সম্পাদকীয় ১...
সংখ্যায় লঘু বলিয়াই?
ভারতের প্রধান সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রকৃত চিত্রটি তুলিয়া ধরিতে রাজিন্দর সিংহ সাচারের নেতৃত্বে যে কমিটি গড়া হয়, তাহার সুপারিশে মুসলিমদের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব ছিল। মুসলিম-প্রধান এলাকাগুলিতে থানায় অন্তত একজন করিয়া মুসলিম ইনস্পেক্টর বা সাব-ইনস্পেক্টর নিয়োগ করা ছিল তেমনই একটি প্রস্তাব। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্য দূর করিতে তত নয়, এই প্রস্তাব দেওয়া হয় সংখ্যালঘুদের মনে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করিতে। প্রশ্ন হইল, এই সামান্য কাজটুকু কত দূর অগ্রসর হইয়াছে? কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির কাছে ইহা জানিতে চাহিয়াছে, যেহেতু থানায় নিয়োগের বিষয়টি পুরোপুরিই রাজ্যের এক্তিয়ার। কিন্তু কোনও রাজ্যই এ ব্যাপারে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ দেয় নাই। কেননা সব রাজ্যই সংখ্যালঘু উন্নয়নের বিষয়টিকে হয় প্রতীকী অনুগ্রহ-বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখিয়াছে, নতুবা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে পারিতোষিক বা উৎকোচ বিলির বন্দোবস্তে পরিণত করিয়াছে।
পশ্চিমবঙ্গের কথাই ধরা যাক। এখানে সংখ্যালঘু উন্নয়ন বলিতে সরকার বুঝিয়াছে নজরুল ইসলামের নামে অকাদেমি প্রতিষ্ঠা, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সহিত ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি জোড়া হইবে কিনা, সে সংক্রান্ত অবান্তর বিতর্ক, ফুরফুরা শরিফ অবধি ট্রেন চালানো কিংবা ইমাম-মুয়েজ্জিনদের মাসিক ভাতা প্রদান। মুসলমান সমাজের কোনও বৃহত্তর মঙ্গল বা কল্যাণ ইহাতে হইবার নয়। অথচ পুলিশে কনস্টেবলের চাকুরির জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম যোগ্যতা বহু মুসলিম যুবকের থাকা সত্ত্বেও মুসলিম-প্রধান এলাকায় ইনস্পেক্টর দূরস্থান, মুসলিম কনস্টেবলও যথেষ্ট সংখ্যায় দেখিতে পাওয়া যায় না। রাজ্যের যে সব জেলায় মুসলিমরা জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশেরও বেশি, সেখানে স্রেফ সামাজিক সন্তুলনের স্বার্থেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্য হইতে পুলিশ, প্রশাসনিক অফিসার, বিচারবিভাগীয় কর্মী নিয়োগ করা উচিত। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ক্রমশ কোণঠাসা করিতে করিতে কালক্রমে তাঁহাদের ‘নেই’ করিয়া দিবার, অস্তিত্বহীনতার অপরিচয়ে ঠেলিয়া দিবার যে-অনুশীলন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় রাষ্ট্র সুপরিকল্পিত ভাবে করিয়া আসিয়াছে, তাহার কাছে সংখ্যালঘু কল্যাণের দায়বদ্ধ কর্মসূচি রূপায়ণের প্রত্যাশা দুরাশা মাত্র। এই রাষ্ট্র ধর্মধ্বজীদের বাহবা কুড়াইতে হজ-যাত্রীদের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা রাখে, কিন্তু মুসলিম পড়ুয়াদের জন্য স্কুল, মুসলিম কর্মপ্রার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত রাখে না।
এ ভাবেই সংখ্যালঘুরা অপরিচয়ের অন্ধকারে থাকিয়া যান। সংখ্যাগুরুর সহিত তাঁহাদের সংযোগ ও সংশ্রবের বিন্দুগুলি হারাইয়া যায়। নাগরিক সমাজে এই সমস্যা জটিলতর। গ্রামসমাজে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সংযোগ ঐতিহ্যবাহিত, তাহা সম্ভবত এখনও সম্পূর্ণ নির্মূল হয় নাই। কিন্তু শহরে অপরিচয় প্রায় ষোলো আনা দাঁড়াইয়াছে। এই ভয়াবহ অপরিচয় দূর করিতে যত্নবান হইলে সংখ্যালঘু মানুষ আপনাকে সমাজের স্বাভাবিক এবং অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে গণ্য করিতে পারিতেন, তাঁহাদের আজও মানসিকতায় সংখ্যালঘু হইয়া থাকিতে হইত না। এক দিকে সংখ্যালঘুদের ক্রমশ প্রান্তিক করিয়া দিব, সব ধরনের সংস্থা ও সংগঠনে তাহাদের জনসংখ্যার আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব খর্ব করিয়া তাহাদের ক্ষমতায়নের যাবতীয় সম্ভাবনা ঘুচাইয়া দিব, অন্য দিকে মাদ্রাসা-শিক্ষার মধ্যযুগীয় অনগ্রসরতাকে প্ররোচনা দিয়া ইমাম-মৌলানার কর্তৃত্বকে বাড়তি বৈধতায় মণ্ডিত করিব ইহাই কি ভারতীয় গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সংখ্যালঘু উন্নয়নের নীতি? প্রান্তিকতা হইতে প্রাগ্রসরতায় উত্তরণ নয়, অতীতের গৌরব ও মহিমা হইতে বর্তমানের অপ্রাসঙ্গিকতায় নিক্ষেপণই সরকারের সংখ্যালঘু নীতি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.