বর্ষা আসুক বা না-আসুক, সকাল আর সন্ধ্যার বৃষ্টিতে আপাতত তাপপ্রবাহের কবল থেকে মুক্তি পেল দক্ষিণবঙ্গ।
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা কবে পৌঁছবে আবহবিদদের এখনও তা অজানা। তবে আকাশ কালো করে আসা মেঘ, ঘনঘন বজ্রপাত আর মুষলধারে বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি ফেরাল। উত্তরবঙ্গে কোথাও বর্ষা এসে গিয়েছে, কোনও কোনও অঞ্চলে প্রাক্বর্ষার বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা নেই, প্রাক্বর্ষার বর্ষণও নেই। অগত্যা এই অঞ্চল আঁকড়ে ধরেছে বিহার-ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন এলাকায় হঠাৎ আবির্ভূত একটি ঘূর্ণাবর্তকে। সেই ঘূর্ণাবর্তের সৌজন্যেই অবশেষে তাপের বাঁধন কাটল দক্ষিণবঙ্গ।
তবে পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়ার জো নেই। কারণ, সকাল-সন্ধ্যার বৃষ্টিতে তাপমাত্রা অনেকটা কমলেও অস্বস্তিকর আবহাওয়া এখনই পুরোপুরি বিদায় নিচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদেরা। নির্বিঘ্ন স্বস্তির জন্য ভরসা সেই বর্ষাই। অর্থাৎ মৌসুমি বায়ুকে আরও এগিয়ে আসতে হবে দক্ষিণবঙ্গের দিকে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখনও তৈরিই হয়নি। কেননা যে-দু’টি পথে বর্ষা আসে বাংলায়, সেই দুই রাস্তাতেই আটকে গিয়েছে মৌসুমি বায়ু। |
হঠাৎ বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি মহানগরীতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি। |
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বর্ষা মঙ্গলবারেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সে আবার থমকে গিয়েছে। তাই কোচবিহার, ডুয়ার্স আর সিকিম পাহাড় ছাড়া উত্তরবঙ্গের অন্যত্র এখনও পৌঁছতে পারেনি মৌসুমি বায়ু। অবশ্য ওই সব এলাকাতেও প্রাক্বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। তাতে দক্ষিণবঙ্গের কোনও লাভ আপাতত নেই। কারণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পথ দিয়ে দক্ষিণের দিকে নেমে আসতে গিয়ে বর্ষা আটকে গিয়েছে সিকিম ও সংলগ্ন এলাকায়। আর দ্বিতীয় রাস্তা অর্থাৎ আরব সাগরের পথে গত দু’দিন ধরে তেড়েফুঁড়ে এগোলেও বৃহস্পতিবার বর্ষা থমকে গিয়েছে গোয়ায়।
বর্ষার গড়িমসিতে গরম থেকে দক্ষিণবঙ্গের ত্রাতা আপাতত একটি ঘূর্ণাবর্ত। তার জেরে বুধবার বিকেলেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। কলকাতা অবশ্য বুধবার বিকেলে তেমন বৃষ্টি পায়নি। তবে বৃহস্পতিবার সকালে প্রকৃতি মহানগরীর তৃষ্ণা কিছুটা মিটিয়েছে। সকালের বৃষ্টিতে তাপমাত্রা বেশ কিছুটা কমলেও অত্যধিক আর্দ্রতায় অস্বস্তিসূচক উঠে যায় ৬৭ ডিগ্রিতে। যা এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ১২ ডিগ্রি বেশি। সন্ধ্যার বৃষ্টিতে রাতটা অবশ্য কেটেছে অনেকটাই স্বস্তিতে।
তাপপ্রবাহ কমলেও মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হয়নি দক্ষিণবঙ্গে। গত তিন দিনে গরমে মৃত্যু হয়েছে ৮৫ জনের। আর বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গে বাজ পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন আট জন। বীরভূম, পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর যেখানেই ভারী বৃষ্টি হয়েছে, সেখান থেকেই বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর এসেছে। আজ, শুক্রবার এবং কাল, শনিবারেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে ফের বাড়বে অস্বস্তি।
গত তিন দিন ধরে যে-সব জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ চলছিল, সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছে অনেকটাই। এ দিন দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল বাঁকুড়ায়, ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে গত তিন দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৫ ডিগ্রির বেশি। বীরভূমের শ্রীনিকেতনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ৪৬ ডিগ্রিতে। এ দিন তা নেমে এসেছে ৪০ ডিগ্রির নীচে। পুরুলিয়া, বর্ধমান শিল্পাঞ্চল, পশ্চিম মেদিনীপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমেছে। গত দু’দিন তাপপ্রবাহের কবলে থাকা কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছে সাড়ে ৩৬ ডিগ্রিতে। প্রায় সাড়ে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রা কমেছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমলে কী হবে, বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল তুঙ্গে। চূড়ান্ত অস্বস্তির মূল কারণ সেটাই। তাই এ দিন দুপুরে সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ফের ১৮০০ মেগাওয়াটের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। রাতে বৃষ্টির পরে বিদ্যুতের চাহিদা অবশ্য কমে গিয়েছে অনেকটাই। |