কত লোক হবে তখন রোলাঁ গারোর সেন্টার কোর্টে? মেরেকেটে শ’দুয়েক হবে কি না সন্দেহ।
প্রায় ফাঁকা স্টেডিয়াম, দ্বিতীয় সেট জিতে যখন ইতিহাস গড়ার মুহূর্তে মহেশ-সানিয়া, ভারতীয় জুটির সমর্থনে গ্যালারিতে তখন শুধু বসে সানিয়ার বাবা ইমরান মির্জা, ফিটনেস ট্রেনার রবার্ট ও আরও গুটিকয়েক সাপোর্ট স্টাফ। উইনার মেরে ম্যাচ জিতে উঠে যখন
মহেশ-সানিয়া একে অপরের আলিঙ্গনাবদ্ধ, ভারতীয় সময় তখন মধ্যরাত পেরিয়েছে।
মহেশের এই নিয়ে ১২টা গ্র্যান্ড স্লাম খেতাব হল, তার মধ্যে মিক্সড ডাবলস খেতাবই আটটি। সানিয়াকে জুটি করে দ্বিতীয় বার। এই নিয়ে দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম খেতাব সানিয়ার, যিনি গত বার এই রোলাঁ গারোতেই ডাবলসে রানার্স। আবেগের বহিঃপ্রকাশ যে সানিয়ার ক্ষেত্রেই বেশি হবে, স্বাভাবিক। প্রথা মতো ট্রফি হাতে আলোকচিত্রীদের ‘পোজ’ দেওয়ার পরে হায়দরাবাদের তরুণী অগ্রজ দোসরকে দিলেন দরাজ সার্টিফিকেট। “আমি ভাগ্যবতী যে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ডাবলস প্লেয়ারের সঙ্গে খেলতে পাই। আমার কাজটা আজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল মহেশ।
তা ছাড়া আজ মহেশের জন্মদিন। আমার মনে হয় না ট্রফিটা জেতার পর আর কোনও উপহার ওকে দিতে হবে!” |
সানিয়ার বক্তব্য শুনতে শুনতে আপ্লুত লাগে মহেশকে। যিনি মাইক হাতে বলে ওঠেন, “সানিয়া অনবদ্য টেনিস খেলেছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় সেটে। অনেক দিন পরে একটা গ্র্যান্ড স্লাম জিতলাম। এই ট্রফিটা আমার চার মাসের মেয়ের জন্য। যে হয়তো এটা টিভিতে দেখল।” তার আগেই সানিয়া ধন্যবাদ জানিয়েছেন গোটা দেশকে। “আমার বাবা, সাপোর্ট স্টাফ এবং আমার পরিবার সহ গোটা দেশকে ধন্যবাদ। স্বপ্ন সত্যি হল বলতে পারেন।”
ফরাসি ওপেনের মিক্সড ডাবলস ফাইনালে ফলাফল বলতে মহেশদের পক্ষে ৭-৬ (৭-৩), ৬-১। ভারতীয় জুটির ইতিহাস গড়তে লাগল ১ ঘণ্টা ১৩ মিনিট। ম্যাচের ব্যাখ্যা এলে প্রথমেই উঠে আসবে মহেশের দুর্দান্ত প্রথম সার্ভিস এবং প্রথম দিকে ছন্দ হারানো সানিয়ার দ্বিতীয় সেটে ঘুরে দাঁড়ানো ও অনবদ্য কিছু গ্রাউন্ড স্ট্রোক। দ্বিতীয় সেটে মহেশ যদি বেসলাইনে অপ্রতিরোধ্য হন, নেটে ক্ষিপ্রতমা ছিলেন সানিয়া। একটা ভলিও বাইরে পড়েনি, মেরেছেন একের পর এক উইনার। এই জয় আরও তাৎপর্যের, কারণ এর পরে ভারতীয় টেনিসপ্রেমীরা অলিম্পিকে টেনিসের পদক আসা নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারেন। মহেশকে নিয়ে এর আগে ২০০৯ অস্ট্রেলীয় ওপেনে জিতেছিলেন সানিয়া। কোনও ভারতীয় মেয়ের সেটাই প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জয়।
শেষমেশ ট্রফিটা এলেও ফাইনালের শুরুটা কিন্তু ভাল হয়নি ভারতীয় জুটির। ম্যাচের শুরুতে সানিয়াকে দেখে মনে হচ্ছিল স্নায়ুর চাপ চেপে বসেছে। সহজ ভুল করছিলেন। সানিয়ার সার্ভিস ভেঙে প্রথম সেটে ৩-১ এগিয়ে যায় পোলিশ-মেক্সিকান জুটি ইকনাসিচ-গঞ্জালেস। তখন সানিয়ার প্রথম সার্ভিস জায়গায় পড়ছে না, প্রায়শই বিপন্ন দেখাচ্ছে তাঁকে।
এই ধরনের ফাইনালে অভিজ্ঞতা যে অমূল্য তার নমুনা নিঃসন্দেহে মহেশ। বারবার সাহস জুগিয়েছেন সানিয়াকে, কখনও কখনও পিঠে হাত রেখে বুঝিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজে খেলে গিয়েছেন ক্লে কোর্টের উপযোগী বেসলাইন নির্ভর নিখুঁত টেনিস। ফল মিলেছে হাতেনাতে। উদ্বুদ্ধ সানিয়া দ্বিতীয় সেটে ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। সার্কিটে বারবার জুটি বদল করেছেন মহেশ, এ বার বোধহয় সানিয়ার সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার সময় এসেছে।
অলিম্পিকে টেনিসের পদক আসুক না আসুক, বৃহস্পতিবার রোলাঁ গারোয় অবশ্যই ভারতীয় টেনিসের বসন্ত। |