সম্পাদকীয় ২...
মরণদৌড়
রুরি অবস্থায় জরুরি পদক্ষেপ করাই দস্তুর। কিন্তু জরুরি পদক্ষেপও যাহাতে সর্ব ক্ষেত্রে সম ভাবে করা হয়, তাহা দেখাও একটি প্রয়োজনীয় কাজ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হইবে, এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে ন্যক্কারজনক ঔদাসীন্য দেখাইলেই চলিয়া যাইবে, এই পদ্ধতিতে যে প্রশাসন ব্যবস্থা চলে, তাহাকে আর যাহাই হউক, সুবুদ্ধিচালিত বলা যাইতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে যে অতি-দাবদাহ চলিতেছে, তাহা জরুরি অবস্থার অপেক্ষা কোনও অংশে ন্যূন নহে। গত কয়েক দিনে কেবল দক্ষিণবঙ্গেই শতাধিক প্রাণ চলিয়া গিয়াছে গ্রীষ্মের অসহ প্রতাপে। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণ কী, সে সকল বিচার-বিবেচনা অন্যত্র। কিন্তু প্রশাসনের প্রাথমিক কাজ, অস্বাভাবিকতার মোকাবিলা করিয়া নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যে সকল মানুষকে কর্মযোগে পথে নামিতেই হয়, তাঁহাদের উপযুক্ত তাপ-প্রতিরোধী পদ্ধতির সন্ধান দেওয়া জরুরি, যে সকল মানুষের উন্মুক্ত পরিবেশে বিচরণ না করিলেও চলে, তাঁহাদের সেই মর্মে নির্দেশ দেওয়া জরুরি। কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের নির্দেশ কিংবা সন্ধান চলিতেছে, তাহা ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান। ট্র্যাফিক পুলিশ বাহিনীর হাতে ও আর এস-এর বোতল তুলিয়া দিতেছেন পুলিশ কমিশনার স্বয়ং, এই ছবি ইতিমধ্যেই পরিচিত। মহানগরীর সকল ট্র্যাফিক পুলিশের ক্ষেত্রেই এই ব্যবস্থা নির্ধারিত হইতেছে, এমন আশাই ইহাতে সঞ্জাত হয়। সরকারি ও সরকারি-অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলির গরমের ছুটি আরও কয়েক দিন প্রলম্বিত করিয়া ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তাবিধানের সিদ্ধান্ত শোনা গিয়াছে। আশা করা যাইতেছিল, প্রশাসনিক কর্তারা সম্যক ভাবে অবহিত, কোন পথে অগ্রসর হইলে এই প্রাণঘাতী আবহাওয়ায় রাজ্যবাসীকে খানিক নিরাপত্তাদান সম্ভব।
সেই আস্থা টলিয়া গেল রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর পরীক্ষাকাণ্ডের সংবাদে। এই অস্বাভাবিক আবহাওয়ার মধ্যেও পুলিশবাহিনীতে যোগ দিবার লক্ষ্যে যে প্রতিযোগিতা, তাহা পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী চলিতেছিল, শারীরিক পরীক্ষাংশগুলি যথাবিধি সংঘটিত হইতেছিল। ফল: কিছু প্রতিযোগী প্রাণ হাতে করিয়া দৌড়-লাফ-ঝাঁপ করিতে পারিলেও অভিষেক পাল নামে বাইশ বছরের এক যুবা দৌড়-পথেই প্রাণ হারাইলেন। এই পরীক্ষা-প্রক্রিয়া কেন কিছু কালের জন্য স্থগিত হয় নাই বোঝা দুষ্কর। পুলিশকর্তাদের একাংশই কিন্তু এই গরমে পরীক্ষা চালাইবার বিষয়ে আপত্তি তুলিয়াছিলেন। কী যুক্তিতে তাঁহাদের সঙ্গত আপত্তি খারিজ হইল, জানা নাই। তবে সন্দেহ হয়, কাজের ধরন-নির্বিশেষে মানুষকে যথাযথ গুরুত্ব দিবার জন্য যে সংবেদনশীলতার প্রয়োজন হয়, তাহার অভাব হইতেই এই অমানুষিক সিদ্ধান্ত।
শারীরিক দক্ষতা দেখাইয়া পুলিশের চাকরি পাইতে যাঁহারা আগ্রহী, তাঁহাদের দক্ষতা দেখাইতেই হইবে, সন্দেহ নাই, বিশেষত এই কারণেও যে পুলিশের কাজে এই দক্ষতা অবশ্যপ্রয়োজনীয়ও বটে। কিন্তু এই অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা মাঠে বড় সময় ধরিয়া তাঁহাদের সেই দক্ষতার প্রমাণ দিতে বাধ্য করিবার মধ্যে পুলিশ-প্রশাসনের এক তীব্র অসংবেদনশীলতা রহিয়াছে, যাহা পশ্চিমবঙ্গবাসীর নিকট আদৌ অপরিচিত নয়। দুর্ভাগ্যজনক। বর্তমান রাজ্য প্রশাসন যে পরিবর্তনের শপথ লইয়া আসিয়াছে, তাহার তালিকায় সবচেয়ে জরুরি হওয়া উচিত ছিল এই সংবেদনশীলতার বিষয়টিই। এবং সর্বত্র তাহার প্রয়োগের নীতিটি। অকারণ এই প্রাণ-বিনাশের দায় কাহার, তাঁহারা বুঝিতেছেন কি? অন্তত ভাবিয়া দেখিতেছেন কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.