সূর্যে রান্না চলছে, এ তারই আঁচ
সেলাম, আলবার্ট আইনস্টাইন। গরমের জ্বালায় আপনি টের পাইয়ে দিচ্ছেন আপনার আবিষ্কারের মহিমা। E=MC 2. E মানে এনার্জি। ডান দিকে m: পদার্থ (আসলে তার ভর)। C হল আলোর গতিবেগ। সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার। তার বর্গ মানে ৩০০,০০০×৩০০,০০০ বা ৯০,০০০,০০০,০০০। পেল্লায় একটা সংখ্যা। ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে, পদার্থ আর এনার্জি কেবল এক জিনিসই নয়, এক রত্তি পদার্থ মানে বিশাল এনার্জি। গ্রীষ্মের দাবদাহে নাস্তানাবুদ সবাই টের পাচ্ছে সেটা।
কী ভাবে? বলা যাক। সূর্য যেন অগ্নিকুণ্ড। ওখানে হাইড্রোজেন ফুটিয়ে বানানো হচ্ছে হিলিয়াম। কিন্তু যে পরিমাণ হাইড্রোজেন পোড়ানো হচ্ছে, আর যতটা হিলিয়াম তৈরি হচ্ছে, সে দুটো সমান নয়। উৎপন্ন হিলিয়াম ওজনে একটু কম। মানে রান্নায় হারিয়ে যাচ্ছে কিঞ্চিৎ পদার্থ। যাবে কোথায়? ওই পদার্থ পরিণত হচ্ছে এনার্জিতে। আলো আর তাপে। আইনস্টাইনের ফরমুলা মেনে হারিয়ে যাওয়া সামান্য হাইড্রোজেনের বদলে সূর্য উগরে দিচ্ছে প্রচণ্ড আলো আর তাপ।
কিন্তু সেদ্ধ হওয়ার দুর্ভোগ কেবল গ্রীষ্মকালে কেন? শীতকালে কি সূর্যে কমে যায় হিলিয়াম রান্না? মোটেই না। তা হলে? ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ সূর্যের চার দিকে চক্কর দেওয়ার সময় পৃথিবীর এক দিকে হেলে থাকা। পৃথিবী খাড়া ভাবে ঘুরছে না। রয়েছে তেরছা ভাবে। কতটা? সাড়ে তেইশ ডিগ্রি। এর ফলে ঘটছে একটা মজার ব্যাপার। ডিম্বাকৃতি কক্ষপথে পৃথিবী যখন সূর্যের কাছে, তখন তার গড় তাপমাত্রা কম। আর যখন তা দূরে, তখন সেই উষ্ণতা বেশি।
পৃথিবী হেলে থাকার জন্য উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু সূর্য থেকে কখনও সমান দূরত্বে থাকে না। গ্রহের সর্বত্রও ঋতু এক রকম হয় না। জুন-জুলাই মাসে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্ম, তো দক্ষিণে শীত। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে উত্তরে শীত আর দক্ষিণে গ্রীষ্ম। উত্তরে গ্রীষ্মের সময় উত্তর মেরু থাকে সূর্যের দিকে হেলে। তখন এ দিকে দিন লম্বা। অনেকক্ষণ সূর্যের তার পায় এই গোলার্ধ। ফলে গরম কষ্ট দেয় সবাইকে। এ ব্যাপারে কাজ করে আরও এক ফ্যাক্টর। স্থল (মাটি, বালি, পাথর) আর জল দুই গোলার্ধে সমান বিস্তৃত নয়। উত্তরে স্থলের পরিমাণ বেশি। দক্ষিণে জলের। স্থলের ধর্ম হল তাপের প্রভাবে তা জলের চেয়ে গরম হয় বেশি। তাই গ্রীষ্মে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকায়, আর তার মধ্যে স্থলভূমি বেশি থাকায়, তা দ্রুত গরম হয়ে ওঠে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মের সময় ও দিকটা সূর্যের কাছাকাছি এলেও যেহেতু ওখানে সমুদ্র এলাকা বেশি, তাই ওখানকার জল তত বেশি গরম হয় না। দক্ষিণের গ্রীষ্ম তাই উত্তরের মতো অসহ্য নয়।
