|
|
|
|
পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড |
সেই রাতের আতঙ্ক আজও
তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে
সংবিদা লাহিড়ী |
|
|
প্রায় একই রকম ভাবে গাড়ির মধ্যে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল তাঁকে। পার্ক স্ট্রিটের সেই ধর্ষণ-কাণ্ডের চার মাস পরেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। শুক্রবার ফের আর একটি মেয়ের উপরে অত্যাচারের কথা শুনে শিউরে উঠলেন তিনি। বললেন, “আমি জানি কী অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে ওই মেয়েটিকে। তবে পুলিশ যে ভাবে ঘটনার পরেই দোষীকে গ্রেফতার করেছে, তা শুনে ভাল লাগছে। আমাকে তো লড়াই শুরু করতে হয়েছিল পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশের সঙ্গে। এই মেয়েটিকে অন্তত আমার মতো ভুগতে হবে না।”
রাজারহাট নিউ টাউনে ‘ধর্ষিতা’ তরুণীর খবরটা শুনে উদ্বেগ নিয়েই তাঁর বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের অভিযোগকারিণী। “বয়স কত মেয়েটির?” মেয়েটির বয়স ২৫ কি ২৬ শুনে তাঁর গলায় হতাশা আর আতঙ্ক মেশানো অভিব্যক্তি, “আহা রে, ওইটুকু মেয়ে! ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক, এই প্রার্থনা করি।”
বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষিতা বধূর মতো কলকাতার রাস্তাঘাটে অনভ্যস্ত নন পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের মহিলা। তাঁর নিজের শহরে বরাবরই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘোরাঘুরি করেছেন। কলসেন্টারের চাকরির দরকারেও এক সময়ে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে হত তাঁকে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে পার্ক স্ট্রিটের নাইট ক্লাব থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা এই শহরের বিষয়ে ওই মহিলার এতদিনের ধারণাটাই যেন ভেঙে দিয়েছে। এ শহরে ফাঁকা জায়গায় শাট্ল-গাড়ি থামিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটির পরে তাঁর প্রশ্ন, “বার বার এ রকম ঘটনা কেন ঘটছে বলতে পারেন? সমাজের খারাপ দিকগুলো কি কখনও বদলাবে না? মেয়েরা কি বাড়ি থেকে রাতে বেরোবে না?”
কয়েক মাস আগের পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কাদের খান এখনও অধরা। ধরা পড়েনি জনি নামের অভিযুক্তও। এই অবস্থায় এখনও রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন ওই মহিলা। জীবনের একটি ঘটনাই যেন আমূল পাল্টে দিয়েছে তাঁকে। তিনি নিজেই বলছেন, পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার পরে রাতে বের হওয়ার সাহস পান না। ওই মহিলার কথায়, “আমি আর কোনও কলসেন্টার বা রাতে ডিউটির চাকরি করতে চাই না। আমার পরিবারের উপরে যথেষ্ট চাপ গিয়েছে। এখন বেশির ভাগ সময়টা বাড়িতে থাকাই ভাল! পারলে ১০টা-৫টার চাকরি করব।”
তাঁর সন্তানদের বাড়ির বাইরে বেরনো থেকে সাধারণ সামাজিক-জীবন কোনও কিছুই আগের মতো নেই। তিনি নিজেও পুরোপুরি সুস্থ নন। মানসিক চাপ ও চোরা উদ্বেগ কাটাতে এখনও নিয়মিত ডাক্তারি পরামর্শ নিচ্ছেন ওই মহিলা। ওষুধও খেতে হচ্ছে রোজই। চার মাস আগের ঘটনার পরে মহিলার মা-ও রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়েও তাই উদ্বেগ রয়েছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে শহরে আর একটি মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষতই নতুন করে খুঁচিয়ে তুলেছে বলে টের পাচ্ছেন পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের অভিযোগকারিণী। |
|
|
|
|
|