বাংলাকে বিপাকে ফেলে গোয়া-সিকিমে আটকে বর্ষা
শুরু করেছিল হোঁচট দিয়ে। তার পরে তেড়েফুঁড়ে কিছুটা এগোনোর পরে বর্ষা ফের নট নড়নচড়ন। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা চলে আসার কথা ছিল ৮ জুন। কিন্তু আসেনি। তার চেয়েও বেশি চিন্তার কথা, কবে যে সে আসবে, তা-ও বলতে পারছেন না আবহবিদেরা। কারণ, এক দিকে কর্নাটক-গোয়া, অন্য দিকে সিকিমে পৌঁছে আটকে পড়েছে বর্ষা। অর্থাৎ গাঙ্গেয় বাংলায় বর্ষা সমাগমের দু’টি পথেই ফের দেরি মৌসুমি বায়ুর।
এ বার বর্ষার দেরি দফায় দফায়। আন্দামানে হাজির হতে দিন তিনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল তার। বিলম্ব হয়েছে মূল ভূখণ্ডে ঢোকার কেরল-পথেও। ৫ জুন, মঙ্গলবার বেশ কিছুটা দেরি করেই বর্ষা ঢুকেছিল কেরলে। তবে তখন মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা এতটাই বেশি ছিল যে, পরের দিনই কেরল জুড়ে বৃষ্টি নামিয়ে সে ছড়িয়ে পড়ে কর্নাটক আর গোয়ায়। ও দিকে, বঙ্গোপসাগরের পথে আসা মৌসুমি বায়ু এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে ঢুকে পড়ে উত্তরবঙ্গে। পৌঁছে যায় সিকিম পর্যন্ত। কিন্তু তার পরেই ফের ঠোক্কর। গত দু’দিনে দু’টি পথের কোনওটিতেই আর একটুও এগোতে পারেনি বর্ষা।
শুধু তা-ই নয়, আগামী তিন দিন বর্ষা ওই জায়গাতেই থেকে যাবে বলে দিল্লির মৌসম ভবনের আবহবিদদের আশঙ্কা। এই অচলাবস্থা কাটবে কী ভাবে? শুক্রবার কেরল-পথে বর্ষা যেখানে (কর্নাটক-গোয়ার ধার ঘেঁষে) ছিল, সেখান থেকে তার দক্ষিণবঙ্গে আসতে অন্তত দু’টি ‘ধাক্কা’ প্রয়োজন। ‘ধাক্কা’ বলতে বঙ্গোপসাগরের কোনও গভীর নিম্নচাপকেই বোঝাচ্ছেন আবহবিদেরা। কিন্তু সেই নিম্নচাপ যদি আরব সাগরে তৈরি হয়, তা হলে অন্য সমস্যা দেখা দেবে। কারণ, সে-ক্ষেত্রে বর্ষা অতিসক্রিয় হয়ে যাবে পশ্চিম ভারতে। ভুগতে হবে পূর্ব ভারতকে।
বর্ষা ফের এ ভাবে আটকে গেল কেন?
এই পরিস্থিতির জন্য কাশ্মীরে হানা দেওয়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝাকেই দায়ী করছেন আবহবিদদের কেউ কেউ। পাকিস্তান পেরিয়ে কাশ্মীরে ঢোকা ওই ঝঞ্ঝা উত্তর ভারতের বায়ুপ্রবাহকে প্রভাবিত করেছে। যার ফলে মৌসুমি বায়ু আর উত্তর দিকে এগোচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরে কোনও গভীর নিম্নচাপ তৈরি হলে তা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ‘বাধা’ কাটাতে পারত বলে মনে করছেন আবহবিদেরা।
এই অবস্থায় বৃষ্টির জন্য দক্ষিণবঙ্গবাসীর ভরসা ঘূর্ণাবর্ত এবং স্থানীয় ভাবে তৈরি হওয়া বজ্রগর্ভ মেঘ। গত দু’দিন বিহার-ঝাড়খণ্ড সীমানায় থাকা একটি ঘূর্ণাবর্তের জন্য কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবারেও বৃষ্টি হয়েছে কোনও কোনও জেলায়। আজ, শনিবারেও কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
কিন্তু বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির মধ্যেও বৃহস্পতিবারের থেকে শুক্রবার কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্যত্র সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে। বেড়েছে আপেক্ষিক আর্দ্রতাও। সব মিলিয়ে আবার সেই প্রবল অস্বস্তি। দক্ষিণবঙ্গে এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল বীরভূমের শ্রীনিকেতনে, ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমানের পানাগড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০-৪১ ডিগ্রির কাছাকাছি। কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি। কিন্তু আর্দ্রতা বেশি থাকায় মহানগরীর অস্বস্তিসূচক বেড়ে হয়েছে ৬৮ ডিগ্রি। যা এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ১৩ ডিগ্রি বেশি।
দহনজ্বালা আর আর্দ্রতার অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র বর্ষা। কিন্তু সে দেরির পরে দেরি করায় এবং হোঁচটের পর হোঁচট খেতে থাকায় কবে যে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দাদের পাকাপাকি স্বস্তি মিলবে, তা অনিশ্চিত। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তো রয়েছেই, তার সঙ্গে আছে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের উপরে থাকা স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল বলেই মনে হচ্ছে আবহবিদদের। তাঁরা জট খোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ওই জটিল অঙ্কের সমাধান মিলছে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.