গরমে ধাঁধার যেন শেষ নেই। হাঁসফাঁস করতে করতে একটা প্রশ্ন মনে জাগে। আমাদের দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতা তো ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তো দিনের তাপমাত্রা ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতেই চার দিকে এমন ত্রাহি রব কেন? ৩-৪ ডিগ্রি বাড়তি উষ্ণতায় কেন এত কষ্ট? প্রশ্নটার উত্তর লুকিয়ে আছে আমাদের দেহের কাজকর্মের মধ্যে। খাবার হজম থেকে শুরু করে দেহের আরও নানা কাজের ফলে কোষে কোষে তাপ সৃষ্টি হয়। মানবদেহ যেন ইঞ্জিন। তা যেমন তাপ উৎপাদন করে, তেমনই সেই তাপ বিকিরণেরও ব্যবস্থা করে। উৎপাদিত বাড়তি তাপ ছাড়তে না পারলে কোষের বিপদ। তাপ সব সময় গরম বস্তু থেকে ঠান্ডা বস্তুতে যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে চার পাশের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে থাকলে দেহের বাড়তি তাপ বিকিরণ প্রক্রিয়া ঠিকঠাক চলে। চার পাশের উষ্ণতা মানবদেহের নিজস্ব তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের যত কাছে পৌঁছয়, দেহের তাপ বিকিরণ দক্ষতা তত কমে। তখন গরমে হাঁসফাঁস। শীতকালে উল্টো। দেহের তাপ এত বেশি হারে বাইরে বেরোয় যে দেহের নিজস্ব উষ্ণতা রক্ষা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে কষ্ট বাড়ে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে। জল থেকে বাষ্প হতে তাপের প্রয়োজন। দেহের নিজস্ব জল বাষ্প হতে তাপ কাড়ে বলেই দেহ ঠান্ডা হয়। বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণের একটা সীমা আছে। আগে থেকেই তাতে বাষ্প বেশি থাকলে, দেহের জল আর ততটা বাষ্প হতে পারে না। বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়লে শুধু নয়, দেহের জল বাষ্পীকরণে অন্য কারণে বাধা পেলেও গরম লাগে। যেমন বাতাস না বইলে। অথবা গায়ে মোটা জামাকাপড় চাপালে।
গরমে সবচেয়ে বিরক্তির ব্যাপার বোধ হয় ঘাম। ঘাম নিঃসরণ দেহের তাপ কমানোর বড় উপায়। ত্বকের বাইরে এসে ঘাম, যা প্রায় পুরোটা জল, তা বাষ্পে পরিণত হয়। তা হতে গিয়ে দেহ থেকে তাপ কেড়ে নেয় বলে দেহ ঠান্ডা হয়। ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার চালালে ওই বাষ্পীভবন ক্রিয়া দ্রুততর হয় বলে আরাম লাগে। ঘামের নিজের কিন্তু দুর্গন্ধ নেই। ত্বকে উপস্থিত কিছু ব্যাকটেরিয়া, যারা ঘামে পুষ্ট হয়, তাদের জন্য ঘামলে গায়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। দেখা গিয়েছে, ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে ঘামে বেশি।
জল ছাড়া ঘামে থাকে সামান্য কিছু রাসায়নিক পদার্থ। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেশিয়ামের মতো ধাতুর ক্লোরাইড। প্রচণ্ড ঘাম ঝরলে দেহে ও সব পদার্থের পরিমাণ খুব কমে গেলে বিপদ। প্রচুর ঘামের সঙ্গে দেহের জল বেশি পরিমাণে বেরিয়ে গেলেও সমস্যা। তখন রক্ত হয়ে যায় ঘন। তা পাম্প করে সারা দেহে পৌঁছতে হৃৎপিণ্ডকে চাপ দিতে হয় বেশি। বাড়ে হৃৎস্পন্দন। যার চরম পরিণাম মৃত্যু।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.