এক পরিবারের পিছনে সিপিএম, অন্যটির পিছনে তৃণমূল।
সুসংহত শিশুবিকাশ কেন্দ্রের (আইসিডিএস) জন্য তৈরি দু’টি ঘর বছরখানেক দখল করে রাখার অভিযোগ রয়েছে দু’টি পরিবারের বিরুদ্ধে। কেতুগ্রাম ২ ব্লকের মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের চরসুজাপুর গ্রামে ওই দু’টি কেন্দ্র। যদিও দুই দলই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে ঘর দখলে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলতেও ভোলেনি।
এ দিকে, এই ঘর দখলের জাঁতাকলে পড়ে মাসুল দিচ্ছেন গ্রামের ১৫ ও ১০১ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশু ও প্রসূতিরা। রাস্তার ধারেই চলছে কেন্দ্রের কাজকর্ম। শিশুদের পড়াশোনা থেকে পরিপূরক পুষ্টি প্রকল্পের যাবতীয় কাজ সারতে হচ্ছে সেখানেই। বৃহস্পতিবার কেতুগ্রাম ২-এর বিডিও হেমন্তকুমার ঘোষ বলেন, “ওই পরিবার দু’টিকে বারবার বোঝানো হয়েছে। তাতে লাভ হয়নি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ঘর না ছাড়লে ওদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চরসুজাপুর গ্রামটি নদিয়ার কালিগঞ্জ ব্লক লাগোয়া। সেখানে দু’টি সুসংহত শিশুবিকাশ কেন্দ্রের ঘর তৈরি হয়েছিল ২০১০ সালে। সেই মতো ১৫ নম্বর অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র তৈরি হয় চরসুজাপুর মাঠপাড়ার এক টুকরো খাসজমিতে। ১০১ নম্বর কেন্দ্রের জন্য জমি দেন মান্নান শেখের পরিবার। প্রথমটি তৈরি করতে প্রায় তিন লক্ষ দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এখন সেখানে বোঝাই করা রয়েছে খড়। ব্লক অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পরেই ১৫ নম্বর কেন্দ্রের পাশে বসবাসকারী মুর্শেদ শেখের পরিবার সিপিএমের মদতে কেন্দ্রটি দখল করে নেয়।
মুর্শেদ দিন মজুরি করে সংসার চালান। তাঁর স্ত্রী মঞ্জিলা বিবির দাবি, “আমাদের জমিতেই ওই কেন্দ্রটি তৈরি হয়েছে। জমি নেওয়ার সময়ে সরকার থেকে আমার মেয়েকে চাকরি ও আমাদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সরকার সেই প্রতিশ্রুতি মানতে চাইছে না।” তাঁর বক্তব্য, “আমরা সরকারি সম্পত্তি দখল করতে চাই না। প্রতিশ্রুতি পূরণ হলেই ঘর ছেড়ে দেব।” নিজেকে ‘সিপিএম সমর্থক’ বলেও তিনি দাবি করেন।
কেতুগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির আরএসপি সদস্য মুজিবর রহমান অবশ্য পাল্টা বলেন, “কেউ চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়নি। খাস জায়গায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের পরে সিপিএমের মদতে মুর্শেদ শেখরা ওই কেন্দ্রটি দখল করে নিয়েছে।” তবে সিপিএমের দাবি, তাঁদের কোনও সমর্থকই সরকারি ঘর দখল করেননি। দলের কেতুগ্রাম ২ লোকাল কমিটির সদস্য গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের মদতেই ওরা ঘরের দখল নিয়েছে। গ্রামবাসীদের চাপের মুখে পড়ে তৃণমূল আমাদের দোষ দিচ্ছে।”
১৫ নম্বর কেন্দ্রের আওতায় রয়েছেন ১১০ জন। ওই কেন্দ্রের কর্মী মোশাফুল মুশিম্বা খাতুন জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে রাস্তার ধারেই চলছে ওই কেন্দ্রের কাজ। তিনি বলেন, “আশা করেছিলাম, আমাদের সমস্যা মিটতে চলেছে। কিন্তু ঘর তৈরির পরেও রাস্তার ধারই আমাদের ঠিকানা থেকে গেল।”
১০১ নম্বর কেন্দ্রের ঘর আবার তৃণমূলের মদতে স্থানীয় মান্নান শেখের পরিবার দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁরাই আগে ওই কেন্দ্রের জন্য জমি দিয়েছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রটি তৈরির জন্য প্রায় দু’লক্ষ ষাট হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। মুর্শেদের পরিবার ১৫ নম্বর কেন্দ্রের দখল নেওয়ার পরেই মান্নানের পরিবার ১০১ নম্বরের দখল নেন। ফলে ঠিকাদার গোষ্ঠীর পক্ষে সেটির নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করাও সম্ভব হয়নি। মান্নানের দাদা হান্নান শেখের দাবি, “সরকারি অনুদানের টাকায় আমাদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তা পূরণ না হলে ঘর ছাড়া যাবে না।” নিজেদের ‘তৃণমূল সমর্থক’ বলে দাবি করে তিনি বলেন, “সিপিএমের মদতে একটি পরিবার ১৫ নম্বর দখল করেছে জানার পরে আমরাও নিজেদের দাবি আদায়ের রাস্তা নিয়েছি।” তবে কেতুগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল নেতা দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “প্রশাসনের উচিত ঘরগুলি দখলমুক্ত করে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে ফিরিয়ে দেওয়া।”
|