তৎপর পুলিশ, ধৃত অভিযুক্ত ফের গাড়িতে ধর্ষণের
সাক্ষী রাতের কলকাতা
রাত তিনটেয় শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে টহলদার পুলিশকর্মীদের দেখে হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিলেন তরুণী। বলছিলেন, “আমাকে বাঁচান।”
কী হয়েছে?
তরুণী অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ এক্সাইড মোড় থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছনোর জন্য একটি সাদা রঙের গাড়িতে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছনোর বদলে তাঁকে রাজারহাট-নিউটাউনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে ওই গাড়ির চালক। তাঁর হার, বালা এবং তিন হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি। পরে শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে পিঠটান দেয় সে।
বিধ্বস্ত ওই তরুণীকে উদ্ধার করে প্রথমে এন্টালি থানায় নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। ডিসি (ইএসডি) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ধৃতের নাম মুমতাজ খান। তার বাড়ি পার্ক সার্কাস এলাকার গোবরা স্টেশন রোডে। পুলিশ সূত্রের খবর, তরুণী মুমতাজকে শনাক্তও করেছেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিটের নাইটক্লাব থেকে বেরিয়ে পাঁচ যুবকের সঙ্গে গাড়িতে উঠেছিলেন এক মহিলা। তাঁকেও ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। কয়েক দিন পরে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। শুধু অভিযোগ নিতে গড়িমসি করাই নয়, ওই মহিলাকে পুলিশ কটূক্তিও করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এ বার কিন্তু পুলিশের অন্য মুখ দেখল কলকাতা।
এক পুলিশ কর্তা জানান, খুব ভোরে ওই তরুণীকে নিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সামনে যায়। ওই জায়গায় অনেক ট্যাক্সি ও গাড়ির চালকেরা রাত কাটান। সেখানে হাবিব রহমান নামে এক যুবককে শনাক্ত করেন ওই তরুণী। হাবিবই সেদিন পরে গাড়িতে উঠেছিল বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের কাছে হাবিব পুরো ঘটনা স্বীকারও করে। তারই কথামতো পুলিশ বেকবাগানে হানা দেয়। রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সামনের সিটে হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছিল মুমতাজ। সেখানেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। গাড়ির নম্বরের শেষ চারটি সংখ্যা পুলিশকে বলতে পেরেছিলেন তরুণী।
সেই গাড়ি। এন্টালি থানার বাইরে। —নিজস্ব চিত্র
বিরোধী বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, “পুলিশ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এই একটা ঘটনাতেই দেখলাম, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করল। সব ব্যাপারেই পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে এমন তৎপরতা প্রত্যাশিত।”
অভিযোগকারিণীর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায়। তাঁর স্বামী আলিপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বৃহস্পতিবার স্বামীকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি তাঁর এক আত্মীয়কে দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে যান। বেরোতে রাত হয়ে গিয়েছিল। অনেক ক্ষণ ট্যাক্সি না পেয়ে রাত সওয়া এগারোটা নাগাদ তিনি এক্সাইড মোড় থেকে একটি সাদা ‘সুইফ্ট ডিজায়ার’ গাড়িতে ওঠেন। ওই সময়ে অনেক গাড়িই এ রকম ভাড়া খাটে। তাই তিনি নিশ্চিন্তে গাড়িতে উঠেছিলেন বলে তরুণী জানিয়েছেন। রওনা দেওয়ার কিছু ক্ষণ পরে চালক মুমতাজ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে গাড়িটি দাঁড় করায়। সেখান থেকে বছর কুড়ির যুবক হাবিব গাড়িতে উঠে চালকের আসনে বসে।
পুলিশ ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে, তিনি কলকাতার রাস্তাঘাট ভাল করে চেনেন না। তাই গাড়ি অন্য রাস্তায় নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রথমে তা বুঝতে পারেননি।
স্টেশনে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে কেন, জিজ্ঞাসা করায় মুমতাজ তাঁর সঙ্গে প্রথমে দুর্ব্যবহার করে বলে তরুণী জানিয়েছেন। এর পর একটি ফাঁকা জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ির ভিতরেই সে তরুণীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, হাবিব তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মুমতাজ তাকে চড় মেরে গাড়ি থেকে বের করে জানলার কাচ তুলে দেয়। বন্ধ করে দেয় দরজাও। তাই চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পায়নি।
হাবিবের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, সে পার্ক সার্কাসের কসাইপাড়া লেনের বাসিন্দা। মুমতাজ তার পূর্ব-পরিচিত। বৃহস্পতিবার রাতে মুমতাজ এসে তাকে বলে, সে যাত্রী নিয়ে নিউটাউন যাচ্ছে। কিন্তু তার শরীর খারাপ লাগছে। হাবিব গাড়ি চালালে তার উপকার হয়। হাবিব জানায়, সে সাত-পাঁচ না ভেবে মুমতাজের কথামতো গাড়িতে উঠে পড়ে। এর পরে নিক্কোপার্ক পেরিয়ে ফাঁকা জায়গায় হাবিবকে গাড়ি থামাতে বলে মুমতাজ। এর পরেই সে পিছনের সিটে গিয়ে তরুণীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাবিবের কথা থেকে পুলিশের অনুমান, নিউটাউনের ডিএলএফ বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি কোনও জায়গায় ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
এ দিন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অভিযোগকারিণীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। সেই সঙ্গে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয় মুমতাজেরও। আজ, শনিবার তাকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.