মাথার উপরে গনগনে রোদ। তার মধ্যেই স্কুলের সামনে ধর্নায় বসেছে শতাধিক শিশু। তাদের দাবি, কুলোরি প্রাথমিক স্কুলে দু’বছর থেকে বন্ধ মিড ডে মিল আবার চালু করতে হবে। তারা জানিয়েছে, যত দিন না স্কুলে মিড ডে মিল চালু হবে, তত দিন তারা ক্লাস করবে না।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ পাণ্ডে বলেন, “স্কুলে মিড ডে মিল চালু করার দায়িত্ব বিডিও-র।” বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, “স্কুলে রান্না করবে কে তা নিয়ে বিডিও-র বিভ্রান্তিকর প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করার ফলেই পরিস্থিতি জটিল আকার নিয়েছে।” তিনি জানান, সরকারি নিয়ম মেনেই একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা রান্না করছিলেন। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “কিন্তু তারপরে জামুয়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের কথায় বিডিও গ্রামের দুই মহিলাকে রান্নার দায়িত্ব দিয়েছেন। এর ফলেই বিবাদের শুরু।” ওই দুই মহিলার দাবি, বিডিও তাঁদের নিয়োদ করেছেন, তাই তাঁরাই রান্না করবেন। অন্য দিকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দাবি, তাঁরা সরকারি নির্দেশ মেনেই রান্না করছিলেন, রাতারাতি তাঁদের এ ভাবে সরিয়ে দেওয়া যায় না। এই বিবাদের জন্যই ওই স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না বন্ধ।
রঘুনাথগঞ্জ ১ বিডিও বুদ্ধদেব দাসের কথায়, “জামুয়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের রিপোর্টের ভিত্তিতেই দুই মহিলাকে রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক অবশ্য জানিয়েছেন স্কুলে এত দিন ধরে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা রান্না করছেন। এই অবস্থায় দু’পক্ষকে নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেও সমস্যা মেটেনি। তাই ওই স্কুলে অনেক দিন ধরেই মিড ডে মিল বন্ধ হয়ে রয়েছে।” |
প্রধানত তফসিলি জাতিভুক্ত মানুষের বাস এই গ্রাম। বেশিরভাগই খুব দরিদ্র। মিড ডে মিলের চাহিদাও ছিল। স্কুলের রান্না ঘর অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। মিড ডে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ছাত্রদের উপস্থিতির হার কমে গিয়েছে। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মাধব সরকার বলেন, “একটি পরিষেবামূলক প্রকল্প দু’বছর ধরে বন্ধ। অথচ প্রশাসনিক ভাবে কোনও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিডিও কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না।” সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বিনয় মাঝি বলেন, “এই নিয়ে বেশ কয়েকবার বিডিও-র সঙ্গে কথা হয়েছে কিন্তু জট খোলেনি। সরকারি নিয়ম মতোই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা কাজ করছিলেন। তাঁদের হঠাৎ বাদ দিয়ে দু’জনকে দায়িত্ব দেওয়া হল কেন?” স্কুলের শিশুরা এত ঘোরপ্যাঁচ বোঝে না। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সীতা মণ্ডলের কথায়, “আমার বাবা দিনমজুর। স্কুলে মিড ডে মিল বন্ধ। এখন সে খাবার পাই না। বাড়ি গিয়ে দুপুরের পর খাবার সুযোগ পাই।” বিপাসা মণ্ডলের কথায়, “মিড ডে মিলে মাছ, ডিম দেওয়া হত। সে সব বন্ধ। তাই স্কুলে ধর্নায় বসেছি।” বিডিও বুদ্ধদেববাবু বলেন, “আবার চেষ্টা করা হবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে ওই স্কুলে মিড ডে মিল চালু করার।”
জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক এনাউর রহমান বলেন, “দরিদ্র স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য মিড ডে মিল খুবই ভাল প্রকল্প। কুলোরির মানুষকে তা বুঝতে হবে। আমি বিডিওকে বলেছি, বিরোধ মিটিয়ে মিড ডে মিল চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।” |