বাড়ছে নজরদারি
‘মুক্তাঞ্চল’ রাজচন্দ্রপুর
ত কাণ্ড বালির রাজচন্দ্রপুরে।
কখনও গভীর রাতে অন্য এলাকা থেকে ধর্ষিতা মহিলাকে এনে ফেলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। কখনও এলাকার ঝোপ-জঙ্গল, নয়ানজুলি ও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লরি থেকে মিলছে মৃতদেহ। চুরি, ছিনতাই নিত্য দিনের ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ সবের কারণ পুলিশি নজরদারির অভাব। তবে কয়েক মাস আগে রাজচন্দ্রপুর টোলপ্লাজায় দাঁড়ানো একটি তেল ট্যাঙ্কার থেকে চালকের পচাগলা দেহ উদ্ধারের পরে অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাজচন্দ্রপুর এলাকাটি কার্যত ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে। অন্যত্র খুন, ধর্ষণ করে এনে ফেলা হচ্ছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের রাজচন্দ্রপুর এলাকায়। এলাকায় দুষ্কৃতীদের দাপটও রয়েছে।
কিন্তু কেন?
পুলিশের মতে, রাজচন্দ্রপুরে জনবসতির তুলনায় পরিবহণ সংস্থার অফিস, গ্যারাজ, লরির যন্ত্রাংশ মেরামতির কারখানা, মালপত্র ওজন করার জায়গাই বেশি। ফলে প্রতি দিন অসংখ্য লরি, ট্রাক যাতায়াত করছে। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য ধাবা। আবার রাজচন্দ্রপুর থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও একাধিক পথ রয়েছে। যেমন, এখান থেকে খুব সহজেই দুই নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে দিল্লি রোড ও বর্ধমানের দিকে যাওয়া যায়। আবার মুম্বই রোড (৬ নম্বর জাতীয় সড়ক) ধরে লিলুয়া হয়ে কোলাঘাটের দিকে যাওয়া যায়। উল্টো দিকে, বালি হল্ট হয়ে কলকাতা, হুগলির দিকেও সহজে বেরনো যায়। এ ছাড়াও রয়েছে হাওড়া ও শিয়ালদহ শাখার রেলপথের সুবিধা। ফলে দুষ্কৃতীরা সহজেই বালির বাইরে পালাতে পারে বলে দাবি পুলিশের। পুলিশ সূত্রে খবর, জাতীয় সড়ক ও বালি গ্রামাঞ্চলের ২০ কিমি এলাকার জন্য রয়েছে একটি মাত্র টহলদারি গাড়ি। তা ছাড়া গাড়িটিও দীর্ঘ দিনের পুরনো। ফলে সর্বত্র সমান ভাবে টহলদারি করা সম্ভব হয় না। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “গাড়ির সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন ভ্যানের পাশাপাশি বাইক নিয়েও টহলদারি বাড়ানো হয়েছ।”
তবে, টোলপ্লাজায় দাঁড়ানো লরি থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের পরেই অবশ্য বদলেছে ছবিটা। জাতীয় সড়কে দীর্ঘ ক্ষণ কোন গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেই তার চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ‘নো-পার্কিং’ জোনে লরি দাঁড় করালেই কেস দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি টোলপ্লাজাতেও কোনও গাড়ি পার্কিং করতে দেওয়া হচ্ছে না।
জাতীয় সড়কের উপর ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য ও গাড়ির গতিবিধির উপরে নজরদারির জন্য কয়েক মাস আগে থেকে মাইতিপাড়া ট্রাফিকগার্ড চালু করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, রাজচন্দ্রপুর এলাকায় কোন পরিবহণ সংস্থার ক’টি গাড়ি রয়েছে তার তালিকাও তৈরি হয়েছে। কারখানা ও গ্যারাজগুলিতে কখন কোন লরি, ট্রাক ঢুকছে বা বেরোচ্ছে তার রেকর্ড মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা করছে পুলিশ। অভিযানে ফলও মিলেছে বলে দাবি পুলিশের। যেমন, একটি গাড়ি চুরি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা উদ্ধার হয়। আবার রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লরির চালকের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে পিস্তল। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি ট্রাফিক ও গোয়েন্দা প্রধান অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “টোল প্লাজার ঘটনার পরেই সকাল এবং রাতে জাতীয় সড়কে অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতি দিনই অসংখ্য কেস হচ্ছে। গোটা জাতীয় সড়কে টহলদারি ভ্যানের পাশাপাশি অন্যান্য নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।”
পুলিশের পাশাপাশি নড়েচড়ে বসেছে রাজচন্দ্রপুর টোলপ্লাজা কর্তৃপক্ষও। পুলিশের অভিযোগ ছিল, টোলপ্লাজায় গাড়ি পার্কিং করতে না দেওয়ার জন্য টোল কর্তৃপক্ষকে বহু বার জানানো হয়েছিল। কিন্তু কাজ হত না। প্রতি দিনই সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত টোলপ্লাজায় সার দিয়ে পার্কিং করা থাকত লরি, ট্যাঙ্কার, ট্রাক। দ্বিতীয় বিবেকানন্দসেতু টোলওয়ে সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) সুমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সব সময়ই বেআইনি পার্কিং সরানো চেষ্টা করি। কিন্তু আগে তেমন ভাবে পুলিশের সাহায্য পেতাম না। এখন অবশ্য মাঝেমধ্যেই পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে।” অখিলেশবাবু বলেন, “সকালে ট্রাফিক পুলিশ টোলপ্লাজায় চেকিং করে। তবে ট্রাফিককর্মীর সংখ্যা কম থাকায় রাতে সমস্যা হয়। তবে এখন বালি থানার টহলদারি গাড়ি এই বিষয়টি দেখছে।”

ছবি: রণজিত্ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.