‘গলার কাঁটা’ রেজ্জাক
‘বিদ্রোহ’ সামলানোই প্রথম কাজ নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির
ক্ষমতা হারানোর পরে দল গুছিয়ে নেওয়া যাবে, এমনই আশা ছিল সিপিএম নেতৃত্বের। কার্যক্ষেত্রে সিপিএমের অন্দরের পরিস্থিতি বরং আরও ঘোরালো হচ্ছে! ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক বছর পরে দুই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটাতেই বেশি বেগ পেতে হচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বকে। পার্টি কংগ্রেসের পরে দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির যে প্রথম বৈঠক আজ, শনিবার ও কাল, রবিবার দিল্লিতে বসতে চলেছে, তাতেও দলের অন্দরের এই ‘বিদ্রোহে’রই ছায়া পড়তে চলেছে।
গোলমালের কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই কেরল। বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন এবং রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়নের দ্বন্দ্ব নতুন করে তুঙ্গে উঠেছে। কেরলের রাজ্য নেতৃত্বের রদবদল চেয়ে ভি এস চিঠি দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আগের দিন, শুক্রবার দিল্লি পৌঁছে ভি এস এবং বিজয়ন আলাদা ভাবে এ কে জি ভবনে গিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে দরবারও করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ দিনই দিল্লি গিয়েছেন অনিল বসু সম্পর্কিত রাজ্য কমিটির রিপোর্ট নিয়ে। আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। আলিমুদ্দিন চায়, কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে অনিলবাবুকে এ বার দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। তবে সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার আগে আবার রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকে ওই সিদ্ধান্ত সেখানে জানানোর কথা।
সিপিএমের কাছে গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো এখন দেখা দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী তথা অধুনা বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। শারীরিক কারণে তাঁর পক্ষে আর ক্যানিংয়ের ‘দেশের বাড়ি’ থেকে কলকাতায় নিয়মিত যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না, এই কারণ দেখিয়ে বিধানসভায় সিপিএমের পরিষদীয় দলের সচেতক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। রেজ্জাক নিজেই জানিয়েছেন, পরিষদীয় পদ ছাড়তে চেয়ে তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে। দিল্লি রওনা হওয়ার আগে আলিমুদ্দিনে এ দিন এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু অবশ্য বলেছেন, “আমি এই রকম কোনও চিঠি পাইনি। তাই বলতে পারব না।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রেরও বক্তব্য, “আমার এই রকম কিছু জানা নেই।”
প্রকাশ্যে রেজ্জাকের বক্তব্য, দলের নিয়মিত কাজ থেকে তাঁর ‘অবসর’ নেওয়ার বয়স হয়ে গিয়েছে। শারীরিক কারণেই তিনি রাজ্য কমিটির বৈঠকে যাচ্ছেন না। যদিও সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, ‘বিক্ষুব্ধ’ রেজ্জাকের আসল উদ্দেশ্য দলীয় নেতৃত্বকে ‘বার্তা’ দেওয়া। রেজ্জাক এ দিন বলেছেন, “বিধানসভায় বামফ্রন্টের সচেতক আছেনই। দলগত ভাবে সচেতকের কোনও ভূমিকা নেই। যা আছে, সবই বিরোধী দলনেতার।” বস্তুত, রেজ্জাককে ‘তুষ্ট’ রাখার জন্য ওই পরিষদীয় পদ তাঁকে দেওয়া হলেও এ যাবৎ তেমন কোনও ভূমিকাই পালন করেননি ক্যানিংয়ের বিধায়ক। বরং, বিরোধী দলনেতার সঙ্গে ‘দূরত্ব’ রেখে চলেছেন। রেজ্জাকের আরও বক্তব্য, “নিউমোনিয়া হওয়ার পরে গ্রামের বাড়ি থেকে কলকাতায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই রাজ্য কমিটির বৈঠকেও যাচ্ছি না। নতুন করে কিছু শোনারও নেই আমার! যা শারীরিক অবস্থা, তাতে অবসর নেওয়াটাই স্বাভাবিক।”
নিজেকে ‘বিদ্রোহী’ অনিলবাবুর সঙ্গে এক করে দেখতে রাজি নন রেজ্জাক। আলিমুদ্দিনও দু’জনকে এক বন্ধনীতে ফেলছে না। রেজ্জাকের বিরুদ্ধে ফের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্নে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীও দ্বিমত। প্রসঙ্গত, কোনও কমিটির পর পর তিনটি বৈঠকে কেউ না-জানিয়ে অনুপস্থিত থাকলে দল তাঁর ব্যাখ্যা তলব করতে পারে। রেজ্জাকের বক্তব্য, তিনি রাজ্য কমিটির বিগত বৈঠকে না-আসার কথা আগাম জানিয়েছিলেন। সিপিএম সূত্রের মতে, রেজ্জাক আসলে দেখতে চান, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দিনের পর দিন পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গরহাজির থাকতে পারলে তাঁকে নিয়ে আলিমুদ্দিন কী করে! আপাতত রেজ্জাক জানাচ্ছেন, তিনি দলেই থাকবেন। তিনি সোজাসাপ্টা কথা বলেন। যা নিয়ে বিতর্ক হয় কিন্তু পরবর্তী কালে অনেক কিছুই দল মেনে নেয়।
এই পরিস্থিতিতে আজ দিল্লিতে প্রথমে পলিটব্যুরো এবং পরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসছে। তার আগে এ দিন ভি এস দলের সদর দফতরে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক কারাট এবং পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন। বিজয়ন দেখা করে গিয়েছেন কারাটের সঙ্গে। ভি এস-প্রসঙ্গে পলিটব্যুরোর এক সদস্যের মত, “কেরলের রাজ্য কমিটি কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তারা কেন্দ্রীয় কমিটির মত জানতে চায়। তবে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে খুব চাপ সৃষ্টি না-হলে কেন্দ্রীয় কমিটিরও ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা কম।” ভিন্ন মতাবলম্বীদের ‘নিকেশ’ করা নিয়ে কেরলের এক জেলা সম্পাদক এম এম মণিকে পদ থেকে সরানো হবে। দলের ‘ভাবমূর্তি’র স্বার্থে তাঁকে কেন একেবারে বহিষ্কার করা হবে না, প্রশ্ন রয়েছে দলেরই একাংশের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.