেল, মহিষধারা খাল, নাজিরগঞ্জ স্লুইস গেটের সংস্কার করছে সেচ দফতর। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে সাড়ে ২১ কোটি টাকা। সেচ দফতর সূত্রে খবর, হাওড়া ড্রেনেজ চ্যানেল ও ছ’টি ব্রাঞ্চ চ্যানেলের সংস্কার হয়েছে। নাজিরগঞ্জে গঙ্গার স্লুইস গেটগুলির সংস্কার চলছে। খালের পাড় বাঁধানোর কাজ বাকি আছে। সেচ দফতরের সচিব দেবাশিস সেনগুপ্ত বলেন, “৭০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। ড্রেনেজ চ্যানেল জলশূন্য থাকলে কাজে সুবিধা হত। বর্ষার পরে আবার কাজ হবে।” সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “২০১৩-র মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
উত্তর হাওড়া ও বালির নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি এবং তিনটি ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন তৈরির কথা ছিল কেএমডব্লিউএসএ-র। বরাদ্দ ছিল ৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু মহীনাথ পোড়েল লেন, বালি ও হনুমান জুট মিলের কাছে তিনটি পাম্পিং স্টেশনের কাজ শুরুই হয়নি। কেএমডব্লিউএসএ সূত্রে খবর, জমি সংক্রান্ত ঝামেলায় কাজ আটকে আছে। বালি পুরসভার চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “বালিতে দাঁ টেম্পল রোডে একটি ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন তৈরির কথা ছিল। কিন্তু জমি সংক্রান্ত ঝামেলায় কাজ শুরুই হয়নি। নতুন করে টেন্ডার ডাকতে হবে। পুরসভার অর্থ নেই। রানিঝিল আবার বুঁজে গিয়েছে।”
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেলগাছিয়া, লিলুয়া, বামনগাছি ও পশ্চিম হাওড়ার বালিটিকুরি, কোনা, পানপুরের নিকাশি ব্যবস্থা এবং পচা খাল, বালিটিকুরি খাল সংস্কারের কথা ছিল কেএমডিএ-র। এ ছাড়াও বেলগাছিয়ায় একটি ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন করার কথা। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে দশ কোটি টাকা। কেএমডিএ-র ডিজি রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেএমডিএ-র কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কেএমডব্লিউএস-এর তিনটি পাম্পিং স্টেশনের জন্য টেন্ডার ঢাকা হবে।”
হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “সংস্থাগুলি ঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় হাওড়াকে ভুগতে হচ্ছে।” কৃষি বিপণনমন্ত্রী তথা হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায় বলেন, “এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এইচআইটি, কেএমডিএ, কেএমডব্লিউএসএ-কে চাপ দিয়েছি। পুরমন্ত্রীও তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগের ঠিকাদার কাজ ছেড়ে দিয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এ বারের বর্ষায় যাতে অসুবিধা না হয়, সেটা দেখতে হবে।”
জেলাশাসক সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলেন, “এইচআইটি-র বেলিলিয়াস রোডের কাজ বাকি আছে। এ ছাড়া ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনের কাজও বাকি আছে। দেখছি, যাতে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়।” পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করা যায়।”

ছবি: রণজিত্ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.