এক জন ভোটপ্রার্থী। সরাসরি লড়াইয়ে। অন্য জন ভোটের ময়দানে না থাকলেও দলের প্রধান সেনাপতি। এক জনের কাছে লড়াই ‘অস্তিত্ব রক্ষা’র। অন্য জনের লড়াই পূর্ব মেদিনীপুরের দুই পুরসভা পাঁশকুড়া ও হলদিয়াকে ‘বিরোধী শূন্য’ করার।
তমালিকা পণ্ডাশেঠ ও শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার নন্দীগ্রামের জেলায় দুই পুরসভায় ভোটগ্রহণের দিনটা দু’জনে কাটালেনও দু’রকম ভাবে। প্রথম জন এলাকায় ঘুরলেন। কথা বললেন ভোটারদের সঙ্গে। সময় কাটালেন পার্টি অফিসে। অন্য জন যে দুই পুর এলাকায় ভোট, সেখানে সারাদিন পা-ই রাখলেন না। রইলেন তমলুকে। বিকেলে অবশ্য হলদিয়ায় এসে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হন শুভেন্দু। |
নন্দীগ্রামের হাওয়ায় প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ, ক্রমে জেলার সবকটি লোকসভা আসন এবং বিধানসভায় ‘পরিবর্তন’ হয়েছে। তবে বাম আমলে সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের ‘খাস-এলাকা’ হলদিয়ায় ‘পরিবর্তন’ এখনও অধরা। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে লক্ষ্মণবাবু আপাতত জেলে। এই পুর-নির্বাচনে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের ‘চ্যালেঞ্জ’ হলদিয়াকে বিরোধীশূন্য করা। জেলা থেকে তৃণমূল সাংসদ তথা দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী প্রচার চলাকালীন সে কথা ঘোষণাও করেছেন বারবার। ‘চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণ করেছেন হলদিয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান। তবে এ দিন সেই জনিত বিশেষ উদ্বেগ তমালিকাদেবীর চেহারায় ছিল না। সকাল সকালই দুই ছেলে সায়ন্তন ও দীপ্তন এবং বউমা সুস্মিতাকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যান তিনি। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট বুথে ভোট দেন। তারপর চলে আসেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এখান থেকেই এ বারের সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মণ-ঘরণী। নিজের এলাকার কয়েকটি বুথে খানিকটা সময় ঘুরে তমালিকাদেবী সোজা চলে আসেন সুকান্তনগর কলোনিতে সিপিএমের লোকাল কমিটির কার্যালয়ে। দিনের বেশিরভাগ সময়টা এখানেই কাটিয়েছেন তমালিকাদেবী। চোখ ছিল টিভিতে। আর ঘন ঘন মোবাইলে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জেনেছেন কোথায় কী অবস্থা। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোলমালের খবরাখবরও ফোনেই নেন।
এই লড়াই কি বাড়তি কিছু? স্বাভাবিক স্বরেই জবাব এল, “লড়াই মাত্রেই কঠিন। তবে এই লড়াই রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের কাছেই বেশি কঠিন।” লক্ষ্মণবাবুর অভাব বোধ করছেন? তমালিকাদেবীর বক্তব্য, “একটা শূন্যতা তো আছেই। তবে আমাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। জেলা ও রাজ্যস্তরের নেতারা এসেছেন। সকলের সঙ্গে কথা বলে, সকলের পরামর্শ নিয়েই সব সিদ্ধান্ত হয়েছে।” |
লক্ষ্মণবাবুর জেলে থাকাটা অবশ্য কোনও ‘ফ্যাক্টর’-ই মনে করছেন না তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। এ দিন বিকেলে হলদিয়ায় এক সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, “এটা রাজনৈতিক লড়াই। কারও জেলে থাকা কোনও প্রভাব ফেলবে না। তবে লক্ষ্মণ শেঠের আমলে হলদিয়ায় ভোট-ই হত না। আমরা মানুষকে সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে ফেরেছি। এ বার প্রত্যেকে তাঁর নিজের ভোটটা দিতে পেরেছেন।”
এ দিন সকাল থেকে শুভেন্দু অবশ্য পাঁশকুড়া বা হলদিয়া পুর এলাকায় যাননি। সকাল ১০টা নাগাদ তিনি আসেন তমলুকে নিজের সাংসদ অফিসে। সেখান থেকেই দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে ভোটের খবরাখবর নেন। দুপুরের পর রওনা হয়ে যান হলদিয়ার উদ্দেশে। বিকেলে ৫টা নাগাদ হলদিয়ার দুর্গাচকে সাংসদ অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “সিপিএমের সহযোগী হিসাবে কংগ্রেস ও বিজেপি মনোনয়ন জমার পর থেকেই তৃণমূলের নামে কুৎসা রটাচ্ছিল। ওই সব অভিযোগ সত্যি হলে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হত না।” জয় নিয়ে আশাবাদী শুভেন্দু বলেন, “এই নির্বাচনে আমাদের সমর্থনের ব্যাপ্তি বাড়বে, পরিবর্তনের বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে।” তমালিকাদেবী অবশ্য মনে করিয়েছেন, ‘‘তৃণমূল দাঁড়ালেই জিতবে, এমন কিন্তু নয়। মানুষ এ বার জেদের বশে ভোট দিচ্ছেন।”
জনতার মন বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে আরও একটা দিনমঙ্গলবার পর্যন্ত।
|