সিটু আছে। অথচ সিপিএম নেই!
দুর্গাপুরের ‘হৃদয়’ যে শিল্পাঞ্চল, সেখানেও মুখ থুবড়ে পড়েছে বামেরা। সিপিএম বলছে, দায়ী তৃণমূলের সন্ত্রাস। অন্য কিছু সম্ভাব্য কারণের সঙ্গে আলিমুদ্দিনকেও তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এত দিন শিল্পশহরে যে ‘ধারাবাহিক উন্নয়ন’ হচ্ছে বলে তাঁরা দাবি করে এসেছেন, ভোটারদের মনে তা দাগ কাটল না কেন, তার ব্যাখ্যা তাঁদের কাছে নেই। ডিএসপি-তে সিটু-র যথেষ্ট শক্তি থাকা সত্ত্বেও টাউনশিপে কেন বামেরা উড়ে গেল, ‘সন্ত্রাস’ ছাড়া তারও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেতাদের কাছে নেই।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পরে ডিএসপি-র অনেক সিটু সমর্থক ঠিকাশ্রমিকের চাকরি গিয়েছে। পুর নির্বাচনের পরে যাতে নতুন করে আর কাজ হারাতে না হয়, সে কথা ভেবেও নিজের ভূমিকা ঠিক মতো পালন করেননি।” প্রায় একই কথা বলেছেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা দুর্গাপুরের গত তিন বারের মেয়র রথীন রায়ও। এক জেলা নেতার হিসেবে, “বিধানসভা ভোটের তুলনায় ১৩টি ওয়ার্ডে ভোটের হার বেড়েছে। কিন্তু যেগুলিতে তৃণমূল বুথ দখল করে সন্ত্রাস চালায়, সেখানে ভোট কমেছে প্রায় ১৮ থেকে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত। যেমন ১৮, ২০, ২১ নম্বর ওয়ার্ড।”
দুর্গাপুরের তিন প্রধান শিল্পাঞ্চলের মধ্যে দু’টিতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বামেরা। ডিএসপি টাউনশিপের ৩ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তারা নিশ্চিহ্ন। অথচ ডিএসপি-তে এখনও সিটু-র প্রাধান্য আছে। ডিএসপি-র সিটু প্রভাবিত ঠিকাকর্মী সংগঠনের নেতা সুবীর সেনগুপ্তের ব্যাখ্যা, “কারখানার বাইরে-ভিতরে লাগাতার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমাদের হয়ে কাজ করা দূরের কথা, অনেক সমর্থক নিজের ভোটও দিতে যেতে সাহস পাননি। কেউ গেলেও পরিস্থিতি দেখে কোনও রকমে নিজের ভোটটা দিয়ে এসে বাড়ির আর কাউকে যেতে দেননি।”
সুবীরবাবুর দাবি, “আমরা প্রাথমিক পর্যালোচনা করে দেখেছি, বুথ দখল, চাপা সন্ত্রাস, বহিরাগতদের দাপাদাপি না থাকলে আমাদের প্রার্থীরা জয়ী হতেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট না হলে সব ভোটেই একই ফল হবে বলে মনে হয়।” একই বক্তব্য ডিএসপি-র সিটু প্রভাবিত স্থায়ী কর্মী ইউনিয়নের নেতা সন্তোষ দেবরায়ও। তবে সিটুর জেলা সভাপতি দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রতি মানুষের যতটা আস্থা আছে ভেবেছিলাম, তার প্রকাশ দেখা যায়নি ফলাফলে। সন্ত্রাস একটা বড় কারণ। অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে দু’এক দিনের মধ্যেই আমরা পর্যালোচনায় বসব।”
রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পাঞ্চলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে বামেরা। ব্যতিক্রম শুধু ডিপিএল এলাকার ৩১, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড। ডিপিএলের সিটু নেতা নরেন সিকদারের ব্যাখ্যা, “এই ওয়ার্ডগুলিতে তুলনামূলক ভাবে সন্ত্রাস কম হয়েছে। তার ফল পেয়েছি। মানুষ ভোট দিতে না পারলে আমরা জিততে পারতাম না।” ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসও বলেন, “এই ওয়ার্ডগুলিতে ভোট তুলনামূলক ভাবে শান্তিপূর্ণ হয়েছে। মানুষ নিজের দিতে পেরেছেন।” তাঁর আক্ষেপ, “এর পরেও কংগ্রেসের ফল ভাল না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।”
তৃণমূল আদৌ সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে রাজি নয়। বামেদের সংগঠন অটুট থাকলে কেউ একতরফা মেরে যেতে পারে কী ভাবে, সেই প্রশ্নও কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না। |