|
|
|
|
নন্দীগ্রাম মামলা |
সিনিয়রদের ‘ছেড়ে’ সিবিআই চার্জশিট দিতে চায় অধস্তনদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনায় ‘অভিযুক্ত’ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার যে অনুমতি চেয়েছে সিবিআই, তা খতিয়ে দেখছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মহাকরণে এ কথা জানান মুখ্যসচিব সমর ঘোষ।
রাজ্যের যে দুই আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে সিবিআই, তাঁরা হলেন সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবাশিস বড়াল। বর্তমানে কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসডি) সত্যজিৎবাবু সেই সময়ে হাওড়া পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। ‘আইন-শৃঙ্খলা’ সামাল দেওয়ার ডিউটি দিয়ে তাঁকে নন্দীগ্রামে পাঠানো হয়েছিল ১৪ মার্চের আগের দিন। এবং দেবাশিসবাবু ছিলেন তমলুকের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। দিন কয়েক আগে তাঁকে রেল পুলিশ সুপারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে খড়্গপুরে। আর তৃতীয় যে পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার অনুমতি চেয়েছে সিবিআই, তাঁর নাম শেখর রায়। ঘটনার সময় তিনি নন্দীগ্রাম থানার আইসি ছিলেন, বর্তমানে বিধাননগর (পূর্ব) থানার দায়িত্বে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, ফৌজদারি মামলা শুরু করার পাশাপাশি সেই সময়ে নন্দীগ্রামে কর্তব্যরত একাধিক আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে ওই তদন্তকারী সংস্থা। তাঁরা হলেন, তৎকালীন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) অরুণ গুপ্ত, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) এন রমেশবাবু এবং পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার গঞ্জি শ্রীনিবাসন। এর বাইরেও ওই জেলার সাধারণ প্রশাসনের কয়েক জন অফিসারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে সিবিআই।
পুলিশ-প্রশাসনে প্রশ্ন উঠেছে, গুলি চালনার দিন যে তিন জন উর্ধ্বতন অফিসার সরাসরি নন্দীগ্রামের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই কেন শুধু ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করল? আর নিচুতলার যে পুলিশ অফিসারেরা ওই কর্তাদের ‘নির্দেশ’ পালন করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ফৌজদারি মামলা শুরু করার অনুমতি চাইল সিবিআই?
এ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি সিবিআইয়ের ডিআইজি (স্পেশাল ক্রাইম ২) অরুণ বোথরা। রাজ্য সরকারকে যে চিঠি পাঠিয়েছে সিবিআই, তাতে ওই ডিআইজি-ই সই করেছেন। এ দিন রাতে তাঁকে দিল্লিতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বোথরা বলেন, “১৫ দিন আগেই আমরা ওই অনুমতি চেয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছি।” কেন তিন ‘সিনিয়র’ অফিসারকে ছেড়ে দুই অধস্তন আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে চাইছে সিবিআই? সরাসরি জবাব এড়িয়ে বোথরা বলেন, “সিবিআইয়ের মুখপাত্রই বলতে পারবেন।”
গত ক’বছরে রাজ্যে যে ক’টি বড় ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিবিআই, প্রায় সব ক’টিই দেখভাল করছেন অরুণ বোথরা। এর মধ্যে যেমন নন্দীগ্রামের গুলি চালানোর ঘটনা রয়েছে, তেমনই রয়েছে রিজওয়ানুর মামলাও। এমনকী, নেতাইয়ে গণহত্যা ও জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার মামলাও দিল্লিতে বসে দেখভাল করছেন বোথরা। ওড়িশা ক্যাডারের ওই আইপিএস অফিসার এক সময়ে কলকাতায় সিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের সুপার ছিলেন। পরে ডিআইজি হয়ে চলে যান দিল্লিতে।
২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনার পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। কিন্তু ওই তদানীন্তন বাম সরকার ওই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেই সূত্রে মামলা চালানোর নির্দেশ দিলেও চার্জশিট দিতে সিবিআই-কে বারণ করে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে, তদন্ত শেষ হয়ে গেলেও মামলার চার্জশিট জমা দিতে পারেনি তারা। এর পরে রাজ্যের ক্ষমতায় এসে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ওই মামলা তুলে নেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এর ফলে চার্জশিট দেওয়ার বিষয়ে নতুন করে উদ্যোগী হয় সিবিআই। দুই আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুমতি চাওয়া সেই উদ্যোগেরই অংশ বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। তবে, উচ্চপদস্থ আইপিএস অফিসারদের যে ভাবে ‘আড়াল’ করার চেষ্টা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সিবিআইয়ের অভ্যন্তরেও। |
|
|
|
|
|