প্রবল অস্বস্তি থেকে রেহাই পেতে তামাম দক্ষিণবঙ্গ যখন বৃষ্টির অপেক্ষায় হা-পিত্যেশ করছে, তখন শোনা গেল আরও দুঃসংবাদ। বর্ষণ তো দূর, আজ সোমবার থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা ফের চড়চড়িয়ে বাড়বে বলে জানাল আলিপুর আবহাওয়া অফিস। এমনকী বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল আবার তাপপ্রবাহের কবলে পড়তে পারে বলেও তাদের হুঁশিয়ারি।
একেই এখনও প্রাক-বর্ষার বৃষ্টির দেখা নেই। রবিবার দিল্লির মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, গত ছ’দিন যাবৎ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যেখানে স্থির হয়ে ছিল, এখনও সেখানেই দাঁড়িয়ে। যদিও আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহে কিঞ্চিৎ ‘পরিবর্তনের’ সুবাদে আবহবিদেরা কিছুটা আশার আলো দেখছেন। তাঁদের একাংশের পূর্বাভাস, দুই সমুদ্রে বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় কাল মঙ্গলবার বর্ষা কেরলে ঢুকে পড়তে পারে। এবং এক বার ‘পথে এলে’ বর্ষার অগ্রগতি অনেকটাই অবাধ হবে বলে ওঁদের আশা।
কিন্তু কাল কেরলে যদিও বা ঢোকে, দক্ষিণবঙ্গে পৌঁছাতে বর্ষার তো আরও অন্তত সাত দিন! যার মানে, সব কিছু ঠিকঠাক চললেও আগামী দশ দিনের মধ্যে বৃষ্টির দেখা মেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ দিকে মৌসুমি বায়ুর বিলম্বিত গতির ফলে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া দুঃসহ হয়ে উঠেছে। আশু পরিত্রাণের ইঙ্গিত তো নেই-ই, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আভাস মিলছে।
আবহবিদেরা বলছেন, মৌসুমি বায়ু থমকে যাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। |
ভোগান্তির নেপথ্যে |
• ঘূর্ণাবর্তের জোর নেই। তাই মেঘ থাকলেও বজ্রগর্ভ হতে পারছে না।
• মৌসুমি বায়ু আটকে থাকায় বায়ুপ্রবাহ অস্থির। তাই প্রাক বর্ষার বৃষ্টি নেই।
• ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার গরম হাওয়া ঢুকছে। ফলে ফের তাপপ্রবাহের আশঙ্কা।
• শুকনো বাতাস মেঘ ঠেলছে উত্তরে। বৃষ্টির আশা আরও কমছে দক্ষিণে। |
|
ফলে পরিমণ্ডলে কমতে শুরু করেছে জলীয় বাষ্প। এতটাই যে, মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড হয়ে ঢোকা শুষ্ক গরম বাতাস আবার চেপে বসতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে। অর্থাৎ ফের চোখ রাঙাচ্ছে তাপপ্রবাহ।
বস্তুত তার সূচনাও হয়ে গিয়েছে। গত ক’দিন যথেষ্ট মেঘ থাকায় তাপমাত্রা তেমন বাড়তে পারেনি বটে, কিন্তু জলীয় বাষ্প পিছু হটায় এ দিনই বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার গরম হাওয়াও ঢুকতে শুরু করেছে বাঁকুড়া-বীরভূম-পুরুলিয়ায়। তিন জেলাতেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ দিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস যায়, যা এই সময়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ৪ ডিগ্রি বেশি! আর এক ডিগ্রি বাড়লেই ওই সব এলাকা তাপপ্রবাহের কবলে পড়বে।
কলকাতার অবস্থাও তথৈবচ। গরম-আর্দ্রতার যুগলবন্দিতে মহানগর ঘেমে জেরবার। শুক্রবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.১ ডিগ্রি। শনিবার তা বেড়ে হয়েছিল ৩৭.৩ ডিগ্রি। রবিবার ৩৭.১ ডিগ্রি। তাপমাত্রা না-বাড়লেও কলকাতার উপর দিয়ে মেঘ বাংলাদেশের দিকে উড়ে যাওয়ায় আর্দ্রতার দাপট ছিল মারমুখী। সব মিলিয়ে এ দিন অস্বস্তি-সূচক উঠে যায় ৬৬ ডিগ্রিতে, যা এ সময়ের স্বাভাবিকের ১১ ডিগ্রি বেশি। আলিপুরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের হুঁশিয়ারি, “পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাতে সোমবার কলকাতার অস্বস্তি-সূচক আরও চড়তে পারে। ওই জেলাগুলোর তাপপ্রবাহের প্রভাব সরাসরি কলকাতায় পড়বে।”
কবে নাগাদ দুর্ভোগের অবসান হতে পারে? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর দিয়ে বর্ষা তার নির্দিষ্ট ছন্দে এগোতে শুরু করলেই বায়ুপ্রবাহে পরিবর্তন দেখা যাবে, যা ত্বরান্বিত করবে বর্ষার অগ্রগতিকে। এর প্রাথমিক লক্ষণ এ দিন চোখে পড়েছে বলে তাঁদের একাংশের দাবি। “কেরলের জায়গায় জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। পরিমাণ কম হলেও এটা ভাল ইঙ্গিত। বর্ষা কেরলের দিকে এগোনোর পরিস্থিতি তৈরি হলেই এমনটা হয়।” মন্তব্য মৌসম ভবনের এক আবহবিদের।
মৌসম ভবনের বক্তব্য, এই ‘অনুকূল’ পরিস্থিতি বজায় থাকলে আজই বর্ষার আরব সাগরে ঢুকে পড়ার কথা। সে ক্ষেত্রে কাল, মঙ্গলবারের মধ্যে তা কেরলে পৌঁছে যেতে পারে। আর আরব সাগরের পথে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হলে মায়ানমারে আটকে থাকা তার উত্তর প্রান্তও সক্রিয় হয়ে উঠবে। তখন বর্ষার মায়ানমার হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকে পড়তেও দেরি হবে না। তবে বর্ষার মতিগতি আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় আন্দামান সাগর ও আরব সাগরে বায়ুপ্রবাহের গতি-প্রকৃতির উপরেই নির্ভর করছে বলে আবহবিদদের মত। |