অভাবের সংসার। কখনও দিনমজুরি, কখনও ইটভাটায় কাজ করে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায় ৭৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে রায়গঞ্জ ব্লকের দেবীনগর গয়ালাল রামহরি উচ্চ বিদ্যাপিঠের ছাত্র গৌতম বর্মন। প্রাপ্ত নম্বর ৫৩১। রায়গঞ্জ ব্লকের ১২ নম্বর বরুয়া পঞ্চায়েতের কালীপুকুরের বাসিন্দা গৌতমের পরিবারের সকলেই দিনমজুরির কাজ করেন। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে গৌতমের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশুনা করার ইচ্ছে রয়েছে। পড়াশোনার টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিপিএল তালিকাভুক্ত ওই পড়ুয়ার পরিবারের লোকজনেরা। ছেলের পড়াশুনার ইতি এখানেই টানতে হবে আশঙ্কা করে ভেঙে পড়েছেন গৌতমের বাবা মুরারিবাবু ও মা মণিকা দেবী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী গোস্বামী বলেন, “সংসারের হাল ধরতে দিনমজুরি ও ভাটায় কাজ করে গৌতম মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলে সর্বোচ্চ পেয়েছে। ওর ফলে আমরা গর্বিত। আমরা সবসময় গৌতমকে পড়াশোনার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছি। ও বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়াশোনার সমস্ত খরচ বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রমথনাথ রায় বলেন, “গৌতমের পাশে রয়েছি। টাকার অভাবে তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হবে না।” গৌতমের বাবা ও মা সারা বছর অন্যের জমিতে দিনমজুরির কাজ করেন। একচিলতে উঠোনে টিনের চাল দেওয়া বেড়ার ঘরে তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁরা বসবাস করেন। গৌতমের দাদা মহেশ্বর ৮ বছর আগে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে দিনমজুরির কাজে যোগ দিয়েছেন। ভাই আদিত্য দশমের ছাত্র হলেও ইটভাটায় কাজ করে। গৌতম প্রায় দু’বছর আগে অন্যের জমিতে দিনমজুরির কাজ করলেও মাধ্যমিকের পর সে ভাটায় কাজ করতে শুরু করে। গৌতম বলে, “দিনমজুরির কাজ করতাম। নিয়মিত স্কুলে যেতে পারতাম না। কোনও প্রাইভেট টিউশন ছিল না। শিক্ষকরাই বই, খাতা দিয়ে ও পড়া বুঝিয়ে সাহায্য করেছেন। সন্ধ্যায় বাড়িতেও ঠিকমতো পড়াশুনা করতে পারতাম না।” ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে গৌতমের। মুরারিবাবু বলেন, “সবাই কাজ করলেও টাকার অভাবে সংসার চলে না। কেউ পাশে না এলে ছেলের পড়ায় ইতি টানতে হবে।” |