‘একটুকু ছোঁয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি’। সারা দিন ল্যাপটপে এই গান ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুনতে শুনতে ধূপগুড়ি পুর ভোট পরিচালনা করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রবিবার সকাল থেকে ছিলেন খুট্টিমারি বনবাংলোয়। জঙ্গলের মাঝে বনবাংলো থেকে সেভাবে মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। সেজন্য দুপুরের আগে আগে চলে যান গয়েরকাটার পূর্ত দফতরের বাংলোয়। সেখান থেকে সারাক্ষণ কোন ওয়ার্ডে ভোট কেমন হচ্ছে, অশান্তি হচ্ছে কী না সে খবরাখবর রাখছিলেন মন্ত্রী। গৌতমবাবুর কথায়, মানুষ এবার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাদের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। যা মনে হচ্ছে তাতে আমরা ১২-১৩ টি আসনে জিতে পুরবোর্ড গঠন করব।” ভোট চলাকালীন ১৫ মিনিট ধরে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হওয়াটা তৃণমূলের পক্ষে শুভ বলে মনে করেন মন্ত্রী। পরনে গাঢ় নীল রঙের টি সার্ট কালো ট্রাউজার পড়ে গয়েরকাটা পূর্ত দফতরের বাংলোর খাটে হেলান দিয়ে সর্বক্ষণ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন তিনি। পাশের খাটে রাখা রাউন্ডে ল্যাপটপে আবহসঙ্গীত হিসাবে অনবরত বেজে চলছিল রবীন্দ্রনাথের গান। আর মাঝে মধ্যে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন পরিসংখ্যানগুলির উপর। |
গৌতমবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের উপর ধূপগুড়ি পুরসভা নির্বাচনের দায়িত্ব পড়ে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হওয়া থেকে শুরু করে, নীতিগত ভাবে এবার বিজেপিকে সঙ্গে না নিয়ে একক ভাবে তৃণমূলের লড়াই করাটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে হয় মূলত গৌতমবাবুকে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরে প্রতিনিয়ত ধূপগুড়িতে গিয়ে প্রচার করেছেন গৌতমবাবু। প্রতিটি ওয়ার্ডে সভা থেকে পদযাত্রা করে প্রার্থীদের হয়ে নিজে নাগরিকদের বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রচার সেরেছেন স্বয়ং মন্ত্রী। রাজ্যের একজন হেভিওয়েট মন্ত্রী যে ভাবে নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে অনেকটাই ‘ব্যাকফুটে’ যেতে হয় সিপিএমকে। রাজ্য মন্ত্রিসভায় থাকা ও সরকার নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়ায় ভোটের দিন নির্বাচনী বিধি নিষেধ মেনে ধূপগুড়ি পুর এলাকায় বাইরে কাটাতে হয় গৌতমবাবুকে। উদ্বেগ কাটাতে তাই তিনি বেছে নেন রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোনকে সঙ্গী করেন তিনি। কখনও বাজছে, ‘এই করেছ ভাল, নিঠুর হে’, ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’। আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি’। গৌতমবাবুর কথায়, “বরাবর আমি রবীন্দ্রনাথের গান শুনি। রবীন্দ্র সঙ্গীতে ক্লান্তি, টেনশন দূর হওয়ার পাশাপাশি অণুপ্রেরণা জোগায়।” পূর্ত দফতরের ওই বাংলো গান শোনা এবং পুরভোটের খবরাখবর নেওয়ার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। অভাব অভিযোগের কথা শোনেন। কিছু জায়গা থেকে নদীবাঁধ, সেতু-সহ নানা দাবি মন্ত্রীর কাছে জমা পড়ে। পুরভোট মিটলে সমস্ত বিষয় দেখা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গে তার দু’দফা ভোট নিয়ে ফোনে কথা হয়। সন্ধ্যায় কর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে দু’লাইনের এসএমএস পাঠান দলনেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। |