নরেন্দ্র মোদীর চাপের কাছে শেষ পর্যন্ত মাথা নোয়াতে বাধ্য হলেন নিতিন গডকড়ী। মোদীর অপছন্দের কারণেই আজ দল থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন বিজেপি নেতা সঞ্জয় জোশী।
কয়েক মাস ধরেই জোশীকে দল থেকে সরানোর জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের উপর যে চাপ সৃষ্টি করে চলেছিলেন মোদী। আজ সকালে দলের সভাপতি গডকড়ীকে চিঠি লিখে দল থেকে অব্যাহতি চান জোশী। সঙ্গে সঙ্গে সে দাবি মেনে নেন গডকড়ী। যদিও সরকারি ভাবে দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “সঞ্জয় জোশীকে ইস্তফা দিতে বলা হয়নি। উনি দল থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। সভাপতি গডকড়ী তা মেনে নিয়েছেন।” বিজেপির অভ্যন্তরে মোদীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সরব ছিলেন সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ জোশী। কিন্তু সেই ‘বিরোধী’র কণ্ঠরোধ করে দলের মধ্যে প্রভাব প্রতিপত্তিতে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী।
তবে এই ঘটনায় দলের কোন্দল আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই জোশীর পক্ষে মুখ খুলেছেন বিহারের বিজেপি নেতা তথা উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী। নাম না করে আজ নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কোনও নেতাই দলের উর্ধ্বে নয়। জোশীকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করাটা মোটেই ঠিক হল না।” সার্বিক ভাবে সুশীল মোদী আজ দলের সভাপতির ভূমিকার প্রশংসা করলেও, তিনি যে ভাবে মোদীর চাপের কাছে মাথা নোয়ালেন, তার সমালোচনা করতে ছাড়েননি তিনি। সুশীলের সাফ কথা, “তাঁর (দলীয় সভাপতির) এ ভাবে মাথা নোয়ানো উচিত হয়নি।”
জোশীর চিঠিতে ঠিক কী ছিল, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। বলা ভাল, বিজেপি নেতৃত্বই এই ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখছেন। বিজেপির কিছু নেতা আড়ালে বলছেন, দল থেকে নয়, আসলে উত্তরপ্রদেশে পুরভোটের দায়িত্ব থেকেই অব্যাহতি চেয়েছেন জোশী। মোদীকে খুশি করার জন্য তাকেই সার্বিক অব্যাহতি বলে বর্ণনা করছেন গডকড়ীরা।
কিন্তু কেন নতিস্বীকারে বাধ্য হলেন গডকড়ী?
এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পাশাপাশি নিতিনের দুর্বল নেতৃত্বকেও দায়ী করা হচ্ছে। বর্তমানে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেবল অরুণ জেটলির সঙ্গেই সুসম্পর্ক রয়েছে গডকড়ীর। অন্য নেতা, বিশেষ করে লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রতি তলানিতে ঠেকায় মোদী নির্ভরতা আরও বেড়েছে তাঁর। দিন কয়েক আগেই নিজের ব্লগে গডকড়ীর সমালোচনা করেন আডবাণী। প্রশ্ন তোলেন তাঁর বহু সিদ্ধান্ত নিয়ে। এর ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আডবাণী।
দলে কার্যত একা হয়ে যাওয়া দুর্বল গডকড়ীর পক্ষে নিজের গদি ধরে রাখতেই নরেন্দ্র মোদীকে চটানো সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে। তাই মুম্বইয়ে দলের নীতি নির্ধারক কমিটিতে মোদীর সমর্থন জোগাড়ে সঞ্জয় জোশীকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছিলেন গডকড়ী। কিন্তু গডকড়ীর প্রধান সমস্যা, তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে দলের সংবিধান সংশোধন হলেও এখনও তাতে জাতীয় পরিষদের অনুমোদন নেওয়া বাকি রয়েছে। যেখানে ফের মোদীর সমর্থন প্রয়োজন হবে গডকড়ীর।
কিন্তু কর্মসমিতি থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেও সঙ্ঘের চাপে গডকড়ী যে ভাবে জোশীকে ফের উত্তরপ্রদেশে পুর নির্বাচনের দায়িত্ব তুলে দেন, তাতে ক্ষুব্ধ হন মোদী। যোজনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দিল্লি এসে আডবাণীর কাছে নিজের ক্ষোভ জানান মোদী। আডবাণীকে জানান, জোশী সরলে তবেই তিনি মুম্বইয়ে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন গডকড়ীকে। জোশীর বহিষ্কারের প্রশ্নে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা করা হয়নি। উপরন্তু জোশীকে ফের নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই কথা গডকড়ীকেও জানান মোদী। এর মধ্যেই দিল্লি-আমদাবাদে মোদীকে ঠেস দিয়ে জোশীর সমর্থনে পোস্টার পড়ে। বিজেপি সূত্রের খবর, ক্ষুব্ধ মোদী অবিলম্বে জোশীকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান গডকড়ীর কাছে। অন্যথায় জাতীয় পরিষদের বৈঠকে তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব তিনি সমর্থন না করার হুমকিও দেন। নিজের সভাপতি পদের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হওয়ায় দলের একাংশের আপত্তি সত্ত্বেও গডকড়ী আজ জোশীকে ইস্তফা দেওয়াতে বাধ্য হলেন, এমনই মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে তিক্ত সম্পর্ক হলেও মোদী ও জোশী দুই নেতাই প্রায় এক সময়ে গুজরাতে নিজেদের রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে দিল্লিতে দলের দায়িত্বে থাকা মোদী গুজরাতে ফিরতে চাইলে বাধা দেন জোশী। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, তখন থেকেই দুই নেতার মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত। পরে ক্রমশ তা বেড়েই চলে। চলতি বছরের শেষে গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচন। মোদী শিবিরের অভিযোগ, গুজরাতে দলকে দুর্বল করার জন্য সক্রিয় রয়েছেন জোশী। তাদের অভিযোগ, জোশী নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন মোদী-বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা কেশুভাই পটেলের সঙ্গে। |