|
|
|
|
|
|
 |
মনোরঞ্জন ২... |
|
দিদি বদল |
ছবিতে ঘটছে তাঁর আগমন। নতুন অবতারে। আর প্রত্যাবর্তন ঘটছে টেলিভিশনে।
বহু চেনা ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর দিদি হিসেবে। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখোমুখি সংযুক্তা বসু |
প্রত্যাবর্তন এবং আগমন। একই সঙ্গে। পরিবর্তনও বটে।
পরিবর্তন তো হবেই। দিদি আছেন যে! কোন দিদি?
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য ফ্রান্স থেকে গরমের ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে চলেছেন রিয়্যালিটি শো-য়ের শু্যটিংয়ে।
ফেরা রিয়্যালিটি শো-য়ে। সেই পুরনো দিদি-র অবতারে। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এ।
আসা ছবিতে। গাছের আশপাশে নাচা পুরনো সেই বাংলা সিনেমার নায়িকা তিনি আর হতে চান না। নতুন ধারার বাংলা ছবিতে নতুন ভাবে আসতে চান তিনি।
কিন্তু ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ থেকে চলেই বা গিয়েছিলেন কেন? ফিরছেনই বা কেন? “আমি যাত্রায় গেলে একটা জনপ্রিয় শো বন্ধ হয়ে যাবে, সেটা হয়তো চ্যানেল চায়নি। সেই জন্যই জুনকে দিয়ে নতুন মরসুম শুরু করা হয়েছিল। আসলে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তো বলেননি যে প্রত্যেকটি সিজনেই আমাকে নেবেন। তাই নতুন মরসুমে নতুন শিল্পী এসেছিলেন,” উত্তর রচনার।
শোনা যায় রচনার ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ বিকেল সাড়ে পাঁচটার স্লটে দুর্দান্ত টিআরপি পেয়েছিল। গড়ে টি আর পি ছিল ৭.৫। প্রাইম টাইমের সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিয়েছিল। এতটাই যে অন্যান্য চ্যানেলগুলো পর্যন্ত নিজেদের প্রাইম টাইম এগিয়ে আনার কথা ভাবছিল। কানাঘুষো শোনা যায় রচনার জায়গায় যিনি নতুন ‘দিদি’ হয়েছিলেন, সেই জুন মাল্য ওই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। টি আর পি নেমে গিয়েছিল ৫এ। তাই আবার রচনাতেই ফিরতে বাধ্য হয়েছে চ্যানেল। তাই?
রচনা কিন্তু টিআরপি-র দৌড়ের দিক মাড়াচ্ছেনই না। তাঁর উত্তর, “একেকটি মরসুম কত দিন চলবে বা কাকে দিয়ে চালানো হবে এর কোনও নির্দিষ্ট ব্যাকরণ নেই। সবটাই নির্ভর করে ব্যবসায়িক সাফল্য আর চ্যানেলের ইচ্ছের ওপর। মুখ বদল তো হতেই পারে।”
একেবারে নব কলেবরে শুরু হবে রচনাকে নিয়ে পঞ্চম সিজন। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এ তাঁর এই ফিরে আসায় শো-এর ফর্ম্যাটে কি কোনও বদল হচ্ছে? “অবশ্যই। চ্যানেলের লোকজনেরা জানেন আমি কী রকম প্যাটার্ন পছন্দ করব। সেই অনুসারেই কাজ হবে। আমরা সবাই মিলেমিশে সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন ফেজের কাজ করব,” খুশিতে উত্তর রচনার। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ এ ফেরাটা যতটা মসৃণ হবে তাঁর কাছে, বাংলা ছবিতে ফেরাটাও কি ততটাই মোলায়েম হবে? ইন্ডাস্ট্রিতে এখন নতুন ধারার অভিনয়, নতুন নতুন নায়িকা—প্রতিযোগিতার মুখটাই তো বদলে গেছে।
রচনা কিন্তু এই ধরনের পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ বলে মনেই করছেন না। “সময়ের নিয়মে নতুন নতুন ছেলেমেয়ে আসবে, অভিনয়ের ধারা বদলাবে। আমি নতুন শিল্পীদের প্রতিযোগী ভাবি না।” বলছেন ১০০-র ওপর ছবি করা নায়িকা। তারপর হাল্কা সুরে, “বরং খুশি হই এই ভেবে যে ওরা কত আরামে কাজ করছে। আজ প্যারিস তো কাল সুইৎজারল্যান্ডে শু্যটিংয়ে যাচ্ছে। আমাদের তো আউটডোর বলতে ছিল ফলতা, রায়চক বা বড়জোর শিলিগুড়ি-দার্জিলিং।”
আসলে রচনার কাছে নতুন করে সিনেমায় ফিরে আসার সংজ্ঞাটা অন্য রকম। “আমি আমার বয়সোচিত চরিত্রে অভিনয় করব। যোগ্য চরিত্র পেলে কাজ করব, না হলে করব না। এক সময় চুটিয়ে অভিনয় করেছি। এখন জীবনটাকে উপভোগ করব আর রিল্যাক্স করে কাজ করব। মানুষের ভাগ্যটাই সব। ঈশ্বর যাকে যতটা দেবেন ততটাই তার প্রাপ্য। সেই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। তা না হলেই অবসাদ আসে,” তাঁর পরিষ্কার উত্তর।
