আত্মসমর্পণের পরেও কেন তিন মেইতেই জঙ্গিকে হত্যা করল আসাম রাইফেল্স— সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, উখরুলের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
গত ৯ মে মণিপুরের উখরুল জেলার মাফৌ বাঁধের কাছে মেজর হনুমানের নেতৃত্বে আসাম রাইফেল্স তিন জঙ্গিকে হত্যা করে। দাবি করা হয়েছিল, গুলির লড়াইয়েই জঙ্গিদের মৃত্যু হয়। তাদের কাছ থেকে কার্বাইন, পিস্তল, গ্রেনেড, লিথড শেল মেলার দাবিও আসাম রাইফেলসের তরফে করা হয়েছিল। কিন্তু রিমস্-এর মর্গে মৃতদেহ শনাক্ত করতে এসে নিহতদের পরিবার ক্ষোভে ফেটে পড়ে। নিহত এক জঙ্গির বাবা, শ্যামকিশোর দাবি করেন, গত এক মাস ধরে তাঁর ছেলে নবীন ও নবীনের দুই বন্ধু মূল স্রোতে ফিরতে চাইছিল। তারা কেওয়াইকেএল সংগঠনের দীর্ঘদিনের সদস্য। শ্যামকিশোর তাঁর পূর্ব পরিচিত মেজর হনুমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলের বার্তা পৌঁছে দেন। মেজর নিজে ৮ মে তাঁদের বাড়ি এসে জানান, রাতে ছেলেকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিন্তু রাতে আত্মসমর্পণের পিছনে আসাম রাইফেল্স--এর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে সন্দেহ করে নবীনরা আসেনি। শেষ অবধি পরদিন ভোরে নবীন ও তাঁর বন্ধুরা আত্মসমর্পণ করে। তারা একটি এম ১৬ রাইফেল, একটি লিথড গান, ৫০ রাউন্ড কার্তুজ, তিনটি লিথড শেল জমা দেয়। শ্যামকিশোর নিজে সেখানে হাজির ছিলেন। তাঁর দাবি, “মেজর হনুমান আমায় বলেন, নিশ্চিন্তে বাড়ি যান। দু’দিনের মধ্যে নবীন, নিংথোম্বাম ইংগবোমা ও ইরংবাম রোশনকে মূল স্রোতে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু গ্রামবাসীরা খবর দেন, আত্মসমর্পণের পরে নবীনদের নিয়ে আসাম রাইফেল্স-এর গাড়ি সদরের দিকে না ফিরে চাদোং টাংখুলের দিকে চলে যায়। পরে মফৌ বাঁধের কাছে জঙ্গি-জওয়ান গুলির লড়াইয়ের খবর রটানো হয়। ভুয়ো সংঘর্ষে তিন যুবককে মারার প্রতিবাদে যৌথ মঞ্চ গড়ে বিক্ষোভ দেখানো চলছে।
বরাক মানবাধিকার সুরক্ষা কমিটি ও ‘কোর’ সংগঠনের সদস্যরা ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। দেখা যায়, আত্মসমর্পণের সময় ট্র্যাকস্যুট পরা থাকলেও মৃতদেহগুলির পরনে ছিল ক্যামোফ্লাজ পোশাক। ডাক্তারি পরীক্ষায় তিনজনের শরীরেই বিস্তর মারধরের চিহ্ন মিলেছে। রোশনের শরীরের নানা অংশ কেটে দেওয়া হয়েছিল। তার যৌনাঙ্গও বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। নিংথৌজামের চোখ বের হয়ে এসেছিল। যা কেবল গুলির লড়াইয়ে হয় না। মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, অজান্তেই আসাম রাইফেল্স--এর চক্রান্তে পা দিয়ে নিজের ছেলে ও তার দুই বন্ধুর মৃত্যুর জন্য দায়ী হলেন শ্যামকিশোর। তবে চুপ করে না থেকে তিনি প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটেন।
বিশদ তথ্য হাতে পাওয়ার পরে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য জানতে চেয়েছে মানবাধিকার কমিশন। ঘটনাটি নিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্টও চেয়েছে কমিশন। |