মা যেমন শিশুকে আগলে রাখেন, সেই ভাবে জীবনকে আগলে রাখার জন্য ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শরীরে-মনে চাঙ্গা থাকতে হলে ভাল খাওয়াদাওয়া আর নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে সঙ্গে সদর্থক চিন্তাভাবনা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও যে জরুরি, মনে করিয়ে দিলেন সে-কথাও। জানিয়ে দিলেন, কোনও অবস্থাতেই হাল ছেড়ে দেওয়া চলবে না। বৃহস্পতিবার টাউন হলে এ বছরের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতী ৪৫ জনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কার্যত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করলেন ‘দিদি’।
মাধ্যমিকে প্রথম ২৩ জন এবং উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম ২২ জনকে এ দিন সংবর্ধনা জানায় রাজ্য সরকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গল্পগুচ্ছ’, স্বামী বিবেকানন্দের ‘মাই ইন্ডিয়া’ এবং স্টিফেন হকিংয়ের ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ এই তিনটি বই, উত্তরীয়, অভিজ্ঞানপত্র, ফুল, মিষ্টি এবং একটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয় প্রত্যেককে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। জানতে চান, তাঁরা ভবিষ্যতে কী হতে চান। কারও কোনও সমস্যা থাকলে তা-ও শোনেন মন দিয়ে। আলাদা করে ডেকে নেন এক কৃতী ছাত্রের বোনকে, তাকেও বসতে বলেন কৃতীদের সঙ্গেই।
পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খাওয়াদাওয়া করো পেট ভরে। ডায়েটিং কোরো না। প্রয়োজনে ব্যায়াম করো। ‘ব্রেন’-কে তো কিছু দিতে হবে। ঠিকমতো না-খেলে ‘ব্রেন ফেল’ করবে।” মুখ্যমন্ত্রী হাঁটতে ভালবাসেন এবং হাঁটেনও। এ দিন তিনি বলেন, “বাড়িতে থাকলে দিনে নিয়ম করে এক ঘণ্টা ট্রেডমিলে হাঁটি। নইলে অস্বস্তি হয়। শরীরটা খারাপ লাগে।” দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি যে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের ভিতর দিয়ে গিয়েও হাল ছাড়েননি, সে-কথাও জানান পড়ুয়াদের। বুঝিয়ে দেন, প্রতিকূলতার মুখে হাল না-ছাড়াটাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আসল মন্ত্র। |
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার টাউন হলে দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি। |
উচ্চ মাধ্যমিকে ষষ্ঠ, বাঁকুড়ার খাতড়া হাইস্কুলের ছাত্র দীপাঞ্জন কুণ্ডু মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, দারিদ্রের জন্য তাঁর পড়াশোনা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ‘জীবনযুদ্ধ’ নামে স্বরচিত একটি কবিতাও আবৃত্তি করেন দীপাঞ্জন। মুখ্যমন্ত্রীর মনে হয়, ছাত্রটি হতাশায় ভুগছেন। তিনি বলেন, “তোমাদের জীবন সবে শুরু হয়েছে। কখনও ভাববে না যে, আমি পারব না। সমস্যা না-থাকলে জীবনটা কোথায়? পয়সা থাকলেই কি জীবন মসৃণ হয়?” শুধু পরামর্শ নয়, ওই ছাত্রের পড়াশোনার ব্যাপারে সব রকম সাহায্যের ব্যবস্থা করার জন্য শিক্ষা দফতরের কর্তাদের নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মনস্তত্ত্ববিদেরা বলে থাকেন, পড়াশোনার চাপ সামলাতে গিয়ে এবং বাবা-মায়ের প্রত্যাশার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও এ দিন এই নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়ে। ছাত্রছাত্রীদের উজ্জীবিত করতে বারে বারেই নিজের জীবনকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যাপারে এখন বাবা-মায়েরা কত উৎসাহী! কিন্তু আমাদের সময়ে জানতামই না কোথায় ভর্তি হব। টাকাপয়সা ছিল না। টিউশন করে খরচ চালিয়েছি। কখনও ভাবিনি, পারব না। মানসিক শক্তি হারাতে নেই।”
স্বভাবসিদ্ধ সাদামাঠা, ঘরোয়া ভঙ্গিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতীদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। তাঁর আবদার রাখতে কৃতীদের মধ্যে কেউ গান করেন, কেউ আবৃত্তি, কেউ বা নেচে দেখান। তাঁদের চকোলেট দেন ‘দিদি’। এটা যে তাঁদের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন, কৃতীদের কেউ কেউ সে-কথাও জানান।
সিঙ্গুর মহামায়া হাইস্কুলের ছাত্র সুদীপ্ত নন্দী তিনটি ছবি এঁকে উপহার দেন মমতাকে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর প্রশ্ন কী করে এত কাজ করেন?
“সদর্থক চিন্তা করো। নানা কাজে মনকে ব্যস্ত রাখো,” মন্ত্র মমতার।
|
সদস্য বেড়েছে, দাবি রাজ্য বিজেপির
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিজেপি-তে গত এক বছরে ২০ শতাংশ সদস্য বেড়েছে বলে দাবি করলেন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। বৃহস্পতিবার রাহুল জানান, অগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁদের দলের অঞ্চল, ব্লক, জেলা এবং প্রদেশ স্তরের নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে দলে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের রীতি রয়েছে। যার লক্ষ্য দলের প্রত্যেক কমিটিতে ন্যূনতম ২০ শতাংশ সদস্য বাড়ানো। যে কমিটি ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে না, তাদের সাংগঠনিক নির্বাচন হয় না। ওই নিয়ম অনুযায়ী অনেক সময়ই বিজেপি-র অনেক কমিটিতে নির্বাচন করা যায়নি। কিন্তু এ বার তা হবে না।
কারণ, ইতিমধ্যেই দলের সমস্ত কমিটিতে ২০ শতাংশ সদস্য বেড়েছে। এর কারণ হিসাবে রাহুলের ব্যাখ্যা, “৩৪ বছরের বাম জমানায় মানুষ সিপিএমের স্বরূপ বুঝে তাঁদের থেকে সরে এসেছেন। আর গত এক বছর ধরে তাঁরা তৃণমূলের অত্যাচারী মূর্তিও দেখছেন। এই দুয়ের ফলেই তৃতীয় বিকল্প হিসাবে বিজেপি-কে বেছে নিচ্ছেন তাঁরা।” রাজ্যের ছয় পুরসভার সদ্যসমাপ্ত ভোটে বিজেপি-র আসন এক থেকে বেড়ে হয়েছে তিন। ওই ফল দলে সদস্য বৃদ্ধির ফসল বলেও রাহুলের মত। তা সত্ত্বেও ১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত রাজ্য বিজেপি-তে আরও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের কাজ চলবে। সক্রিয় সদস্যদেরও সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করতে হবে ওই পর্বে। অন্য দিকে, গত ৩১ মে বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নামায় বিজেপি-র যে ২৯ জন জেলে ছিলেন, তাঁদের ১৬ জন এ দিন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। |