২০১০ সালে বলেই দিয়েছিলেন আর ছবি নয়। তা হলে আবারও ফিরে আসার কারণটা কী? রুপোলি পর্দার স্টারডমটা মিস করছেন? তাই? “স্টারডম এখনও আমার আছে। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এ তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছি। হাজার হাজার লোক আমার যাত্রা দেখছে। স্টারডম মিস করার তো কোনও ব্যাপার ঘটেনি।” তা হলে? “আমি যে ধরনের কমার্শিয়াল সিনেমায় অভিনয় করেছি তাতে গ্রাম বাংলা আমায় এত দিন চিনেছে, মনেও রেখেছে। আর এখন যে ধরনের বুদ্ধিদীপ্ত ছবিতে অভিনয় করব তাতে শহরের দর্শক আমায় চিনবে।” তাঁর উত্তর। তা ছাড়া রচনার স্বামী প্রবাল মাল্টিপ্লেক্সে আজকালকার বাংলা ছবির উন্নতি দেখে তাঁকে বারবার বলছেন, “এটাই তো অভিনয় করার আসল সময়। এবার তুমি ছবিতে কাজ করো।” সব মিলিয়ে সিনেমায় কাজ করার এটাই সুসময় মনে হচ্ছে রচনার।
এই ফেরার অনুপ্রেরণা কি তাঁর এক সময়ের নায়ক প্রসেনজিৎকে দেখেই? তিনিও তো নিজেকে নতুন ধারার বাংলা ছবিতে নতুন মোড়কে পেশ করেছেন। বিলবোর্ডে প্রসেনজিতের সঙ্গে নতুন নতুন নায়িকাদের ছবি। সেগুলো দেখে মনে হয় না তিনিও পারতেন আলোটাকে ধরে রাখতে? অথবা ঋতুপর্ণার মতো সদাসর্বদা মুম্বই-কলকাতা ছোটাছুটি করে অভিনয়, প্রযোজনা, বিজ্ঞাপনের কাজ করে তুফানি জীবন? “বুম্বাদা যে ভাবে দেখেশুনে ছবি বাছছেন আজকাল, আমাদের মতো সিনিয়রদের সে রকম ভাবেই কাজ করা উচিত। আর ঋতুপর্ণা নিজের স্টাইলে কাজ করছে, করুক। যার যেটা ভাল লাগে।” রচনা চান শান্ত মনে ভাল কাজ করার সুযোগ। ব্যস এইটকুই। তাঁর ছেলে এখন বছর পাঁচেকের হয়েছে। তাই কাজে বেরোতে অসুবিধে নেই।
রচনার নতুন ছবির নাম ‘সোনালি পাড়ের রহস্য’। সমরেশ বসুর ছোট্ট গোয়েন্দা গোগোলের গল্পে তিনি গোগোলের মা। এবং ভীষণই আধুুনিকা। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, শর্ট কুর্তি পরনে। একেবারে এখনকার সুপার মম বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমনটাই। একেই তো বলে নব কলেবর। অভিনয় করতে চলেছেন ‘ছুটির ফাঁদে’ বলে একটি কমেডি ছবিতে চরিত্রাভিনেতা হয়েও।
কিন্তু এক সময়ের হিট নায়িকা থেকে এখন চরিত্রাভিনেতা? রিস্ক হয়ে গেল না?
তাঁর মতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি মানেই ঝুঁকি। যে কোনও নতুন ভেঞ্চারের মধ্যেই ঝুঁকি থাকে। সে ঝুঁকি নিতে তিনি রাজি। কারণ ছবি চলা বা না চলা পরিচালকের দক্ষতা আর প্রযোজকের মার্কেটিং স্টাইলের ওপরেই নির্ভর করে। শিল্পীদের ওপর নয়। তাঁদের কাজ ভাল অভিনয় করা। “আর ভাল অভিনয়টা আমি জানি,” রচনার আত্মবিশ্বাসী উত্তর।
কিন্তু এক দিকে সিনেমা অন্য দিকে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ —সামলাতে পারবেন তো? যে ছেলেকে সময় দেবার জন্য তাঁর প্রায়-অবসর ঘোষণা, তাকে সময় দেবেন কী করে? সেখানেও রচনার আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই। ৩০ দিনকে সমান ভাগ করে নিয়েছেন। ১০ দিন টিভির জন্য। ১০ দিন সিনেমার। আর বাকি ১০ দেবেন তাঁর ছেলেকে।
জীবনে এত পরিবর্তন এলেও পরিবর্তনের রাজনীতিতে মানে তৃণমূলের সভাসমাবেশে রচনাকে তো আর আগের মতো দেখা যাচ্ছে না। “দিদির সঙ্গে এখনও আমার একই রকম মধুর সম্পর্ক। ইদানীংকালে হয় যাত্রা বা অন্য কোনও কাজে ব্যস্ততা, বা দেশের বাইরে থাকায় সভাসমাবেশে যেতে পারি না। সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই যাব,” স্নিগ্ধ হেসে বললেন রচনা।
আগমন ও প্রত্যাবর্তন। এবং সব কিছুর মধ্যে ভারসাম্য রাখা। ছেলেকে সময় দেওয়া। এই না হলে সুপার মম!
সেটাই তো পরিবর্তন। |
|
|
 |
|
|