সীমান্তের ও-পারে ১০ বছর, মায়ের কাছে ফিরছে দু’ভাই
মায়ের কাছে ফিরছে দুই ভাই। দশ বছর পরে ফিরছে নিজের ভিটেয়। ফিরছে পর-দেশের সীমান্ত পেরিয়ে স্বদেশে।
বছর দশেক আগের এক দুপুরে খেলতে খেলতে ‘নিখোঁজ’ হওয়া দুই ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতিতে হতদরিদ্র, অক্ষরজ্ঞানহীন মা সাবিনা বিবি হন্যে হয়ে ঘুরেছেন পুলিশ-প্রশাসনের দোরে দোরে। খোঁজ মেলেনি। দুই ছেলেকে ফিরে পেতে ভাঙড়ের অজ গাঁয়ে মাটির চিলতে ঘরে একা, উদ্ভ্রান্ত মায়ের অধীর অপেক্ষার দিন কেটেছে। একরত্তি মেয়েকে আঁকড়ে বড় দুই ছেলের খোঁজে মাঠে জনমজুরের কাজ করা মা ছুটে বেড়িয়েছেন পরিচিত জনের ঘরে ঘরে। খুঁজে পাননি।
নিরাশ মায়ের কাছে মাস তিনেক আগে হঠাৎই পুলিশ আসে। জানতে পারেন, দুই ছেলে আইনুদ্দিন ও কামালউদ্দিন গাজিকে তিনি হারাননি। দু’জনেই একসঙ্গে রয়েছে এ দেশের কাঁটাতার পেরিয়ে পড়শি বাংলাদেশে। হাঁটতে হাঁটতে এ-পার পেরিয়ে ও-পারে ঢুকে পড়ার ‘অপরাধে’ তাঁর দুই ছেলের ঠিকানা এখন যশোহরের এক সরকারি হোম। সেখান থেকে ছেলেদের ফিরিয়ে আনা যে বেশ ‘দুরূহ’, পুলিশ অফিসারের কথায় মা বুঝেছিলেন। তার পরে মায়ের আর্তিতে দুই ভাইকে ফিরিয়ে আনতে ‘তৎপর’ হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ বাংলাদেশ হাই কমিশনে তদ্বির করে।
আইনুদ্দিন গাজি
কামালউদ্দিন গাজি
এ পারের আর্জিতে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকও নির্দেশ দেয় আইনুদ্দিন ও কামালউদ্দিনকে ভারতে ফিরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। দুই ছেলেকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় উদ্বেল মা খালি বলছেন, “দশটা বছর ছেলেদের খুঁজেছি। পাইনি। এখন ওরা ফিরে আসবে শুনে যেন আর অপেক্ষা করতে পারছি না। কবে যে দেখব ওদের!” যশোরের হোমেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে দুই ভাই। অয়্যারিংয়ের কাজ শিখেছে আইনুদ্দিন আর ছবি আঁকার নেশায় বুঁদ কামালউদ্দিন। দেশে, মায়ের কাছে আর কয়েক দিন পরেই ফিরে আসতে পারবে জেনে স্বভাবতই উল্লসিত তারা। আর পড়ানোর সামর্থ মায়ের নেই, জানে দুই কিশোর। হোমে শেখা কাজ করেই মাকে সাহায্য করতে চায় দুই ভাই।
ছেলে হারিয়ে যাওয়ার দিনটা মনে করে স্বামী পরিত্যক্তা সাবিনা বলছিলেন, “ভাঙড়ে বাপের ঘরে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে থাকতাম। মাঠে কাজে গিয়েছিলাম। বিকেলে ঘরে ফিরে ছেলেদের দেখতে পাইনি। পাড়ারও কেউ কিছু বলতে পারেনি। রাতেও ফিরল না দেখে খুঁজতে শুরু করি। কিন্তু খোঁজ পাইনি।” ২০০২ সালের ২০ অগস্ট হারানোর সময় আইনুদ্দিনের বয়স আট, কামালউদ্দিনের ছয়। পুলিশের কাছেই সাবিনা জেনেছেন, পরিচিত কারও সঙ্গে তাদের বাবার বাড়ি বসিরহাটে চলে গিয়েছিল দুই ছেলে। আর সেখান থেকেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ। হোমে দুই নাবালক অনুপ্রবেশকারীর মুখে বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানা ভাসাভাসা জেনে বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রক খোঁজ-খবর শুরু করে। কিন্তু মায়ের খোঁজ পেতে আর প্রশাসনিক ছাড়পত্র মিলতে কার্যত ‘নির্দোষ’ ছেলে দু’টিকে হোমের অন্তরালেই কাটাতে হল পাক্কা দশটা বছর!
যে হোমে দুই ভাই রয়েছে, সেই হোমের উন্নয়ন-পরিচালন কমিটির সদস্য ও স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক ও তফজ্জল হোসেন বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে তাদের মায়ের খোঁজে চলতি বছরের শুরুতে যোগাযোগ করেন কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। কলকাতার সংস্থার তরফে সুনন্দা বসু দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশের সাহায্যে খোঁজ পান সাবিনার। আর সেখান থেকেই মায়ের কাছে দুই ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য এ রাজ্যের তরফে প্রশাসনিক ‘তৎপরতা’ শুরু হয়। আইনুদ্দিন ও কামালউদ্দিন যে ভারতীয় নাগরিক, তার নথিপত্র-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের জেলাশাসক নারায়ণ স্বরূপ নিগম সপ্তাহ দুয়েক আগে দরবার করেন ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে। জেলাশাসকের কথায়, “ছেলে দু’টির নাগরিকত্ব ও সঠিক পরিচয় চেয়েছিল বাংলাদেশ। খোঁজ নিয়ে তা সঠিক বলে জানিয়ে ওদেরে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।” নিগমের সেই আর্জির প্রেক্ষিতে দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক দুই ভাইকে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
হোমের গণ্ডি পেরিয়ে সপ্তাহখানেকের মধ্যে মায়ের কাছে দুই ছেলে ফিরে আসতে পারবে বলেই মনে করছে এ-পার, ও-পার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.